নভেম্বরের আগে আন্দোলন নয়, নেতাদের জামিনই অগ্রাধিকার বিএনপির
প্রকাশিত হয়েছে : ৪:০৪:০৪,অপরাহ্ন ২৩ জুন ২০১৫
নিউজ ডেস্ক::
আগামী নভেম্বরের আগে সরকার বিরোধী কোন ধরনের আন্দোলনে যাওয়ার চিন্তা বিএনপির নেই। দলটি মনে করছে, আন্দোলনে গেলে বর্তমান ‘অগোছালো’ বিএনপি আরও বিপর্যয়ের মুখে পড়বে। তার চেয়ে আন্দোলন আপাতত বাদ দিয়ে রাজনীতিতে উত্তেজনা কমিয়ে আনতে পারলে বিএনপি লাভবান হবে বলে নীতিনির্ধারকরা মনে করছেন। তাদের মতে, উত্তেজনা কমিয়ে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ তৈরি করতে পারলে নেতাকর্মীদের জামিন লাভ সহজ হবে। এমন উদ্দেশ্য বিবেচনায় নিয়েই দলটি নতুন এই কৌশল বেছে নিয়েছে।
বিএনপি মনে করছে, রাজনীতিতে সংঘাত বা অস্থিরতা অব্যাহত থাকলে নেতাকর্মীদের জামিন পাওয়া কঠিন হবে। কারণ সরকার ওই পরিস্থিতিতে হার্ডলাইনে যেতে পারে। কিন্তু প্রকাশ্য রাজনীতিতে নেতাকর্মীরা অংশ নিতে না পারলে সংগঠন গোছানো কঠিন কাজতো বটেই; দলটির দলীয় ফোরামের বৈঠক পর্যন্ত ডাকা যাচ্ছে না। সাংগঠনিক কাজকর্ম গুছিয়ে সুযোগ পেলে দলটি আগামী অক্টোবর-নভেম্বর নাগাদ জাতীয় কাউন্সিলও করতে চায়। আর এরপরেই, অর্থাৎ শুকনো মৌসুমে দলটি সরকার বিরোধী আন্দোলনে যাওয়ার চিন্তা করছে।
আলোচনাকালে নীতিনির্ধারক বলে পরিচিত বিএনপির একাধিক নেতা এ প্রতিবেদককে জানিয়েছেন, শুধুমাত্র কোরাম সংকটের কারণেই বিএনপির বৈঠক ডাকা যাচ্ছে না। তাছাড়া বৈঠক ডাকা বা জোর রাজনৈতিক তৎপরতা শুরু হলে পুলিশ কাউকে গ্রেফতার করবে কি না সে ব্যাপারেও নিশ্চিত হতে পারছে না দলটি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এ মুহূর্তে বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠক ডাকা হলে ১৯ সদস্যের কমিটি মধ্যে খালেদা জিয়াসহ মাত্র ৭ জন নেতা উপস্থিত থাকতে পারবেন। এরা হলেন, ব্যারস্টিার মওদুদ আহমদ, লে. জে. (অব.) মাহবুবুর রহমান, ড. আবদুল মঈন খান, ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার, আ স ম হান্নান শাহ ও নজরুল ইসলাম খান। কমিটির তিন নেতা ড. খন্দকার মোশারররফ হোসেন, সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও গয়েশ্বর চন্দ্র রায় কারাগারে আছেন। বিভিন্ন মামলায় জামিন না হওয়ায় আত্মগোপনে আছেন এম. তরিকুল ইসলাম, ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া ও মির্জা আব্বাস। গত ৭ জুন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে খালেদা জিয়ার বৈঠকে বিএনপির প্রতিনিধি দলের সদস্য হিসেবে তরিকুল অংশ নিয়েছিলেন। কিন্তু ওইদিনের পর থেকে তিনি আবারও আত্মগোপনে চলে গেছেন। এদিকে পদাধিকার বলে দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর স্থায়ী কমিটির বৈঠকে উপস্থিত থাকতে পারেন; কিন্তু তিনিও এখন পর্যন্ত কারাগারে। এদের বাইরে ড. আর এ গনি, এম. শামসুল ইসলাম, এম কে আনোয়ার ও সারোয়ারী রহমান অসুস্থতার কারণে অনেকদিন ধরেই নিষ্ক্রিয়। অপর দুই সদস্যের মধ্যে খোন্দকার দেলোয়ার হোসেন মারা গেছেন এবং তারেক রহমান ওয়ান-ইলেভেনের পর থেকে লন্ডনে অবস্থান করছেন।
ঢাকা মহানগরী বিএনপির আহ্বায়ক মির্জা আব্বাস ও বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুল আউয়াল মিন্টুসহ কেন্দ্রীয় কয়েক ডজন নেতা কারাগারের বাইরে থেকে জামিন লাভের চেষ্টা করছেন। কিন্তু তারা জামিনও পাচ্ছেন না। আবার অংশ নিতে পারছেন না রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডেও।
জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জে. (অব.) মাহবুবুর রহমান বলেন, বিএনপির এখন এক নম্বর অগ্রাধিকার হচ্ছে সংগঠন গোছানো। কিন্তু এই সংগঠন যারা গোছাবেন সেই সিনিয়র নেতাদের অনেকেই কারাগারে। আবার যারা বাইরে আছেন গ্রেফতারের ভয়ে তারাও ‘মুভ’ করতে পারছেন না। ফলে নেতাকর্মীদের জামিন করানোর পাশাপাশি সবকিছুকে স্বাভাবিক পথে নিয়ে আসা এখন জরুরি। আর এজন্য শান্তিপূর্ণ পথেই বিএনপি থাকতে চায় বলে জানান তিনি। তাছাড়া বর্ষা, রমজান ও ঈদসহ নানা কারণে আন্দোলনের মৌসুমও এটি নয়; যোগ করেন সাবেক এই সেনা প্রধান।
কেন্দ্রীয় ভাইস-চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমানের মতে, একটি রাজনৈতিক দল সারা বছরই সরকার বিরোধী আন্দোলন করে না। সাংগঠনিক কার্যক্রমের পাশাপাশি নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতিতে অংশ নেয়াও রাজনৈতিক দলের কাজ। তিনি বলেন, আমরা আপাতত দল গোছাবো। পরে দেখি সরকার আমাদের কতটুকু স্পেস দেয়। যদি সরকার গণতান্ত্রিক অধিকার বা আন্দোলন করতে না দেয় সে পরিস্থিতিতে বিএনপি পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ করবে। অতএব আপাতত আমরা শান্তিপূর্ণ পথেই থাকবো।
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মণ্ডলীর সদস্য আবদুল আউয়াল মিন্টু বলেন, দলের সাংগঠনিক কার্যক্রম চাঙ্গা করতে গেলে নেতাকর্মীদের মনোবলও চাঙ্গা থাকতে হয়। কিন্তু বিএনপির হাজার হাজার নেতাকর্মী কারাগারে। সরকার আমাদের কোনও স্পেস দিচ্ছে না। তাই আমরা আপাতত দলের মধ্যে স্বস্তি ফিরিয়ে আনতে চাই। তার মতে, এজন্যই নেতাকর্মীদের জামিনের জন্য চেষ্টা চলছে। তিনি বলেন, বিএনপিতো কারও পায়ে পড়ে ঝগড়া করছে না। এখন দেখি সরকার কী ভূমিকা নেয়। আশাকরি তারা দেশে সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক চর্চা অব্যাহত রাখার মতো পরিস্থিতি বজায় রাখবে।
গত সাড়ে ৫ মাসেরও বেশি সময় ধরে বিএনপির দলীয় ফোরামের কোনও পর্যায়ের কোনও বৈঠক অনুষ্ঠিত হচ্ছে না। পঞ্চম দফায় ৫ জানুয়ারির সরকার বিরোধী আন্দোলন শুরুর পর সাড়ে তিনমাস বৈঠক হয়নি। পরে তিন সিটি করপোরেশন নির্বাচন শেষ হয়েছে দেড় মাস আগে। কিন্তু আজ পর্যন্ত মূলত নেতাকর্মীর অভাবে খালেদা জিয়া দলীয় কোনও পর্যায়ের কোনও বৈঠক ডাকতে পারেননি। এ নিয়ে দলের বেশ কয়েকজন সিনিয়র নেতা ক্ষুব্ধ বলে জানা গেছে।
সবচেয়ে বড় কথা সাংগঠনিক কাজকর্ম করে যারা দলকে এগিয়ে নিয়ে যাবেন তারাই হয় কারাগারে, নয়তো আত্নগোপনে থেকে জামিনের চেষ্টা চালাচ্ছেন। ফলে জামিন লাভে কোনও ঝামেলা সৃষ্টি হয় এমন কাজ বা তৎপরতা থেকে আপাতত বিরত থাকতে চাইছে বিএনপি। রাজনীতির মাঠে কোনও গরম বক্তব্য দেওয়া থেকেও দলটি বিরত আছে।
অবশ্য নেতার অভাব ছাড়া বৈঠক না ডাকার আরও কয়েকটি কারণ আছে বলে জানা গেছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএনপির একাধিক নেতা জানান, বৈঠক ডাকা হলে অনেকেই গরম কথা বলে সরকারের সমালোচনায় মুখর হবে। আর এসব গণমাধ্যমে প্রকাশ হলে তার সূত্র ধরে পরিস্থিতি আবারও উত্তপ্ত হয়ে উঠতে পারে। তাছাড়া সরকার বিরোধী আন্দোলন সংক্রান্ত কোন বক্তব্য বৈঠকে উত্থাপিত হলে এ নিয়ে নেতারা পরস্পরকে দোষারোপ করতে পারেন। যার সূত্র ধরে দলের মধ্যেই অস্থিরতা সৃষ্টি হতে পারে যা এই মুহূর্তে খালেদা জিয়া চাইছেন না।