তিন বছরেও সন্ধান মেলেনি দুই ইবি শিক্ষার্থীর
প্রকাশিত হয়েছে : ১২:৫৬:৩৬,অপরাহ্ন ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৫
নিউজ ডেস্ক :: ২০১২ সালের ৪ ফেব্রুয়ারী নিখোঁজ হন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই মেধাবী ছাত্র ওয়ালী উল্লাহ ও আল-মুকাদ্দাস। ব্যক্তিগত কাজ শেষে ঢাকা থেকে হানিফ পরিবহনের একটি বাসে করে ক্যাম্পাসে ফেরার পথে রাত আনুমানিক সাড়ে ১২টার দিকে সভারের নবীননগর এলাকায় র্যাব-৪ পরিচয়ে ১০/১৫ জন লোক গাড়ি থামায়। ওই গাড়ির সি-১ ও সি-২ সিটে বসা দুই ছাত্রকে নামিয়ে নিয়ে যায় তাঁরা। সেই থেকে আজও খোঁজ মেলেনি এই দুই মেধাবী ছাত্রের। তিন বছরের প্রতিক্ষায় বাকরুদ্ধ হয়ে গেছে মা-বাবা ও স্বজনেরা।
নিখোঁজ ওয়ালীউল্লাহ ঝালকাঠি জেলার কাঁঠালিয়া উপজেলার সোলজালিয়া ইউনিয়নের পশ্চিম সোলজালিয়া গ্রামের মাওলানা ফজলুর রহমানের ছেলে। সে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের দাওয়াহ এন্ড ইসলামিক স্টাডিজের অনার্সে প্রথম শ্রেণীতে প্রথম স্থান অধিকারী। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে মাস্টার্সে অধ্যায়নরত ছিলেন এই মেধাবী ছাত্র। আল-মুকাদ্দাস পিরোজপুর জেলার সদর থানার ২ নং কদমতলি ই্উনিয়নের খানাকুনিয়ারী গ্রামের মাওলানা আব্দুল হালিমের সন্তান। সে বিশ্ববিদ্যালয়ের আল-ফিকহ বিভাগের এল এল বি অনার্স ৪র্থ বর্ষের মেধাবী ছাত্র। পড়াশুনার পাশাপাশি পুরো ক্যাম্পাস মাতিয়ে রাখা ছিলো তাঁর নিত্যদিনের অভ্যাস। ছিলেন বিএনসিসি ও ডিবেটিং সোসাইটির গুরুত্বপূর্ণ একজন সদস্য। সুস্থধারার সংস্কৃতির চর্চায় মুকাদ্দাস ছিলো ক্যাম্পাসের প্রিয় মুখ। গান, অভিনয় কিংবা খেলাধুলা কোন ক্ষেত্রেই পিছিয়ে ছিলেন না এই মেধাবী ছাত্র।
র্যাব পরিচয়ে আটকের পর নিখোঁজ হওয়ার পর থেকেই তাদের উদ্ধারের জন্য ক্যাম্পাসে শুরু হয় আন্দোলন। হাজার হাজার শিক্ষক-শিক্ষার্থী দীর্ঘ ছয় মাস ধরে আন্দোলন করে। মাসের পর পর মাস ক্লাস পরীক্ষা বর্জন করে শিক্ষার্থীরা। দফায় দফায় সাংবাদ সম্মেলন, মিছিল, মিটিং, মানববন্ধন, ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন, একাডেমিক ভবনে তালা এমনকি মহাসড়ক অবরোধসহ নানা কর্মসুচি পালন করেও তাদের কোন সন্ধান পাওয়া যায়নি। বিশ্ববদ্যিালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে নানা পদক্ষেপ গ্রহন করা হলেও তাদের উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। আল-মুকাদ্দাস ও ওয়ালীউল্লাহর পিতা-মাতা ঢাকা জাতীয় প্রেসক্লাবে সাংবাদিক সম্মেলন করে। তাদের উদ্ধারের জন্য সরকারের নিকট আবেদন করে। কিন্তু তাদের উদ্ধারের ব্যাপারে সরকার পক্ষ থেকে কোন সহযোগীতা পাওয়া যায়নি বলে অভিযোগ করেছে পরিবারের সদস্যরা।
নিখোঁজ ওয়ালী উল্লাহর বাবা মাওলানা ফজলুর রহমান বলেন, ‘আমার কলিজার টুকরা কোথায় এবং কিভাবে রেখেছেন তা আমরা জানি না। সন্তানের প্রতিক্ষায় থাকতে থাকতে দৃষ্টি শক্তি হারিয়ে ফেলার উপক্রম হয়েছে। কাঁদলে আর চোখের পানি বের হয় না। ধৈর্য ধারণ করে আল্লাহর কাছে চাওয়া ছাড়া আমাদের আর কি বা করার আছে? মহান আল্লাহ যেন আমাদের সন্তান কে আমাদের বুকে ফিরিয়ে দেন।’
আল মোকাদ্দাসের মা আয়েশা সিদ্দিকা বলেন, ‘প্রিয় সন্তানের প্রতিক্ষায় পথ চেয়ে গত তিন বছর কেটেছে। দু‘চোখে ঘুম আসে না। মহান রবের কাছে আকুতি আল্লাহ যেন আমার মানিককে আমার বুকে আবার ফিরিয়ে দেন’।