বদরপ্রধান নিজামীর মৃত্যুদণ্ড
প্রকাশিত হয়েছে : ৯:০৬:৫৩,অপরাহ্ন ২৯ অক্টোবর ২০১৪
ঢাকা: একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধকালে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে জামায়াতে ইসলামীর আমির মতিউর রহমান নিজামীকে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। একাত্তরের কুখ্যাত গুপ্তঘাতক আলবদর বাহিনীর প্রধান ছিলেন নিজামী।
বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১ আজ বুধবার এ রায় ঘোষণা করেন। ট্রাইব্যুনালের অপর দুই সদস্য হলেন বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন ও বিচারপতি আনোয়ারুল হক।
ট্রাইব্যুনালে নিজামীর বিরুদ্ধে আনা মানবতাবিরোধী অপরাধের ১৬টি অভিযোগের মধ্যে বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডে সংশ্লিষ্টতাসহ আটটি অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। এর মধ্যে ১, ৩, ৭ ও ৮ নম্বর অভিযোগে তাঁকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। ২, ৪, ৬ ও ১৬ নম্বর অভিযোগে নিজামীকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। প্রমাণিত না হওয়ায় বাকি আটটি অভিযোগ থেকে তাঁকে খালাস দেওয়া হয়েছে।
নিজামীর বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার রায় ঘোষণার ধার্য দিনে আজ বেলা ১১টায় ট্রাইব্যুনালের এজলাসে আসেন তিন বিচারপতি।
বেলা ১১টার কয়েক মিনিট আগে নিজামীকে হাজতখানা থেকে ট্রাইব্যুনালের কাঠগড়ায় আনা হয়। কাঠগড়ায় তাঁকে বিমর্ষ দেখাচ্ছিল। এ সময় তাঁর পরনে ছিল সাদা পাজামা ও পাঞ্জাবি। পাঞ্জাবির ওপরে ছিল খয়েরি রঙের কোটি। আর মাথায় জিন্নাহ টুপি।
আসন গ্রহণের পর ট্রাইব্যুনাল-১-এর চেয়ারম্যান বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম সূচনা বক্তব্যে বলেন, ‘রাষ্ট্র ও আসামিপক্ষ দীর্ঘ দিন ধরে রায়ের জন্য অপেক্ষায় ছিলেন। আমরাও অপেক্ষায় ছিলাম কখন রায় দিতে পারব। দীর্ঘ অপেক্ষার কারণে বিভিন্ন মহল ও গণমাধ্যমে নানা কথা উঠেছে। এসব কথা আমলে নেওয়া ও জবাব দেওয়ার সুযোগ আমাদের নেই। জবাব দেওয়া উচিতও হবে না। আদালত রাস্তায় গিয়ে কথা বলতে পারেন না। আমরা বোবার মতো থাকি। মন্তব্য করার ক্ষেত্রে মনে রাখা উচিত, আমরা (আদালত) কোনো জবাব দিতে পারব না।’
ট্রাইব্যুনাল-১-এর চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমরা নিজের বিবেক, আইন ও সংবিধান দ্বারা পরিচালিত হই। আমাদের ওপর কোনো নির্দেশ নেই। আমরা আপসও করি না। আপস করি আইন ও সংবিধানের সঙ্গে।’
বেলা ১১টা ১০ মিনিটে প্রারম্ভিক বক্তব্যের মধ্য দিয়ে রায় পড়া শুরু করেন ট্রাইব্যুনালের সদস্য বিচারপতি আনোয়ারুল হক। ট্রাইব্যুনালের অপর সদস্য বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন তাঁর অংশের রায় পড়া শুরু করেন বেলা ১১টা ৩৬ মিনিটে। দুপুর সোয়া ১২টা থেকে ১২টা ২০ মিনিটের মধ্যে নিজামীর মানবতাবিরোধী অপরাধের সাজা ঘোষণা করেন ট্রাইব্যুনাল-১-এর চেয়ারম্যান বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম।
এর আগে নিজামীকে আজ সকাল সাড়ে নয়টার দিকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের হাজতখানায় নিয়ে আসা হয়।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ গতকাল মঙ্গলবার দ্বিতীয় দফায় এই মামলার রায় ঘোষণার দিন ধার্য করেন। রায় ঘোষণা উপলক্ষে নিজামীকে আজ সকাল সাড়ে ১০টার মধ্যে ট্রাইব্যুনালে হাজির রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়। এ জন্য গতকাল সন্ধ্যায় তাঁকে গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগার থেকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আনা হয়।
১৬ অভিযোগ: নিজামীর বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধকালে বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডে সংশ্লিষ্টতাসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের ১৬টি অভিযোগ আনা হয়। ২০১২ সালের ২৮ মে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ তাঁর বিরুদ্ধে এই ১৬টি অভিযোগ গঠন করেন।
নিজামীর বিরুদ্ধে প্রথম অভিযোগ, ১৯৭১ সালের ৪ জুন পাবনা জেলা স্কুলের প্রধান শিক্ষক মাওলানা কছিমুদ্দিনকে অপহরণ করে নূরপুর পাওয়ার হাউসে পাকিস্তানি সেনাদের ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে নিজামীর উপস্থিতিতে তাঁকে নির্যাতন এবং ১০ জুন ইছামতী নদীর পাড়ে নিয়ে হত্যা করা হয়। এই অভিযোগে নিজামীকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
দ্বিতীয় অভিযোগ, একাত্তরের ১০ মে নিজামীর পূর্বপরিকল্পনা অনুসারে পাবনার দুটি গ্রামের প্রায় সাড়ে ৪০০ মানুষকে হত্যা ও ৩০-৪০ জন নারীকে ধর্ষণ করে পাকিস্তানি সেনা ও রাজাকাররা। এই অভিযোগে নিজামীকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল।
তৃতীয় অভিযোগ, ১৯৭১ সালের মে মাসের শুরু থেকে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত রাজধানীর মোহাম্মদপুরের শারীরিক শিক্ষা কলেজে পাকিস্তানি সেনা, রাজাকার ও আলবদর বাহিনীর ক্যাম্প ছিল। নিজামী ওই ক্যাম্পে নিয়মিত যাতায়াত করতেন ও মানবতাবিরোধী অপরাধের ষড়যন্ত্র করতেন। এই অভিযোগে নিজামীকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
চতুর্থ অভিযোগ, একাত্তরের ৮ মে নিজামী, রাজাকার ও আলবদর বাহিনীর সদস্যরা পাবনার করমজা গ্রামের নয়জনকে হত্যা করে এবং ঘরবাড়িতে আগুন দেয়। করমজা গ্রামের হাবিবুর রহমানকে নিজামীর পরিকল্পনায় হত্যা করা হয়। এই অভিযোগে নিজামীকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল।
পঞ্চম অভিযোগ, ১৯৭১ সালের ১৬ এপ্রিল নিজামীর সহযোগিতায় পাকিস্তানি সেনারা ঈশ্বরদী উপজেলার আড়পাড়া ও ভূতেরবাড়ি গ্রামে ২১ জনকে হত্যা করে এবং ঘরবাড়ি লুণ্ঠন ও অগ্নিসংযোগ করে। প্রমাণিত না হওয়ায় অভিযোগটি থেকে নিজামীকে খালাস দেওয়া হয়েছে।
ষষ্ঠ অভিযোগ, ২৭ নভেম্বর নিজামীর নির্দেশে পাবনার ধুলাউড়ি গ্রামে রাজাকার ও পাকিস্তানি সেনারা অভিযান চালিয়ে ৫২ জন নারী-পুরুষ ও শিশুকে হত্যা করে। এই অভিযোগে নিজামীকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল।
সপ্তম অভিযোগ, ৩ নভেম্বর নিজামীর দেওয়া তথ্য অনুসারে বৃশালিখা গ্রামের সোহরাব আলীকে পাকিস্তানি সেনারা আটক ও হত্যা করে। এই অভিযোগে নিজামীকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
অষ্টম অভিযোগ, ৩০ আগস্ট নিজামী ঢাকার নাখালপাড়ার পুরোনো এমপি হোস্টেলে গিয়ে আটক রুমী, বদি, জালাল, আলতাফ মাহমুদকে হত্যার জন্য পাকিস্তানি সেনাদের প্ররোচনা দেন। এই অভিযোগে নিজামীকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
নবম অভিযোগ, নিজামীর দেওয়া তথ্য অনুসারে পাকিস্তানি সেনারা পাবনার বৃশালিখা গ্রাম চারদিক থেকে ঘিরে ৭০ জনকে হত্যা করে এবং ৭২টি বসতবাড়ি পুড়িয়ে দেয়। প্রমাণিত না হওয়ায় অভিযোগটি থেকে নিজামীকে খালাস দেওয়া হয়েছে।
দশম অভিযোগ, মুক্তিযুদ্ধকালে পাবনার সোনাতলা গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা অনিল চন্দ্র কুণ্ডু প্রাণ বাঁচাতে ভারতে চলে যান। নিজামীর নির্দেশে রাজাকাররা অনিলের বাড়ি আগুনে জ্বালিয়ে দেয়। প্রমাণিত না হওয়ায় অভিযোগটি থেকে নিজামীকে খালাস দেওয়া হয়েছে।
১১ থেকে ১৪ নম্বর অভিযোগে নিজামীর বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধে উসকানি দেওয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে। এগুলোতে বলা হয়, একাত্তরের ৩ আগস্ট চট্টগ্রাম মুসলিম ইনস্টিটিউটে ইসলামী ছাত্রসংঘের সভায়, ২২ আগস্ট ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক একাডেমি হলে আল মাদানীর স্মরণসভায়, ৮ সেপ্টেম্বর প্রতিরক্ষা দিবস উপলক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাভবনের সামনে ছাত্রসংঘের সভায় এবং ১০ সেপ্টেম্বর যশোরে রাজাকারদের প্রধান কার্যালয়ে এক সুধী সমাবেশে নিজামী উসকানিমূলক বক্তব্য দেন। প্রমাণিত না হওয়ায় অভিযোগ চারটি থেকে নিজামীকে খালাস দেওয়া হয়েছে।
১৫তম অভিযোগে বলা হয়েছে, একাত্তরের মে মাস থেকে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত সাঁথিয়া পাইলট উচ্চবিদ্যালয়ের রাজাকার ক্যাম্পে নিজামী নিয়মিত যাতায়াত করতেন এবং রাজাকার সামাদ মিয়ার সঙ্গে মানবতাবিরোধী অপরাধের ষড়যন্ত্র করতেন। প্রমাণিত না হওয়ায় এই অভিযোগটি থেকে খালাস পেয়েছেন নিজামী।
১৬তম অভিযোগ হলো, ১৯৭১ সালের ডিসেম্বরে বিজয়ের ঊষালগ্নে দেশের বুদ্ধিজীবীদের ওপর ব্যাপক গণহত্যা চালায় আলবদর বাহিনী। ছাত্রসংঘ ও আলবদর বাহিনীর প্রধান হিসেবে ওই হত্যাকাণ্ডের দায় নিজামীর ওপর পড়ে। এই অভিযোগে নিজামীকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল।
দীর্ঘসূত্রতা: ট্রাইব্যুনালে একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধকালের মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলাগুলোর মধ্যে এ পর্যন্ত সবচেয়ে দীর্ঘ সময় ধরে চলেছে নিজামীর বিরুদ্ধে মামলার বিচারকার্যক্রম। এর রায়ও অপেক্ষমাণ ছিল সবচেয়ে দীর্ঘ সময়। গত বছরের ১৩ নভেম্বর প্রথম দফায় এ মামলার কার্যক্রম শেষে যেকোনো দিন রায় ঘোষণা করা হবে বলে জানান ট্রাইব্যুনাল। সেই থেকে এই রায়ের জন্য অপেক্ষার শুরু। রায় ঘোষণার আগেই ৩১ ডিসেম্বর অবসরে যান ট্রাইব্যুনাল-১-এর তৎকালীন চেয়ারম্যান বিচারপতি এ টি এম ফজলে কবীর।
এর ৫৩ দিন পর বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমকে চেয়ারম্যান নিয়োগ দিয়ে এই ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠন করা হয়। পুনর্গঠিত ট্রাইব্যুনাল দ্বিতীয় দফায় মামলার সমাপনী যুক্তি শোনেন। ২৪ মার্চ মামলাটি দ্বিতীয় দফায় রায়ের অপেক্ষায় (সিএভি-কেস অ্যায়োটিং ভারডিক্ট) রাখা হয়। এর তিন মাস পর ২৪ জুন রায় ঘোষণার দিন ধার্য করা হয়।
কিন্তু রায় ঘোষণার দিন সকালে কারাগারে আটক নিজামী হঠাৎ ‘অসুস্থ’ হয়ে পড়েন। কারা কর্তৃপক্ষ ট্রাইব্যুনালকে জানায়, তাঁকে হাজির করা সম্ভব নয়। ট্রাইব্যুনাল বলেন, আসামির অনুপস্থিতিতে রায় ঘোষণা যুক্তিসংগত নয়। এ জন্য মামলাটি আবারও রায়ের অপেক্ষায় রাখা হয়। ট্রাইব্যুনাল বলেছিলেন, আসামি সুস্থ হয়ে উঠলে যত দ্রুত সম্ভব রায় ঘোষণা করা হবে।
৩ জুলাই নিজামীর সুস্থতার প্রতিবেদন ট্রাইব্যুনালে পাঠায় কারা কর্তৃপক্ষ। এর প্রায় চার মাস পর গতকাল দ্বিতীয় দফায় এই রায় ঘোষণার দিন ধার্য করা হয়। আজ রায় ঘোষণার মধ্য দিয়ে দীর্ঘ অপেক্ষার অবসান হলো।
২০১২ সালের ২৮ মে ১৬টি অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে এই মামলায় নিজামীর বিচার শুরু হয়। প্রায় দেড় বছর ধরে সাক্ষ্য গ্রহণ চলে। মামলাটির দীর্ঘসূত্রতার অন্যতম কারণ, একই সময়ে চট্টগ্রামে ১০ ট্রাক অস্ত্র আটক মামলারও বিচার চলছিল। এ জন্য ওই মামলার অন্যতম আসামি নিজামীকে সপ্তাহে দুই দিন চট্টগ্রামে নেওয়ায় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার কার্যক্রম ব্যাহত হয়। গত ৩০ জানুয়ারি ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলার রায়ে নিজামীকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়।
ফিরে দেখা: ১৯৪৩ সালে পাবনার সাঁথিয়া উপজেলার মোহাম্মদপুর গ্রামে জন্মগ্রহণকারী নিজামী ১৯৭১ সালে নিখিল পাকিস্তান ইসলামী ছাত্রসংঘের (জামায়াতের তৎকালীন ছাত্র সংগঠন, বর্তমান নাম ইসলামী ছাত্রশিবির) সভাপতি ছিলেন। নিজামী একাত্তরের কুখ্যাত গুপ্তঘাতক আলবদর বাহিনীর প্রধান ছিলেন। ২০১০ সালের ২৯ জুন ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়ার অভিযোগে করা মামলায় তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। ওই বছরের ২ আগস্ট তাঁকে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়।
নিরাপত্তা: রায় ঘোষণাকে কেন্দ্র করে আজ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ও এর আশপাশের এলাকায় নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করা হয়। সংশ্লিষ্ট এলাকায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অতিরিক্ত সদস্যরা সতর্ক অবস্থান নেন।
হাইকোর্ট ও ট্রাইব্যুনালে প্রবেশের সবগুলো ফটকে পুলিশ ও র্যাব অবস্থান নেয়। ভেতরে প্রবেশের ক্ষেত্রে পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার পাশাপাশি তল্লাশিও করা হয়।
দোয়েল চত্বর থেকে হাইকোর্ট মাজার পর্যন্ত সড়কে যান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। হাইকোর্ট মাজার ফটকের বাইরে অবস্থান নেয় পুলিশের সাঁজোয়া যান। শাহবাগ মোড়েও অবস্থান নেয় পুলিশ।
রায় ঘোষণাকে কেন্দ্র করে আজ রাজধানীসহ দেশব্যাপী নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। গতকাল রাত থেকেই রাস্তায় নামে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)।
ঢাকা মহানগর পুলিশের জনসংযোগ বিভাগের উপকমিশনার মাসুদুর রহমান গতকাল জানান, নিজামীর রায়কে কেন্দ্র করে হাইকোর্ট এলাকায় ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়। ঢাকায় নেওয়া হয়েছে বাড়তি নিরাপত্তাব্যবস্থা। রয়েছে তল্লাশি চৌকি, অতিরিক্ত টহল।
ঢাকার বাইরেও বিভিন্ন জায়গায় বিজিবি মোতায়েন করা হয়। পুলিশ সদর দপ্তর থেকে জানানো হয়, ঢাকার বাইরের জেলাগুলো বিশেষ করে যেসব জায়গায় গত বছর ব্যাপক জ্বালাও-পোড়াও হয়েছিল, সেসব জেলায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।
মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার: নিজামীর মামলার রায় ঘোষণার মধ্য দিয়ে দুটি ট্রাইব্যুনাল এ নিয়ে মানবতাবিরোধী অপরাধের ১০টি মামলার রায় ঘোষণা করলেন। এ পর্যন্ত ট্রাইব্যুনাল-২ ছয়টি এবং ট্রাইব্যুনাল-১ চারটি মামলার রায় দিয়েছেন।
দুই ট্রাইব্যুনালের দেওয়া রায়গুলোর মধ্যে তিনটি ইতিমধ্যে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে নিষ্পত্তি হয়েছে। এর মধ্যে সর্বশেষ ১৭ সেপ্টেম্বর জামায়াতের নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে ট্রাইব্যুনাল-১-এর দেওয়া মৃত্যুদণ্ডের সাজা কমিয়ে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেন আপিল বিভাগ।
আর গত বছরের ১৭ সেপ্টেম্বর জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল কাদের মোল্লাকে ট্রাইব্যুনাল-২-এর দেওয়া যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের সাজা বাড়িয়ে মৃত্যুদণ্ড দেন আপিল বিভাগ। ১২ ডিসেম্বর রাতে ওই রায় কার্যকর করা হয়।
এ ছাড়া বিএনপির সাবেক নেতা আবদুল আলীম মারা যাওয়ায় তাঁর মামলাটি আপিল বিভাগ বাতিল করেছেন। ট্রাইব্যুনাল-২ তাঁকে আমৃত্যু কারাদণ্ডাদেশ দিয়েছিলেন।
ট্রাইব্যুনাল-১-এর রায়ে ৯০ বছরের কারাদণ্ডাদেশ পাওয়া জামায়াতের সাবেক আমির গোলাম আযমও কারাগারে আটক অবস্থায় ২৩ অক্টোবর মারা যান। নিয়ম অনুসারে আপিল বিভাগে বিচারাধীন তাঁর মামলাটিও আর চলবে না।
মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় এ পর্যন্ত জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদ, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মোহাম্মদ কামারুজ্জামান, আলবদর বাহিনীর দুই নেতা চৌধুরী মুঈনুদ্দীন ও আশরাফুজ্জামান খান, জামায়াতের সাবেক সদস্য (রুকন) আবুল কালাম আযাদ, বিএনপির নেতা সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরীকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল।