জেনে রাখুন ভীষণ সুস্বাদু আমের পুষ্টিগুণ ও স্বাস্থ্য উপকারিতা
প্রকাশিত হয়েছে : ১:১১:৩৯,অপরাহ্ন ১৭ মে ২০১৫
লাইফ স্টাইল ডেস্ক :: এখন আমের মৌসুম, কিছুদিন পরই পাকা আমের সৌরভে মৌ মৌ করবে চারদিক। এই আমের রয়েছে চমৎকার স্বাস্থ্য উপকারিতা। একে ফলের রাজাও বলা হয়ে থাকে। স্বাদের দিক থেকে এটি শুধুমাত্র সুস্বাদু ও তরতাজাই নয় এই ফলের অনেক ভালো গুন রয়েছে।
আমের পুষ্টিগুণ-
আম উচ্চ প্রোটিন, ভিটামিন এ, সি, বি৬, কে, ফোলিক এসিড, আঁশ ও পটাশিয়াম সমৃদ্ধ একটি ফল। এছাড়া আমে কপার, ক্যালসিয়াম, আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম এবং এন্টিঅক্সিডেন্ট যেমন বিটা ক্যারোটিন ও জিয়াজেন্থিন রয়েছে।
আমের স্বাস্থ্য উপকারিতা
আম খাওয়ার ফলে আমাদের জীবনযাপনের সাথে সংশ্লিষ্ট অনেক স্বাস্থ্য সমস্যার ঝুঁকি কমিয়ে দেয়। অনেক গবেষণায় দেখা গেছে আম খাওয়ার ফলে স্থুলতা, ডায়াবেটিস এবং হৃদরোগের ঝুঁকি কমে। এছাড়া ত্বক ও চুলের রঙের পরিবর্তনের ক্ষেত্রে, দেহের শক্তি বৃদ্ধির জন্য, কোলন ক্যান্সার রোধে, হাড় ও হজম শক্তির উন্নত করার ক্ষেত্রে এই ফলের ভূমিকা রয়েছে। এখানে আমের কিছু স্বাস্থ্য উপকারিতা তুলে ধরছি-
ক্যান্সার প্রতিরোধে-
গবেষকরা বলেছেন যে, আমে এন্টিঅক্সিডেন্ট থাকার ফলে এটা কোলন,স্তন, লিউকেমিয়া এবং প্রোস্টেট ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে পারে।
কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায়-
আমে থাকা উচ্চমাত্রার ভিটামিন সি, পেকটিন ও আঁশ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায়। দেহ তরল এবং কোষের জন্য গুরুত্বপূর্ণ যৌগ পটাশিয়ামের খুব ভালো উৎস হচ্ছে তাজা আম যা উচ্চ রক্তচাপ ও হৃদস্পন্দন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
ত্বক পরিস্কারে এবং তারুণ্য ধরে রাখতে-
আমে থাকা ভিটামিন সি কোলাজেনের উৎপাদনে সাহায্য করে যার ফলে ত্বক সতেজ ও টানটান হয়। আম খেলে সূর্যের আলোতে ক্ষতিগ্রস্ত ত্বকের ক্ষতির পরিমান কমে যায়। এছাড়া পাকা আম ত্বকে মাস্ক হিসেবে ব্যবহার করলে লোমকূপে জমে থাকা ময়লা পরিষ্কার হয়।
ওজন কমাতে-
আমে অনেক ভিটামিন ও পুষ্টি উপাদান রয়েছে।আঁশ জাতীয় খাবার হজমক্রিয়াতে সাহায্য করার ফলে তা দেহের বাড়তি ক্যালরি ক্ষয় করতে সাহায্য করে। এছাড়া আম খেলে ক্ষুধা কমে এবং কোলেস্টেরল ও গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে।
হৃদযন্ত্রের সুরক্ষায়-
আমে উচ্চ আঁশ ও এন্টিঅক্সিডেন্ট থাকায় তা হৃদরোগের সম্ভাবনাকে উল্লেখযোগ্য ভাবে কমায়।এক কাপ আমে ৩ গ্রাম আঁশ রয়েছে।গবেষণায় দেখা যায় যে প্রতি ৭ গ্রাম আঁশ গ্রহনের ফলে হৃদরোগের সম্ভাবনা কমায় ৯%।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে-
শুধু আম নয় আমের পাতাও বেশ উপকারী।যাদের ডায়াবেটিস আছে তারা যদি ৫-৬টি আম পাতা ধুয়ে একটি পাত্রে সেদ্ধ করে নিয়ে সারারাত রেখে সকালে এর ক্বাথ ছেকে নিয়ে পান করে করেন তাহলে এটা ইন্সুলিনের মাত্রা নিয়ন্ত্রনে সাহায্য করেন। এছাড়া আমের গ্লাইসেমিক ইনডেক্স (৪১-৬০)কম বলে এটা যদি মাঝে মাঝে বেশি খাওয়া হয়ে যায় তবে সুগারের মাত্রা খুব বেশি বাড়বে না।
কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধে-
উচ্চ আঁশযুক্ত আম স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী। এটা ভালো হজমের জন্য এবং কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধের জন্য খুবই কার্যকরী।
কামোত্তেজক-
আমের রয়েছে কামোত্তেজক গুনাগুন এবং একে ‘লাভ ফ্রুট’ও বলা হয়। এটা পুরুষের পুরুষত্ব বাড়ায়। আমে প্রচুর ভিটামিন ই থাকাতে এটা সেক্স হরমোন কে নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে।
অ্যাজমা প্রতিরোধে-
যারা আম খেয়ে থাকেন তাদের মাঝে অ্যাজমা হওয়ার সম্ভাবনা কম। এটি আমের একটি চমকপ্রদ স্বাস্থ্য উপকারিতা। এতে থাকা উচ্চ বিটা ক্যারোটিন অ্যাজমা প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
চোখের যত্নে-
আমে রয়েছে প্রচুর ভিটামিন এ। শুধু মাত্র এক কাপ পাকা আম খেয়ে সারাদিনের ভিটামিন এ র চাহিদার ২৫% পুরন করা সম্ভব। এছাড়া এটা দৃষ্টিশক্তিকে উন্নত করতে সাহায্য করে, চোখের শুষ্কতা ও রাতকানা রোগ প্রতিরোধ করে।
জন্মগত ত্রুটি প্রতিরোধে-
গর্ভাবস্থায় আম খাওয়ার অনেক উপকারিতা রয়েছে। আম বি ভিটামিনে সমৃদ্ধ। এতে ভিটামিন বি১, বি২, বি৫, বি৬, নায়াসিন এবং ফলিক এসিড রয়েছে। ফলিক এসিড গর্ভবতী নারীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ কারন এটা জন্মগত ত্রুটির সম্ভাবনা কমায়। দৈনিক ফলিক এসিডের চাহিদা হচ্ছে ৪০০ মাইক্রোগ্রাম আর এক কাপ তাজা আম থেকেই পাওয়া যায় ৭১ মাইক্রোগ্রাম। পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম ও কালসিয়ামসহ খনিজ পদার্থের বেশ ভালো উৎস হচ্ছে আম।
হজমে সাহায্য করে-
আম প্রচুর খাদ্য আঁশ, ভিটামিন ও খনিজে ভরপুর।এতে থাকা এনজাইম প্রোটিনকে ভাঙ্গতে সাহায্য করে।আমে থাকা আঁশ হজমে এবং বর্জ্য ত্যাগ করতে সাহায্য করে।
হিট স্ট্রোক প্রতিরোধে-
গ্রীষ্মের প্রচণ্ড খড়রৌদ্রে একটি আমের রসের সাথে সামান্য পানি,এক টেবিল চামচ মধু মিশিয়ে খেলে তাৎক্ষণিকভাবে শরীর ঠাণ্ডা হয় এবং হিট স্ট্রোক প্রতিরোধ হয়।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে-
আমে ভিটামিন সি, এ এবং বিভিন্ন ধরনের প্রায় ২৫টি ক্যারোটিনয়েডের মাত্রাতিরিক্ত ভালো সমন্বয়ের ফলে এটা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে খুবই কার্যকর।
শরীর পরিষ্কারে-
পাকা আমের পেস্টের সাথে সামান্য মধু এবং দুধ পুরো শরীরে ঘষলে ত্বক হবে কোমল ও মসৃণ।
মনোযোগ ও স্মৃতিশক্তি বাড়াতে-
এই ফলে রয়েছে উচ্চ মাত্রার গ্লুটামাইন এসিড নামক এটি প্রোটিন যা মনোযোগ ও স্মৃতিশক্তি বাড়াতে বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। লেখাপড়ায় অমনোযোগী বাচ্চাদের আম খেতে দেয়া উচিত।
রক্তশূন্যতা নিয়ন্ত্রণে-
আমের উচ্চমাত্রার আয়রন রক্তশূন্যতা দূর করার খুব ভালো একটি উপায়।
কিডনীর পাথর কমাতে-
চীনা ঔষধ শাস্ত্রে,কিডনীতে পাথর হওয়ার ঝুঁকি কমানোর জন্য আমের টক, মিষ্টি ও শীতলীকরণ শক্তিকে বিবেচনা করা হয়।
সঠিক নাস্তা হিসেবে-
নাস্তা হিসেবে চিপস, বিস্কিটের মতো অস্বাস্থ্যকর খাবার না খেয়ে সুস্বাদু আম খেতে পারেন।
পেটের টনিক হিসেবে-
রাতে ঘুমানোর আগে গরম পানিতে ১০/১৫টি পাতা দিয়ে ঢাকনা দিয়ে ঢেকে রেখে সকালে সেই পানিটা ছেকে খালি পেতে নিয়মিত খেলে পেটের জন্য তা খুবই ভালো।
সূত্রঃ হেলথ ইমপেক্ট নিউজ