‘উচ্চারণ’ ‘কথা’ ‘বর্ণ’তে মিলবে বাংলা ভাষা
প্রকাশিত হয়েছে : ১০:২৫:০২,অপরাহ্ন ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে ভাষা শহীদদের স্মরণে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন বাংলা ভাষাভিত্তিক তিনটি অ্যাপ বাংলা টেক্সট টু স্পিচ ‘উচ্চারণ’, বাংলা স্পিচ টু টেক্সট ‘কথা’ এবং বাংলা ওসিআর ‘বর্ণ’ -সহ নতুন একটি বাংলা ফন্ট ‘পূর্ণ’ উন্মুক্ত হয়েছে।
মো. আবদুল্লা আল আমীন
বুধবার (২১ ফেব্রুয়ারি) ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক এ তিনটি অ্যাপ ও ফন্ট উন্মুক্ত করেন।
এছাড়া বিটিসিএলের ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট ব্যান্ডউইথ জিপনের বিশেষ সাশ্রয়ী প্যাকেজ ঘোষণা করেন প্রতিমন্ত্রী। পাশাপাশি টেলিটক বাংলাদেশ লিমিটেডের ই-সিমও উদ্বোধন করেন তিনি।
জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, স্মার্ট প্রযুক্তিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রজ্ঞাবান নেতৃত্বে বাংলা ভাষার বিকাশে এক নতুন মাত্রা সংযুক্ত হলো। আমাদের ইতিহাসে এবং শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতির চেতনার বিকাশে একুশে ফেব্রুয়ারি যেন হাজার তারের বীণা। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের সংগ্রামের মধ্য দিয়েই কিন্তু মূলত আমাদের স্বাধীনতা অর্জন। আমাদের স্বাধীনতার জন্ম রক্তস্নাত ভাষা আন্দোলনের গর্ভ থেকেই।
তিনি আরও বলেন, সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় ৩০ জুনের মধ্যে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের অধীন লোকসানী সব প্রতিষ্ঠানকে লাভজনক পর্যায়ে নিতে চাই। বিষয়টা কঠিন হলেও অসম্ভব হবে না। বাঙালির পরিচয়ের মূলভিত্তি তার ভাষিক পরিচয়। আর্থ-সামাজিক জীবনে বাংলা ভাষা যথাযথ গুরুত্ব না পেলে তার শক্তি ক্রমশ দুর্বল হয়ে যাবে।
বাংলা টেক্সট টু স্পিচ ‘উচ্চারণ’ হলো একটি টিটিএস সফটওয়্যার। লেখাকে মেশিনের মাধ্যমে উচ্চারিত কথায় রূপান্তর করার প্রযুক্তিকে টিটিএস বা টেক্সট টু স্পিচ অ্যাপ্লিকেশন বলা হয়ে থাকে। টিটিএস ডকুমেন্ট, ওয়েবসাইট, স্ক্রিনের উইন্ডোতে থাকা টেক্সট পড়ে শোনাতে পারে। একই সঙ্গে তা দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ব্যক্তির জন্য উপযোগী হয়ে পড়ে শোনাতে পারে। উক্ত সফটওয়্যারটিতে নারী ও পুরুষ উভয় কণ্ঠই রয়েছে। বর্তমানে (read.bangla.gov.bd) ওয়েবসাইট থেকে সফটওয়্যারটি ব্যবহার করা যাবে।
‘কথা’ হলো বাংলা ভয়েস টাইপিং সফটওয়্যার। মুখের কথার মাধ্যমে কম্পিউটারে লেখার প্রযুক্তি হলো ভয়েস টাইপিং বা ‘স্পিচ টু টেক্সট’। এটি প্রমিত স্পষ্ট ও নীরব পরিবেশে উচ্চারিত বাংলা কথাকে লেখায় রূপান্তর করতে পারে। সফটওয়্যারটির চূড়ান্ত ভার্সন বাংলা প্রধান বিরাম চিহ্নগুলোকে লিপিবদ্ধ করতে পারে। ব্রাউজার থেকে একটি ওয়েব অ্যাপ্লিকেশন হিসেবে (voice.bangla.gov.bd) ওয়েবসাইট থেকে সফটওয়্যারটি ব্যবহার করা যাবে। এছাড়া প্রকল্পের তৈরি কিউবোর্ড অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপের মাধ্যমেও এই ভয়েস টাইপিং সার্ভিসটি ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।
বাংলা ওসিআর এর নাম হলো ‘বর্ণ’। ওসিআরে সাহায্যে কম্পিউটারের অপরিবর্তনযোগ্য ডকুমেন্টের লেখাকে এডিটেবল টেক্সটে রূপান্তর করা যায়। ওসিআর হলো পিডিএফ বা জেপেগ ফাইলের লেখাকে পরিবর্তনযোগ্য লেখায় রূপান্তর করা। এই বর্ণ ওসিআরটি বাংলা লেখাকে কম্পোজকৃত লেখার অনুরূপ টেক্সটে রূপান্তর করে থাকে। অর্থাৎ কোনো ডকুমেন্টকে ছবি তুলে বা স্ক্যান করে ওসিআর করলে তা কম্পোজড হয়ে যায়। বর্ণ ওসিআরটি বেশ কিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এটি কম্পিউটার কম্পোজ ডকুমেন্ট বিশেষ করে সরকারি পত্র, বিজ্ঞপ্তি ওসিআর করতে পারে। এর মাধ্যমে টেবিল, কমন ইংরেজি শব্দ ও প্রতিষ্ঠানের নাম, সরকারি প্রতিষ্ঠানের লোগো শনাক্ত করা যায়। এছাড়া পুরোনো টাইপরাইটার ডকুমেন্ট ও লেটারপ্রেস বইও ওসিআর করতে পারে অ্যাপ্লিকেশনটি। ওয়েব অ্যাপ্লিকেশন হিসেবে যেকোনো ব্রাউজার থেকে (ocr.bangla.gov.bd) ওয়েবসাইটে গিয়ে সফটওয়্যারটি ব্যবহার করা যাবে।
‘পূর্ণ’ ফন্ট একটি অনন্য সাধারণ বাংলা ইউনিকোড ফন্ট যা ফন্ট সংক্রান্ত সমস্যাগুলো চিহ্নিত করার পর ডিজাইন ও ডেভেলপ করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে বাংলা প্রকাশনায় প্রয়োজনীয় সকল টাইপোগ্রাফিক ফিচার। একই সঙ্গে বাংলা ভাষার বৈশিষ্ট্যকেও যথাযথভাবে প্রকাশ করছে এই ফন্ট। প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবহার ছাড়াও এই ফন্ট মুদ্রণ কাজে এবং ওয়েবে ব্যবহার উপযোগী। ফন্টে স্বরবর্ণ, ব্যঞ্জনবর্ণ, বিরাম চিহ্ন, ইংরেজি বর্ণ, গাণিতিক চিহ্ন, অসমীয়া স্বতন্ত্র সেট, ইন্ডিক-বাংলা সমর্থনকারী গ্লিফ, হোমোগ্রাফ, জনপ্রিয় আইকন/লোগোসহ প্রয়োজনীয় সকল গ্লিফ রয়েছে। ইত্যাদি ফন্টটি কিছু বৈশিষ্ট্যে রয়েছে। যেমন, স্বতন্ত্র ভিজুয়াল রূপ, একাধিক অ্যালোগ্রাফ, ল্যাটিন গ্লিফের সমতুল্য উচ্চতা, স্ট্যান্ডার্ড লাইন স্পেস এবং আকার এবং অপ্টিমাইজ করা গ্লিফ নম্বর, স্বচ্ছ ও সনাতন যুক্তবর্ণ উভয়ের সংযুক্তি ইত্যাদি। ফন্টটির স্বাভাবিক ভার্সন ছাড়াও বোল্ড, ইটালিক রূপ রয়েছে। ফন্টটি (https://bangla.gov.bd/fonts/) ওয়েবসাইট থেকে ডাউনলোড করা যাবে।