অনন্ত হত্যা : কোপানোর কারণ জিজ্ঞেস করায় প্রত্যক্ষদর্শী নারীকে চড় মারে এক খুনি!
প্রকাশিত হয়েছে : ৫:৪৪:৫৯,অপরাহ্ন ২০ মে ২০১৫
নিউজ ডেস্ক :: সকাল প্রায় সাড়ে ৮ টা। প্রতিদিনের মতো বাচ্চাকে নিয়ে স্কুলে রওয়ানা দিয়েছিলেন সাগরদিঘীর পাড় নুরানী আবাসিক এলাকার এক নারী। দস্তিদার দিঘীর পাশে আসার পরই তিনি দেখতে পান একটা লোককে মাটিতে ফেলে চারজন মিলে কুপাচ্ছে। আরেকটু কাছে আসতেই তিনি মাটিতে পড়ে থাকা ছেলেটিকে চিনতে পারেন; অনন্ত বিজয় দাশ।
ঘাতকদের কাছে অনন্তকে কুপানোর কারণ জানতে চান এই নারী। কোনো জবাব না দিয়ে এক ঘাতক এ সময় তাঁর গালে চড় মারে এবং সেখান থেকে চলে যেতে বলে, তিনি চলে যান। অনন্ত হত্যার বর্ণনা দিতে গিয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে একথাগুলো বলেন প্রত্যক্ষদর্শী এই নারী।
১২ মে সুবিধবাজার দস্তিদার দিঘীর পাশেই কুপিয়ে হত্যা করা হয় মুক্তমনা লেখক ও ব্লগার অন্তত বিজয় দাশকে।
ঘটনাস্থলের পাশের একটি বহুতল ভবনের বাসিন্দা একজন নারী দাবি করলেন তিনিও পুরো ঘটনা দেখেছেন। তাঁর ভাষ্য মতে, ‘আমি বাসার বারান্দায় কাপড় শুকাতে দিচ্ছিলাম। হঠাৎ বাঁচাও বাঁচাও চিৎকার শুনে নিচের দিকে তাকাই। তখন দেখি চারজন যুবক মিলে একজনকে কোপাচ্ছে। এরপর চার যুবক তাদের ব্যাগে কিছু একটা ঢুকিয়ে বোতল বের করে পানি পান করতে করতে বনকলাপাড়ার রাস্তার দিকে ধীরে স্থিরে হেঁটে চলে যায়। চার যুবকের পরনে ছিল জিন্স প্যান্ট। কারো পরনে ছিল হাফ শার্ট আবার কারো টি শার্ট। তবে চারজনের কারোই মুখোশ ছিল না বলে দাবি করেন তিনি। খুনের পর তারা শান্তভাবে হেঁটে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে।’
খুনের সময় পাশ্ববর্তী একটি ভবনের ছাদ থেকে কেউ একজন হত্যার দৃশ্য ভিডিও করে বলে বিভিন্ন জনের সাথে আলাপ করে জানা গেছে। তবে কে ভিডিও করেছে তা নিশ্চিত হওয়া যায় নি।
ঘটনাস্থলের আশপাশের বিভিন্ন জনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায় খুন করার পর ঘাতকরা পানি পান করতে করতে বনকলাপাড়ার ভেতরের রাস্তা দিয়ে হেঁটে চলে যায়। তাদের কারো মুখে মুখোশ ছিল না। যদিও ঘটনার পর একজন প্রত্যক্ষদর্শী পুলিশ ও গণমাধ্যমের কাছে বলেছিলেন ঘাতকরা মুখোশ পরা ছিল।
এলাকার একাধিক ব্যক্তি এ নিয়ে কথা বললেও কেউ গণমাধ্যমের কাছে নাম পরিচয় প্রকাশে ইচ্ছুক নয়। একজন প্রত্যক্ষদর্শী জানান, তিনি মোটরসাইকেলে করে সেদিকে যাচ্ছিলেন। এ সময় ঘাতকরা অনন্তকে কোপাচ্ছিল। তিনি মোটরসাইকেল থামান। এ সময় ঘাতকদের একজন অস্ত্র হাতে তাঁর দিকে তেড়ে এসে বলে, ‘সোজা চলে যাও, নইলে তোমাকেও মেরে ফেলব।’ তিনি ভয় পেয়ে যান এবং সঙ্গে সঙ্গে ওই স্থান ত্যাগ করেন।
তদন্ত চলছে : মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সিলেট মহানগর পুলিশের বিমানবন্দর থানার ওসি (তদন্ত) নূরুল আলম বলেছেন, ‘অনন্ত বিজয় দাশ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় মাঠপর্যায়ের তদন্ত প্রায় গুছিয়ে এনেছে পুলিশ। এবার তাঁর মোবাইল ফোন ও ব্লগে যারা বিভিন্ন সময় হুমকি-ধমকি দিয়েছে তাদের তালিকা সংগ্রহ করা হচ্ছে। ঘটনাস্থলের আশপাশের অনেকের সঙ্গে কথা হয়েছে। ঘাতকদের শনাক্ত করার ব্যাপারে বিভিন্ন বিষয়ে খোঁজ নেওয়া হচ্ছে। আমরা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করছি।’
সূত্র : কালের কণ্ঠ