আইসক্রিম বিক্রেতার মানবতা!
প্রকাশিত হয়েছে : ২:৪৫:৩৮,অপরাহ্ন ০৮ জুন ২০১৫
নিউজ ডেস্ক::
আইসক্রিম বিক্রি করে কোনোমতে সংসার চলে তাঁর। সমাজের চোখে গরীব শ্রেণীর মানুষ। গরীব হলে কী হবে মানবতা আর মনের দিক থেকে অনেক বড় মানুষ তিনি। কথায় আছে ‘মানুষ শুধু নামেই হয়না আর ধন থাকলেই বড় লোক হয়না।’
পবিত্র শবে রবাত ইসলাম ধর্মের অনুসারী সকলেই সারা রাত ইবাদত- বন্দেগী করে ভাগ্যের পরিবর্তন আর খোদার সন্তুষ্টি অর্জনে মশগুল। পবিত্র এ দিনটিতে বৃদ্ধ এক মা’কে রাস্তার ধারে ফেলে দিয়েছে কে বা কারা রাত থেকে প্রায় সারা দিন পর্যন্ত। জনসমাগম ভরা রাস্তাটি দিয়ে শত শত লোকজন চলাচল করেছে, কেউ মূমুর্ষ অবস্থায় পড়ে থাকা বৃদ্ধার খোঁজ করেন নি। অনেকের মুখের দিকে চেয়ে চোখের পানি ছেঁড়ে দিলে কেউবা দু’ এক টাকা কাছে ছুঁড়ে দিয়ে দায়িত্বটি সেরেছেন।
ওই রাস্তা দিয়ে আইসক্রিম বিক্রি করতে যাওয়ার সময় অজ্ঞাত সত্তোরোর্ধ বছরের বৃদ্ধাকে পাটগ্রাম পৌরসভার ধরলা সেতু রোডে পড়ে থাকতে দেখে অনেকের মত রাশিদুল। কেউ বলে পাগল, কেউ বলে অসুস্থ্য আবার ছোট শিশুরা পাথর দিয়ে ঢিল ছুঁড়ে। পড়ে থাকা বৃদ্ধা কোনো কিছুই বলেনা। শুধু এদিক ওদিক চায়। পাথর ঢিল ছুঁড়তে বাঁধা দিয়ে পেটের তাগিতে চলে যায় সে। সন্ধাকালীন ফিরে দেখে বৃদ্ধা সেখানেই পড়ে। মৃত অবস্থা প্রায়।
রাশিদুল বৃদ্ধার সাথে আকার ইঙ্গিতে কথা বলে বুঝতে পারে পড়ে থাকা বৃদ্ধা পাগল নয়। দ্রুত কোলে তুলে রিক্সায় নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি করতে গেলে ডাক্তার অজ্ঞাত আর বৃদ্ধ হওয়ায় ভর্তি নিতে চায়নি। অনেক অনুনয় বিনয় করে ওই দিন (০৩ জুন) বুধবার ভর্তি করায় সে। প্রায় একসপ্তাহ ধরে নিজ হাতে বৃদ্ধাকে খাওয়ায়, সেবা করে বাড়ী থেকে স্ত্রীকে নিয়ে গোসল করায় এখন সুস্থ্য বৃদ্ধা কিন্তু কথা বলতে পারে না।
বৃদ্ধাকে দেশের বিভিন্ন জেলা- উপজেলার নাম বলে রংপুর বললে মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানায়। বড় বড় সন্তান- সন্তদি রয়েছে, বাড়ী হাসপাতালের ওয়াল দেখিয়ে দেয়। কিভাবে..? কি হয়েছে …? জানতে চাইলে ইঙ্গিতে জানায়, কে বা কারা গাড়ীতে টেনে তুলে বুকে আঘাত করে গলা টিপে ধরে প্রভৃতি এ ছাড়া বেশি কিছু বোঝাতে পারেন না তিনি।
বৃদ্ধাকে ছেড়ে কোথাও আর যেতে পারছেন না রাশিদুল। চিন্তা আর চিন্তা বৃদ্ধার বাড়ী..? সন্তান…? কোথায়…? প্রভৃতি। আইসক্রিম বিক্রি করতেও যেতে পারে না সে। গেলে বৃদ্ধার কথা মনে হওয়ার সাথেই চলে আসে হাসপাতালে। লালমনিহাটের পাটগ্রাম উপজেলার পৌরসভার মাষ্টাপাড়া গ্রামের বাসিন্দা রাশিদুল ইসলাম। তার এখন একটাই চিন্তা বৃদ্ধাকে তাঁর স্বজনের নিকট হস্তান্তর করা।