কমলগঞ্জে শীতে চা শ্রমিকদের দুর্ভোগ : ৪ জনের মৃত্যু
প্রকাশিত হয়েছে : ২:৫৪:২৩,অপরাহ্ন ২২ জানুয়ারি ২০১৫
কমলগঞ্জ সংবাদদাতা::
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার গত দু’দিনের শীতে চা বাগান ও বনাঞ্চল চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। ঠান্ডায় আক্রান্ত হয়ে অসুস্থ্য এক ব্যক্তিসহ চারজনের মৃত্যুর সংবাদ পাওয়া গেছে। এছাড়াও গত কয়েকদিনে উপজেলার বিভিন্ন চা বাগানে কয়েকজন শ্রমিকের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। চা বাগান ও বস্তির লোকদের মধ্যে ঠান্ডাজনিত রোগের প্রকোপ বৃদ্ধি পাচ্ছে। চা বাগানের শ্রমিক, ইউপি সদস্য ও চিকিৎসকের সাথে কথা বলে এ চিত্র পাওয়া গেছে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, উপজেলায় প্রচন্ড শীত অনুভুত হচ্ছে। কনকনে বাতাসে ও ঘন কূয়াসায় চা শ্রমিক, কৃষক ও দিনমজুররা গরম কাপড়ের অভাবে চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। বাড়ি ঘরে খড়খুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারনের চেষ্টা করছেন। কর্মব্যস্ত চা শ্রমিকরা সকালে কাজে বেরোতে হিমশীম খাচ্ছেন। মৃত্তিঙ্গা চা বাগানের ইউপি সদস্য ধনা বাউরী জানান, মৃত্তিঙ্গা বাগানের অমৃত তাঁতী (৪৫) অসুস্থ্যতার সাথে সাথে ঠান্ডার প্রকোপে মঙ্গলবার বিকালে মারা যান।
মদনমোহনপুর চা বাগান এলাকার স্থানীয় ইউপি সদস্য সাবিদ আলী বলেন, ঠান্ডা বৃদ্ধি পাওয়ায় শারীরিকভাবে দুর্বল মদনমোহনপুর চা বাগানের জোসেফ গমেজ (৫০) ও বুন্দা বুনার্জি (৪৮) মারা যান। ডানকান ব্রাদার্স আলীনগর চা বাগানের ফাঁড়ি সুনছড়া চা বাগানের শ্রমিকরা জানান, অসুস্থ্য চুনুয়া কর্মকার (৫০) ঠান্ডায় আক্রান্ত হয়ে মঙ্গলবার গভীর রাতে মারা গেছেন। দিবা শুক্ল বৈদ্য, রাজদেও কৈরী, সুনীল সহ শমশেরনগর, দেওছড়া ও আলীনগর চা বাগানের শ্রমিকরা বলেন, দরিদ্র, অসহায় চা শ্রমিকরা দৈনিক যে মজুরি পান তা দিয়ে তিন বেলা খাবার সংকুলান করা যায় না। তার উপরে গরম কাপড় কেনা সম্ভব হয়ে উঠে না। প্রচন্ড শীতে বুড়ো লোকদের খুব বেশী কষ্ট সহ্য করতে হচ্ছে। শিশুরা সর্দি, কাশি ও জ্বরে আক্রান্ত হচ্ছে। বিভিন্ন সংস্থার পক্ষ থেকে মাঝে মধ্যে কিছু কম্বল বিতরণ করা হলেও সেটি শীত নিবারনে পর্যাপ্ত নয় বলে তারা দাবি করেন। রাজদেও কৈরী বলেন, পহেলা মাঘ বৃহষ্পতিবার সকালে গোসলে গিয়ে ঠান্ডায় বাগানের ছোট লাইনের মধ্য বয়সি একজন নারী শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। শমশেরনগর চা বাগানের ইউপি সদস্য সিতারাম বিন বলেন, শীতে গত কয়েকদিনে বিভিন্ন চা বাগানে মৃত্যুর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। তাছাড়া হাসপাতাল ও চিকিৎসাকেন্দ্র সমুহে রোগীর পরিমাণও বৃদ্ধি পেয়ে চলেছে। এদিকে ঠান্ডার প্রকোপ বৃদ্ধি পাওয়ায় দিনমজুর ও কৃষকদের কষ্টের পরিমাণ মাত্রাতিরিক্ত বৃদ্ধি পেয়েছে। চা বাগান ও বস্তির লোকদের মধ্যে সর্দি, কাশি, জ্বর, নিউমোনিয়া সহ বিভিন্ন ধরনের রোগব্যাধী বৃদ্ধি পেয়েছে।
হাসপাতাল ও স্থানীয় চিকিৎসা কেন্দ্র সমুহে রোগীর ভীড় বাড়ছে। কমলগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সত্যকাম চক্রবর্তী ঠান্ডায় রোগে আক্রান্তে সংখ্যা বৃদ্ধির সত্যতা স্বীকার করে বলেন, উপজেলায় ঠান্ডায় মৃত্যুর কোন সংবাদ নেই। তবে গত দু’দিনে হাসপাতালে ঠান্ডাজনিত রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা বলেন, তিনি এসব চা বাগানে খোঁজ নিয়ে দেখবেন।