সাগরে ভাসছে বাংলাদেশী-রোহিঙ্গা, ঠাঁই দিচ্ছে না কোনো দেশ
প্রকাশিত হয়েছে : ১০:১২:২৪,অপরাহ্ন ১৩ মে ২০১৫
নিউজ ডেস্ক::
মানবপাচারকারীদের খপ্পরে পড়ে সাগরে ভেসে বেড়াচ্ছেন হাজার হাজার বাংলাদেশী ও মিয়ানমারের রোহিঙ্গা মুসলিম। মালয়েশিয়া যাওয়ার স্বপ্ন নিয়ে অজানা পথে পাড়ি দেওয়া ওই হতভাগ্যদের আশ্রয় দিচ্ছে না কোনো দেশ। চালকহীন নৌযানে সাগরের বুকে মৃত্যুর দিন গুনছে তারা। সম্প্রতি থাইল্যান্ডের সীমান্তসংলগ্ন জঙ্গলে গোপন নির্যাতন শিবির ও বেশ কয়েকটি কবরের সন্ধান পায় দেশটির পুলিশ। এ ঘটনার পর থেকেই দেশটির আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মানবপাচারের সঙ্গে জড়িতদের ধরতে অভিযান চালাচ্ছে। থাই সরকারের এ পদক্ষেপের পর থেকে মানবপাচারকারীরা থাইল্যান্ডমুখো হচ্ছে না। তারা এখন বিদেশগামীদের নিয়ে ইন্দোনেশিয়া ও মালয়েশিয়ার উপকূলে ঘুরে বেড়াচ্ছে।
নির্যাতন শিবিরগুলো ব্যবহার করতে না পেরে পাচারকারীরা নৌযানে রেখেই বিদেশগামীদের নির্যাতন করে মুক্তিপণ আদায়ের চেষ্টা করছে। মাঝেমধ্যে নৌযানগুলো উপকূলীয় ভূমিতেও ভেড়ানো হচ্ছে। এমন অবস্থায় ইন্দোনেশিয়া ও মালয়েশিয়ার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা সমুদ্রাঞ্চলে টহল বাড়িয়ে দিয়েছে। এ পরিস্থিতিতে বিদেশগামীদের নৌযানে রেখেই পালিয়ে যাচ্ছে পাচারকারী ও ক্যাপ্টেনরা।
ঘরছাড়া ওই বিদেশগামীদের এখন শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নেওয়া ছাড়া কোনো উপায় নেই। কিন্তু এমন অবস্থায় তাদের জন্য ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’ হয়ে দাঁড়িয়েছে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর কর্তৃপক্ষের আচরণ। ইন্দোনেশিয়া ও মালয়েশিয়ার পাশাপাশি থাইল্যান্ডও অবৈধপথে আসা ওই বিদেশগামীদের আশ্রয় দিতে অস্বীকার করেছে।
ইন্দোনেশীয় সরকারের পক্ষ থেকে গত সোমবার নৌকায় অবস্থানকারী শতাধিক বিদেশগামীকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে। দেশটির নৌবাহিনীর মুখপাত্র মানাহান সিমোরাঙ্কির গত মঙ্গলবার বলেছেন, ‘তারা (বিদেশগামী) সাহায্য চাইছিল। তবে ইন্দোনেশিয়ায় যেতে চায়নি। তারা মালয়েশিয়ায় যাওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করে। এ কারণে তাদের খাদ্য, পানি ও চিকিৎসা সহায়তা দিয়ে ফেরত পাঠানো হয়েছে।’
ইন্দোনেশিয়া ওই বিদেশগামীদের মালয়েশিয়ার উদ্দেশে পাঠিয়ে দিলেও তাদের প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না বলে জানিয়েছে মালয়েশীয় কর্তৃপক্ষ। দেশটির নৌবাহিনীর ফার্স্ট এ্যাডমিরাল তান কককৈ গত মঙ্গলবার বলেছেন, ‘আমরা কোনো বিদেশী নৌযান প্রবেশ করতে দেব না।’
তবে নৌযানগুলো যদি ডুবে যায় বা এ ধরনের পরিস্থিতির সম্মুখীন হয় তাহলে নৌবাহিনীর পক্ষ থেকে তাদের সহায়তা করা হবে বলে জানিয়েছেন তিনি। কককৈ বলেছেন, প্রয়োজনীয় সাহায্য দেওয়ার পর তাদের ফেরত পাঠানো হবে।
এর আগে মালয়েশিয়ার উপকূলে উদ্ধার হওয়া এক হাজার ১৫৮ বিদেশগামীকে অনুপ্রবেশের দায়ে গ্রেফতার করে দেশটির পুলিশ। গ্রেফতারদের ৬৮২ জন বাংলাদেশী ও ৪৮৬ জন মিয়ানমারের নাগরিক। এর মধ্যে ৯৯৩ পুরুষ, ১০৪ নারী ও ৬১ শিশু রয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বার্তা সংস্থা এপি’র এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, থাইল্যান্ড সরকারও ইন্দোনেশিয়া ও মালয়েশীয় সরকারের মতো অবৈধ বিদেশগামীদের স্থান না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
এদিকে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর এ আচরণে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম)। সংস্থাটির পক্ষ থেকে দেশগুলোর প্রতি বিদেশগামীদের আশ্রয় দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।
সংস্থাটির মুখপাত্র জো লওরি গত মঙ্গলবার বলেছেন, ‘যদি এটা সত্য হয়ে থাকে, (বিদেশগামীবাহী নৌযান ফিরিয়ে দেওয়া) তাহলে তা হবে দুঃখজনক। ওই মানুষগুলোর আশ্রয় প্রয়োজন।’
তিনি আরও বলেছেন, ‘নৌযানে আরোহীদের জরুরি সাহায্য প্রয়োজন। অনেক যাত্রীই বেরিবেরি (ভিটামিন বি-১ এর অভাবজনিত রোগ) রোগে আক্রান্ত হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে।’
সংস্থাটি আরও বলেছে, মালাক্কা প্রণালী ও এর আশপাশে প্রায় ৮ হাজার বাংলাদেশী ও মিয়ানমারের রোহিঙ্গা নৌযানে ভাসমান অবস্থায় রয়েছে। তাদের অবস্থা বেশ শোচনীয়। আন্তর্জাতিক সংস্থাটির এ আহ্বানের পরও এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর কর্তৃপক্ষ কোনো ইতিবাচক পদক্ষেপ নেয়নি। কোনো ধরনের উদ্যোগ লক্ষ্য করা যাচ্ছে না বাংলাদেশ ও মিয়ানমার সরকারের পক্ষ থেকেও।
মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গা মুসলিমদের তাদের নাগরিক হিসেবে স্বীকার করে না। তাদের ভাষ্য অনুযায়ী, রোহিঙ্গারা বাঙালী। দেশটিতে বিভিন্ন সময় রোহিঙ্গাদের ওপর হত্যা, লুণ্ঠনসহ নানা নির্যাতন চালিয়ে আসছে উগ্রপন্থী বৌদ্ধরা। ওই ঘটনায় দেশটির সরকারও জড়িত বলে অভিযোগ রয়েছে। রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব দানে মিয়ানমার সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে আসছে জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন সংস্থা ও রাষ্ট্র।
কোনো রকমে বেঁচে থাকার উদ্দেশ্যে সমুদ্র পাড়ি দেওয়া রোহিঙ্গাদের সঙ্গে বাংলাদেশীদের অবস্থাও করুণ। মালয়েশিয়ায় চাকরি দেওয়ার প্রলোভনে পাচারকারীরা বাংলাদেশীদের নিয়ে যায়। বর্তমানে থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া ও মালয়েশিয়ায় অনেক বাংলাদেশিকে উদ্ধারের খবর পাওয়ার পরও বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে তাদের ফিরিয়ে আনতে কোনো ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।