হাসিনার জমিন আরো শক্ত, কপালে ভাঁজ খালেদার
প্রকাশিত হয়েছে : ৮:৩৩:৩৬,অপরাহ্ন ১৩ মে ২০১৫
নিউজ ডেস্ক :: আওয়ামী লীগের কাণ্ডারি শেখ হাসিনা এই নিয়ে রাষ্ট্র ক্ষমতায় এলেন তিন বার। প্রথম এসেছিলেন ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে। দ্বিতীয়বার ২০০৯ সালে। তৃতীয়বার ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির ‘একতরফা’ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে।
প্রথম দফায় ক্ষমতায় আসার পর তার নেতৃত্বে গঙ্গার পানি বণ্টন চুক্তি সাক্ষর হয়। গঙ্গার পানি বণ্টন ইস্যু ওই সময় ভারতের সঙ্গে অন্যতম বিবাদমান ইস্যু ছিল।
দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় এসে ৪ দশকের জিইয়ে রাখা সীমান্ত ও তিস্তার পানি বণ্টন সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ নেন। ভারতের কংগ্রেস সরকার তখন ওই সমস্যা সমাধানে আন্তরিক হলেও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি গো ধরায় তা আর আলোর মুখ দেখেনি। এই অবস্থায়ই আওয়ামী লীগ তার দ্বিতীয় মেয়াদ শেষ করে। স্থল সীমান্ত ও তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি ওই সময়ে না হওয়ায় বিএনপি তা সরকারের ‘ব্যর্থতা’ বলে প্রচার করতে থাকে।
কংগ্রেস সরকারের সঙ্গে সীমান্ত ও তিস্তা পানি বণ্টন চুক্তি সাক্ষরিত না হলেও ড. মনমোহন সিংয়ের সরকার কিন্তু শেখ হাসিনা অর্থাৎ অওয়ামী লীগের পক্ষেই অবস্থান নেয়। তার প্রমাণ পাওয়া যায় ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে।
হাইকোর্ট তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করায় মেয়াদ শেষে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনেই। দলীয় সরকারের অধীনে ভোট নিরপেক্ষ হবে না অভিযোগ এনে এক পর্যায়ে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ায় বিএনপি। বিএনপি সরে যাওয়ায় নির্বাচন হয়ে ওঠে একতরফা। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ‘একতরফা’ নির্বাচন না করতে পরামর্শ দিলেও শেখ হাসিনা অনেকটা ঝুঁকি নিয়েই নির্বাচন সম্পন্ন করেন। মনমোহন সরকারের ‘অল আউট সাপোর্টে’ শেষ পর্যন্ত ওই নির্বাচন অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনাকে তেমন বেগ পেতে হয়নি।
শেখ হাসিনার সরকারের প্রতি তৎকালীন কংগ্রেস সরকারের এই ‘অল আউট সার্পোট’ বিপাকে ফেলে দেয় বিএনপিকে। ওই সময় কোনো কূল কিনারা করতে না পেরে তারা তাকিয়ে থাকে ভারতের নির্বাচনের প্রতি। টানা দুই বার ক্ষমতায় থাকায় দেশটিতে কংগ্রেসের প্রতি সাধারণ মানুষের এক ধরনের ক্ষোভ তৈরি হয়েছিল। সংবাদ মাধ্যমে আগে থেকে আভাস দেয়া হয়েছিল নরেন্দ্র মোদির জয়ের ব্যাপারে।
নির্বাচনের ফলও হলো তাই। খড়-কুটোর মতো ভেসে গেলো কংগ্রেস। দিল্লির মসনদে আসে বিজেপি। প্রধানমন্ত্রী হন নরেন্দ্র মোদি। বিএনপির প্রত্যাশা ছিল বিজেপি ক্ষমতায় এলে আওয়ামী লীগের প্রতি সমর্থন কংগ্রেসের মতো আর থাকবে না। নরেন্দ্র মোদির সরকার সব দলের অংশ গ্রহণের মধ্যদিয়ে একটি অন্তবর্তী নির্বাচন অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগ সরকারকে চাপ দেবে।
কিন্তু বিএনপির সেই আশায় গুঁড়েবালি। তারা যা ভেবেছিল পরিস্থিতি তার উল্টো। অভিজ্ঞ নরেন্দ্র মোদী হুট করে ভারতের জাতীয় স্বার্থের কৌশল বদলাননি। তারা এখন পর্যন্ত ঢাকার বর্তমান সরকারকে বিএনপির সঙ্গে সংলাপ ও নির্বাচন অনুষ্ঠানে ‘তেমন দৃশ্যমান কোনো চাপ’ দেয়নি।
সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, মোদি সরকার বুঝতে পেরেছে ভারতের স্বার্থ বেশি সংরক্ষিত হবে আওয়ামী লীগের সঙ্গে সম্পর্ক ভালো থাকলেই। এটা বলার অপেক্ষা রাখে না, ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক এই মুহূর্তে সর্বোচ্চ পর্যায়ে রয়েছে।
দিল্লি সরকারের চলমান এই কৌশল সত্যি সত্যি বিপাকে ফেলে দিয়েছে বিএনপিকে। দলটির শীর্ষ নেতৃত্ব ধরেই নিয়েছেন অন্যান্য দেশ চাইলেও ভারতের সমর্থন ছাড়া ক্ষমতায় যাওয়া সুদূর পরাহত। আর এই বাস্তবতা থেকেই অন্যান্য দেশের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদারের পাশাপাশি দিল্লির সঙ্গেও সম্পর্ক ঝালাইয়ের কৌশল নিয়েছে বিএনপি। জানা গেছে, দলের একজন গুরুত্বপূর্ণ নেতাকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে মোদি সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের।
বিএনপির সেই চেষ্টা কতটুকু সফল হবে তা নিয়ে ঘোরতর সন্দেহ রয়েছে। কারণ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পায়ের তলার জমিন এখন যে কোনো সময়ের চেয়ে শক্ত। ক্ষমতার তৃতীয় মেয়াদে ভারতের সঙ্গে অত্যন্ত স্পর্শকাতর সীমান্ত সমস্যার একটা সুরাহা করতে যাচ্ছেন তিনি। এটা সম্ভব হয়েছে ঢাকা-দিল্লির ‘উষ্ণ সম্পর্কের’ কারণেই। যার নেপথ্যে রয়েছেন শেখ হাসিনা ও নরেন্দ্র মোদি। আগামী দিনে খুব দ্রুত এই সম্পর্কের অবনতি ঘটবে বলে মনে করেন না বিশ্লেষকরা। এজন্য নির্বাচন ও সংলাপের জন্য বিএনপিকে আরো অপেক্ষা করতে হবে।
আওয়ামী লীগের কয়েকজন নীতি নির্ধারক জানান, বিএনপি ভেবেছিল বিজেপি সরকারের সঙ্গে অওয়ামী লীগ সরকারের ঝামেলা তৈরি হবে। মোদি সরকার আওয়ামী লীগ সরকারকে দ্রুত পরবর্তী নির্বাচন অনুষ্ঠানে তাগিদ দেবেন। নির্বাচন হবে আর তারাও ক্ষমতায় বসে যাবে। কিন্তু তাদের সেই আশা পূরণ হয়নি। নির্দিষ্ট সময়ের পরেই নির্বাচন হবে।
যোগাযোগ করা হলে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফর উল্লাহ বলেন, ‘সীমান্ত চুক্তি সাক্ষর হতে যাওয়ার বিষয়টি অবশ্যই আমাদের একটা বড় অর্জন। ৪০ বছর পর দু’দেশের মধ্যে কিছু ছিটমহল নিয়ে চলে আসা বিরোধ সমাধান হতে যাচ্ছে। সীমান্তে কিছু অপদখলীয় ভূমিও চিহ্নিত করা হবে। বিষয়টি আমাদের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’
বিজেপি-আওয়ামী লীগ সরকারের ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের কারণে সংলাপ ও নির্বাচনের জন্য বিএনপিকে আরো অপেক্ষা করতে হবে কিনা এমন এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ নির্বাচন একটা দেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার। এখানে বিদেশি কোনো শক্তির জড়িত থাকা উচিত না। বিএনপি যদি মনে করে থাকে যে, প্রতিবেশি ভারত বা চীনকে ব্যবহার করে নির্বাচনী বৈতরণী পার হয়ে ক্ষমতায় আসবে তা হলে এটা তাদের ভুল চিন্তা। ভূরাজনৈতিকভাবে বাংলোদেশ একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থানে রয়েছে। আমরা প্রতিবেশি দেশের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তুলতে চাই। আমরা ভারতের সব দলের সঙ্গেই সুসম্পর্ক রাখতে চাই। সেটা হোক কংগ্রেস হোক বিজেপি।
এ সম্পর্কে জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্কের অধ্যাপক তারেক শামসুর রেহমান বাংলামেইলকে বলেন, ‘কেউ কেউ বলছেন বিজেপির সঙ্গে অওয়ামী লীগের সম্পর্ক গভীর হওয়ার কারণে বিএনপির ক্ষমতায় আসার পথ আরো কঠিন হয়ে গেলো। কিন্তু হাইপথেটিক্যালি এটা ঠিক না। এটা যারা বলেন তারা মুর্খ। জাতীয় স্বার্থের প্রশ্নে কংগ্রেস এবং বিজেপি এক ও অভিন্ন। কীভাবে আওয়ামী লীগ সরকারের কাছ থেকে বেশি সুযোগ সুবিধা আদায় করা যায় সেটাই করছে ভারত। তবে বিএনপি নেতারা এটাও উপলব্ধি করতে পারছেন যে, ভারতের সব দলের সঙ্গেই তাদের সম্পর্কের উন্নয়ন ঘটানো দরকার। এখানে আওয়ামী লীগের লাভবান হওয়ার কিছু নেই, বিএনপির হারানোরও কিছু নেই।’