ভুয়া বিবৃতি : কড়া প্রশ্নের মুখে বিএনপি
প্রকাশিত হয়েছে : ৬:৫৭:৩৩,অপরাহ্ন ১৫ জানুয়ারি ২০১৫
নিউজ ডেস্ক::
সম্প্রতি স্বাক্ষর জাল করে ৬ মার্কিন কংগ্রেসম্যানের নামে ভুয়া বিবৃতি দেয়ার ঘটনায় এবার যুক্তরাষ্ট্রের কাছে রীতিমতো ধরা খেয়েছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি। গত সোমবার বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে ওয়াশিংটনের হস্তক্ষেপ চেয়ে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরে স্মারকলিপি দিতে গিয়ে এ প্রসঙ্গে কড়া প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির নেতাদের। জানা গেছে, ওয়াশিংটন ডিসিতে পররাষ্ট্র দপ্তর ও কংগ্রেসে গত সোমবার ৪৮ পৃষ্ঠার স্মারকলিপি দিতে যায় শরাফত হোসেন বাবু, বিএনপির যুক্তরাষ্ট্র কমিটির সাবেক কোষাধ্যক্ষ জসীমউদ্দিন ভুঁইয়া ও গোলাম ফারুক শাহিনের নেতৃত্বাধীন বিএনপির প্রতিনিধিদল। কয়েক দিন আগেই খালেদা জিয়াকে নিয়ে মার্কিন কংগ্রেসের ৬ সদস্যের একটি ভুয়া বিবৃতির কথা জানিয়েছিল বিএনপি। ওই বিবৃতি লন্ডনে অবস্থানরত বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের এক সহকারী সংবাদমাধ্যমে পাঠিয়েছিলেন বলে পরে জানা যায়।
বিষয়টি নিয়ে মার্কিন কর্মকর্তাদের প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়েছে বলে গণমাধ্যমের কাছে স্বীকার করেন জসীমউদ্দিন ভুঁইয়া। তিনি বলেন, কংগ্রেসম্যানদের স্বাক্ষর জালিয়াতির ব্যাপারে স্টেট ডিপার্টমেন্ট ও ক্যাপিটাল হিলের কর্মকর্তারা তাদের নানা প্রশ্ন করেন। এর জবাবে মার্কিন কর্মকর্তাদের তারা ওই জালিয়াতি ঘটনার নিন্দা করেছেন জানিয়ে বলেছেন যে, বিএনপির ভাবমূর্তি নষ্টের জন্য দলের মধ্যে ঘাপটি মেরে থাকা সরকারের লোকজন এসব করছে। এ অপকর্মকারীদের বিরুদ্ধে তারা ব্যবস্থা নিয়েছেন বলেও জানানো হয়। প্রতিনিধিদলের সদস্যরা মার্কিন প্রতিনিধিকে বলেন, বিএনপি হচ্ছে সাচ্চা একটি দেশপ্রেমিক রাজনৈতিক দল। এ দলের কেউ এমন জঘন্য অপকর্ম করতে পারে না।
এদিকে বিএনপির স্মারকলিপিতে ‘গত বছরের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনকে তামাশার এক প্রকৃষ্ট উদাহরণ’ হিসেবে অভিহিত করে বলা হয়, বাংলাদেশের শতকরা ৯০ ভাগ মানুষ ওই নির্বাচনে অংশ নেয়নি। বলা হয়, শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার বাংলাদেশে তার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে ক্রসফায়ারে দিচ্ছে অথবা গুম করছে। বিএনপিসহ বিরোধী দলের ৫০ সহস্রাধিক নেতা-কর্মীকে মিথ্যা মামলায় জেলে নেওয়া হয়েছে।
অন্যদিকে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের বাংলাদেশ ডেস্কের প্রধান গিলবার্ট মর্টন বিএনপির স্মারকলিপিটি গ্রহণ করেন। প্রতিনিধি পরিষদে ফরেন এফেয়ার্স কমিটির চেয়ারম্যান এড রয়েসের কার্যালয়ে স্মারকলিপি নেন তার ব্যক্তিগত সহকারী। একইভাবে ইউএস সিনেটে ফরেন রিলেশন্স কমিটির চেয়ারম্যান সিনেটর বব কোরকারের কনস্টিটুয়েন্সি সার্ভিস রিপ্রেজেনটেটিভ হেইলি হামফ্রির কাছে স্মারকলিপি দেয়া হয়।
অন্যদিকে মঙ্গলবার নিউইয়র্কে এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে দলটির ভাইস প্রেসিডেন্ট ও ঢাকার সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকা বলেন, এ ব্যাপারে বিএনপির সাবেক মন্ত্রী ওসমান ফারুককে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। তিনি বর্তমানে ওয়াশিংটনে রয়েছেন এবং সংশ্লিষ্ট কংগ্রেসম্যানদের সঙ্গে দেখা করছেন। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, বাংলাদেশ আজ এক কঠিন দুঃসময় পার করছে। বর্তমান স্বৈরাচারী ও জুলুমবাজ সরকার যেকোনো মূল্যে অবৈধভাবে ক্ষমতা আঁকড়ে থাকার অসৎ উদ্দেশ্যে দেশকে সংঘাতের মুখে ঠেলে দিয়েছে। দলীয় স্বার্থ হাসিলের জন্য সব রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানকে তারা অবলীলায় ধ্বংস করছে।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে জনগণের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দেয়া হয়েছে বলে দাবি করে খোকা বলেন, এসব বাহিনীর এক শ্রেণির দলবাজ এবং বিশেষ একটি এলাকার সদস্যরা প্রকাশ্যে নির্বিচারে গুলি করে নিরীহ জনসাধারণকে হত্যা করছে। বিজিবির সদস্যদের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে বিরোধী দল দমনে লেলিয়ে দেওয়া হয়েছে। এমনকি বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা এবং আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ সংগঠনসমূহের সশস্ত্র ক্যাডারদের নিয়োজিত করা হয়েছে।
খোকা বলেন, প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে নানা রকম নিয়ন্ত্রণ আরোপের ফলে প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় চলছে নিয়ন্ত্রিত সম্প্রচার। সরকারের নির্দেশ মানতে ব্যর্থ হওয়ায় একুশে টেলিভিশনের চেয়ারম্যান আবদুস সালামকে মিথ্যা মামলায় গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। ভারতের বিজেপির সভাপতি অমিত শাহর সঙ্গে খালেদা জিয়ার টেলিফোন আলাপ সম্পর্কে তিনি বলেন, অমিত শাহ খালেদা জিয়াকে ফোন করেছিলেন। দেশের যে দুটো গণমাধ্যমে (৭১ টিভি, চ্যানেল ২৪) অমিত শাহের বক্তব্য পেশ করা হয়েছে, সেটা আসল অমিত শাহের কথা নয়। এই ঘটনা যদি মিথ্যা হতো তাহলে বিজেপির পক্ষ থেকেই বিবৃতি দেয়া হতো।
দেশের এ অবস্থা থেকে মুক্তির উপায় কী? এমন প্রশ্নের উত্তরে খোকা বলেন, সরকারকে অবশ্যই সংলাপের আহ্বান করতে হবে। না হয় সর্বদলীয় সরকার গঠন করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে হবে। তিনি বলেন, দেশে যে অবস্থা বিরাজ করছে তা কোনোভাবেই সুখকর নয়। ক্ষোভের সঙ্গে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী কীভাবে এমন নির্জলা মিথ্যা কথা বলে যাচ্ছেন। তারেক রহমান ও বেগম জিয়া সম্পর্কে কটূক্তি করে প্রধানমন্ত্রী তার পদকেই কলঙ্কিত করছেন বলেও মন্তব্য করেন তিনি।