রাত পোহালেই ২৯৯ আসনে ভোট
প্রকাশিত হয়েছে : ২:০৭:০০,অপরাহ্ন ০৭ জানুয়ারি ২০২৪
মো. আবদুল্লা আল আমীন
রাজনীতির উত্তাপ ছাপিয়ে চলে এসেছে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মোক্ষম সময়। রাত পোহালেই ভোট। সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত বিরতিহীন চলবে ভোটগ্রহণ। তাইতো শহর থেকে গ্রাম, নগর থেকে বন্দর সব জায়গায় শুধু ভোট-উৎসবের আমেজ।
দীর্ঘ পাঁচ বছর পর জনপ্রতিনিধি বেছে নেয়ার সুযোগ আসায় ৭ জানুয়ারি ভোট দেয়ার মাধ্যমে নিজের অধিকার বুঝে নিতে চান সাধারণ মানুষ। কারো ভয়ভীতি কিংবা চোখরাঙানিতে দমে না গিয়ে নির্বাচন করবেন পছন্দের প্রতিনিধি। আর ভোট শেষে কে হচ্ছেন জনপ্রতিনিধি, তা নিয়ে অপেক্ষায় রয়েছেন প্রার্থীরাও।
নির্বাচনের এই মুহূর্তে চোখ সবার টেলিভিশনের পর্দায় কিংবা নিউজ পোর্টালগুলোতে। সবাই যেন রাজনীতিসচেতন। মিস করতে চাইছেন না খুঁটিনাটি কোনো কিছু। নিজ এলাকার ভোটের তথ্যের বাইরেও আগ্রহ সারা দেশের সব কটি আসনে। প্রত্যাশা ভোট হোক শান্তিপূর্ণ। ভোট হোক নিরাপদ। নির্বিঘ্ন।
তরুণ কিংবা নতুন ভোটারদেরও আবেগ-অনুভূতির কমতি নেই। সারা দেশে ১ কোটি ৫৪ লাখ ৫২ হাজার নতুন ভোটার মুখিয়ে আছেন ৭ জানুয়ারির জন্য।
নওগাঁ-২ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী আমিনুল ইসলাম মারা যাওয়ায় ওই আসনের নির্বাচন স্থগিত করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ফলে একযোগে ২৯৯টি আসনে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। ভোট উৎসবমুখর ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক করতে সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে ইসি।
নির্বাচন উপলক্ষে ৫ জানুয়ারি মধ্যরাত ১২টা থেকে ৮ জানুয়ারি মধ্যরাত পর্যন্ত মোটরসাইকেল চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। তবে ইসির স্টিকার লাগানো মোটরসাইকেল এই নিষেধাজ্ঞার আওতামুক্ত থাকবে।
এ ছাড়া নির্বাচন উপলক্ষে ভোট গ্রহণের জন্য নির্ধারিত দিবসের পূর্ববর্তী মধ্যরাত অর্থাৎ ৬ জানুয়ারি রাত ১২টা থেকে ৭ জানুয়ারি রাত ১২টা পর্যন্ত কতিপয় যানবাহন চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। এসব যানবাহনের মধ্যে রয়েছে ট্যাক্সি ক্যাব, পিকআপ, মাইক্রোবাস ও ট্রাক।
ইসি দেয়া তথ্যানুযায়ী, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ২৯৯টি সংসদীয় আসনে ১ হাজার ৯৭০ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। ইসিতে নিবন্ধিত ৪৪টি রাজনৈতিক দলের মধ্যে এই নির্বাচনে ২৮টি রাজনৈতিক দলের হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ১ হাজার ৫৩৪ জন প্রার্থী। আর স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ভোটের মাঠে আছেন ৪৩৬ জন।
রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ২৬৬ জন, জাতীয় পার্টির ২৬৫, তৃণমূল বিএনপির ১৩৫ জন, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) ৬৬ জন, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির ১২২ জন, জাতীয় পার্টির (জেপি) ১৩ জন, বিকল্পধারা বাংলাদেশের ১০ জন প্রার্থী রয়েছেন।
নির্বাচনে নারী প্রার্থী হিসেবে রাজনৈতিক দল ও স্বতন্ত্র মিলিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ৯০ জন। আর ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী ও অন্যান্য মিলে ৭৯ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
২৯৯ আসনে মোট ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা ৪২ হাজার ২৪টি। এসব কেন্দ্রে ভোটকক্ষ ২ লাখ ৬১ হাজার ৯১২টি। সর্বশেষ প্রকাশিত তালিকা অনুযায়ী, এবারের নির্বাচনে মোট ভোটার ১১ কোটি ৯৬ লাখ ৮৯ হাজার ২৮৯ জন। যার মধ্যে পুরুষ ভোটারের সংখ্যা ৬ কোটি ৭৬ লাখ ৯ হাজার ৭৪১ ও নারী ভোটারের সংখ্যা ৫ কোটি ৮৯ লাখ ১৮ হাজার ৬৯৯ জন। এ ছাড়া সারা দেশে এবার তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার আছেন ৮৪৯ জন।
এবারই প্রথমবারের মতো ভোটের দিন সকালে কেন্দ্রে ব্যালট পেপার পাঠানো হচ্ছে। শুধু দুর্গম অঞ্চলের ২ হাজার ৯৬৪টি কেন্দ্রে ব্যালট পাঠানো হয় ভোটের আগের দিন।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করবেন স্থানীয় ২০ হাজার ৭৭৩ জন পর্যবেক্ষক। এ ছাড়া দুই শতাধিক বিদেশি পর্যবেক্ষক থাকছেন। এদের মধ্যে থাকছেন বিদেশি গণমাধ্যমকর্মীও।
নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সিভিল প্রশাসনকে সহায়তা দেয়ার জন্য ৩ জানুয়ারি থেকে সেনাবাহিনী ৬২টি জেলায় নিয়োজিত হয়েছে। উপকূলীয় দুটি জেলাসহ (ভোলা ও বরগুনা) সর্বমোট ১৯টি উপজেলায় বাংলাদেশ নৌবাহিনী দায়িত্ব পালন করবে। সমতলে সীমান্তবর্তী ৪৫টি উপজেলায় বিজিবি এককভাবে দায়িত্ব পালন করবে এবং সীমান্তবর্তী ৪৭টি উপজেলায় সেনাবাহিনী বিজিবির সঙ্গে এবং উপকূলীয় চারটি উপজেলায় কোস্টগার্ডের সঙ্গে সমন্বয়ের মাধ্যমে যৌথভাবে দায়িত্ব পালন করবে। বাংলাদেশ বিমানবাহিনী হেলিকপ্টারের সহায়তায় দুর্গম পার্বত্য অঞ্চলের ভোটকেন্দ্রগুলোতে প্রয়োজনীয় হেলিকপ্টার সহায়তা দেবে।
এই নির্বাচনে ১ লাখ ৮২ হাজার ৯১ জন পুলিশ ও র্যাব সদস্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় মোতায়েন করা হয়েছে।
২৯ ডিসেম্বর থেকে সারা দেশে ৪৮৭টি বেজ ক্যাম্পে ১ হাজার ১৫৫ প্লাটুন বিজিবি নির্বাচনকালীন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে। সারা দেশে নাশকতা এড়াতে বিস্ফোরকদ্রব্যের ওপর বিশেষভাবে প্রশিক্ষিত বিজিবি ডগ স্কোয়াড দেশের বিভিন্ন স্থানে কাজ করছে। একই সঙ্গে মাঠে কাজ করছে বিজিবির বিশেষায়িত ফোর্স র্যাপিড অ্যাকশন টিম (র্যাট)।
এ ছাড়া বিজিবির কুইক রেসপন্স ফোর্সও প্রস্তুত রয়েছে, যারা বিজিবির অত্যাধুনিক হেলিকপ্টারের মাধ্যমে দেশের যে কোনো প্রান্তে যে কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি মোকাবিলার সক্ষমতা রাখে।
নির্বাচনে নিরাপত্তা রক্ষায় ৫ লাখ ৫ হাজার ৭৮৮ জন সাধারণ আনসার ও ভিডিপি সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত সবাই মাঠে থাকবে।
এদিকে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে কেন্দ্রীয় মনিটরিং ও কো-অর্ডিনেশন সেল গঠন করেছে। নির্বাচনকালীন সহিংসতায় অগ্নিকাণ্ডসহ যে কোনো ধরনের দুর্ঘটনা মোকাবিলায় এ মনিটরিং সেল গঠন করা হয়েছে।
গুরুত্বপূর্ণ ভোটকেন্দ্রে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ২ লাখ ১৫ হাজার সদস্য মোতায়েন থাকবে। সাধারণ ভোটকেন্দ্রে ৪ লাখ ৭২ হাজার সদস্য মোতায়েন থাকবে। প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে ১৫ থেকে ১৭ জনের নিরাপত্তা সদস্যের একটি দল মোতায়েন করা হবে।
নির্বাচন কমিশন জানায়, মেট্রোপলিটন এলাকার বাইরে অস্ত্রধারী দুজন পুলিশ, অস্ত্রধারী একজন আনসার, অস্ত্র বা লাঠিধারী একজন আনসার, ১০ জন আনসার, লাঠি হাতে একজন বা দুজন গ্রামপুলিশ সদস্যসহ ১৫-১৬ জনের একটি দল সব সাধারণ ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তা দেবে। তবে প্রতি গুরুত্বপূর্ণ ভোটকেন্দ্রের ক্ষেত্রে অস্ত্রসহ তিনজন পুলিশসহ ১৬-১৭ জনের দল থাকবে।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, ‘সর্বাধিক সংখ্যক প্রার্থী এবারের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে। উৎসবমুখর ভোট হবে এটাই আশা। নির্ভয়ে কেন্দ্রে এসে ভোটাধিকার প্রয়োগে ভোটারদের আহ্বান জানাচ্ছি।’
সিইসি মনে করেন, এবারের নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হবে। যে কোনো মূল্যে নির্বাচনকে সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করতে হবে। এ জন্য ইসির পক্ষ থেকে সকল প্রস্তুতি শেষ হয়েছে। ভোটাররা যাতে কেন্দ্রে এসে নির্ভয়ে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করে নিরাপদে বাড়ি ফিরে যেতে পারেন, এ জন্য পর্যাপ্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।