‘চট্টগ্রাম বাঁচলে বাঁচবে বাংলাদেশ’
প্রকাশিত হয়েছে : ১১:৪৯:২০,অপরাহ্ন ১০ জুন ২০১৫
নিউজ ডেস্ক::
বুধবার চট্টগ্রাম ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে মদুনাঘাট পানি শোধনাগার নির্মাণ কাজের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বলেন, পানি নিয়ে কোন রাজনীতি নেই, জনগণের পানির চাহিদা মেটাতে আগের সরকারগুলো বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহণ করেছিল। আমরা হয়তো তাদের চেয়ে বেশি প্রকল্প গ্রহণ করেছি। আগামীতে যারা ক্ষমতায় আসবে তারাও পানি নিয়ে চিন্তা করতে হবে। কেন না পানি সকল দলের-মতের মানুষের প্রয়োজন।
পানি সাশ্রয়ে আমাদের সকলকে ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে আসতে হবে। চট্টগ্রাম বাঁচলে বাংলাদেশ বাঁচবে উল্লেখ করে সৈয়দ আশরাফ বলেন, চট্টগ্রামের সঙ্গে আমার প্রাণের টান রয়েছে। তাই বারবার চট্টগ্রামে ছুটে আসি। চট্টগ্রাম হচ্ছে বাংলাদেশের প্রাণ। তাই চট্টগ্রামকে বাঁচিয়ে রাখতে সরকার খুবই আন্তরিক। চট্টগ্রামে পানির ঘাটতি মেটাতে কোন ছাড় নেই। তবে সকলকে সচেতন হতে হবে। সচেতন না হলে সরকারের একার পক্ষে পানির ঘাটতি মেটানো সম্ভব হবে না।
পানি শোধন তেল শোধনের চেয়ে ব্যয়বহুল উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, আমরা পানির উৎসগুলো ধ্বংস করে দিচ্ছি। নদী-নালা, খাল-বিল ও পুকুর ভরাট করে স্থাপনা নির্মাণ করা হচ্ছে। আমাদেরকে পানির গুরুত্ব উপলব্ধি করতে হবে। যদি সুপেয় পানির সব উৎস ধ্বংস হয়ে যায় তবে আমাদের কী হবে। শুধু ব্যয়বহুল প্রকল্প গ্রহণ করে লাভ নেই। তাই পানির উৎসগুলো পুনঃরূদ্ধার করতে হবে।
সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বলেন, পানির চাহিদা মেটাতে হলে প্রয়োজন পানির অপচয়রোধ করা। কারণ প্রতিদিন যতটুকু পানি আমরা ব্যবহার করি তারে চেয়ে বেশি অপচয় করি। সরকার কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহণ করছে। কিন্তু মানুষ যদি সচেতন না হয় তবে তা কোন কাজে আসবে না।জনগণের পানির চাহিদা মেটাতে সরকার আন্তরিক উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, আমরা যখন ২০০৯ সালে সরকার গঠন করি তখন পানি নিয়ে বিপর্যয় দেখা দিয়েছিল। দেশরত্ন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ও পরামর্শে সেই বিপর্যয় আমরা মোকাবেলা করেছি। তবুও কিছু ঘাটতি আছে। কারণ দিন দিন জনসংখ্যা বাড়ছে। জনসংখ্যার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে পানির চাহিদাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাই ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে।
অনুষ্ঠানে প্রধান বক্তা গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন বলেন, ভূগর্ভস্থ পানির স্তর দিন দিন কমে যাচ্ছে। এতে করে পানির ঘাটতিও বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাই এখন দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ না করলে পানি সমস্যায় ভূগতে হবে।
চট্টগ্রামে তিনটি নতুন শহর গড়ে তোলার ঘোষণা দিয়ে গণপূর্তমন্ত্রী বলেন, চট্টগ্রামের সমুদ্র, নদী ও পাহাড়কে কেন্দ্র করে নতুন তিনটি শহর গড়ে তোলা হবে। এতে পানির চাহিদা আরও বৃদ্ধি পাবে। বর্তমানে চট্টগ্রাম নগরীর জনসংখ্যা ৬০ লাখ। আগামী ১০ বছর পর তা এক কোটি হবে। তাই বর্তমানের চিন্তা করলে হবে না। ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে নতুন নতুন প্রকল্প গ্রহণ করতে হবে।
পানির প্রাকৃতিক উৎসগুলো পুনঃরুদ্ধার করার আহ্বান জানিয়ে ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন বলেন, কর্ণফুলী ও হালদাকে রক্ষা করতে হবে। কারণ পানির চাহিদা মেটানোর জন্য ওয়াসা এ দুই নদীর ওপর নির্ভরশীল। কর্ণফুলী ও হালদা যাতে বুড়িগঙ্গায় পরিণত না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। পানির প্রাকৃতিক উৎসগুলো পুনঃরুদ্ধারে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে।নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশ প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর। এখানে রয়েছে অসংখ্য নদী, পাহাড় ও ঝর্ণা। শুধু নদীকে পানির উৎস হিসেবে চিন্তা করলে হবে না। নদী ছাড়া পানির অন্য যেসব উৎস রয়েছে সেগুলো থেকে পানি সংগ্রহে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা প্রয়োজন। পানির অপচয়রোধে জনগণকে সচেতন করার জন্য প্রকল্প গ্রহণের কথা জানিয়ে মহিউদ্দিন চৌধুরী বলেন, পানির অপচয়রোধে স্কুল-কলেজ থেকে শুরু করে শ্রমিক মজুর ও বিত্তশালীদের সচেতন করতে হবে।
তাদেরকে বোঝাতে হবে পানি ছাড়া আমাদের জীবন অচল। পানির উৎসগুলো রক্ষায় দলমতের উর্ধ্বে উঠে ঐক্যমত গড়ে তুলতে হবে। এক্ষেত্রে ওয়াসাকে সবার আগে এগিয়ে আসতে হবে।সাধারণ মানুষ যাতে সহজে ও বিনা পয়সায় পানি পান করতে পারে সেজন্য ওয়াসাকে ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানান সাবেক এ মেয়র।ভূমি প্রতিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ বলেন, দীর্ঘদিন পর মদুনাঘাট পানি শোধনাগার আলোর মুখ দেখায় চট্টগ্রামবাসী আনন্দিত। প্রকল্পটি নিয়ে অনেক রাজনীতি হয়েছে। পানি রাজনীতির বিষয় নয়, মানবতার বিষয়। শুধু বর্তমান জনসংখ্যার কথা চিন্তা করে প্রকল্প গ্রহণ করলে সুফল পাওয়া যাবে না। আগামী ২০ বছরের পরিকল্পনা দিয়ে প্রকল্প গ্রহণ করতে হবে।সিটি কর্পোরেশনের নবনির্বাচিত মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন বলেন, বিগত বিএনপি সরকার শাসনের নামে শোষণ করেছেন। যেসময় পানি প্রকল্প গ্রহণ করা প্রয়োজন ছিল সেসময় প্রকল্প গ্রহণ করেনি।
কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকার গঠনের পর পানির চাহিদা মেটাতে অনেকগুলো প্রকল্প গ্রহণ করেছেন।স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে তিনি বলেন, আমি মেয়র হিসেবে নির্বাচিত হলেও আইনী জটিলতায় এখনো দায়িত্ব গ্রহণ করতে পারিনি। কিন্তু তবুও থেমে থাকিনি। নগর উন্নয়নে প্রতিদিন কাজ করে যাচ্ছি। সিটি কর্পোরেশনে কোন নিয়ম নেই। আর্থিক অবস্থাও খুবই খারাপ। এ অবস্থায় নাগরিকদের সেবা প্রদান করা সম্ভব নয়।নগরবাসীর নাগরিক সেবা পূরণে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনকে অতিরিক্ত বরাদ্দ দেওয়ার আহ্বান জানান মেয়র।
চট্টগ্রাম ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ কে এম ফজলুল্লাহ’র সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব আবদুল মালেক, উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদ প্রশাসক এম এম সালাম, দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান।অনুষ্ঠান শেষে অতিথিরা মদুনাঘাট পানি শোধনাগার নির্মাণ কাজের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন।