ভন্ড পীরের অপচিকিৎসায় সাপে কাটা রোগীর মৃত্যু
প্রকাশিত হয়েছে : ২:২২:৫৯,অপরাহ্ন ১৩ মার্চ ২০১৫
নিউজ ডেস্ক::
কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার যাত্রাপুর গ্রামে শামসুল হক নামে এক ভন্ড পীরের অপচিকিৎসায় বিষাধর সাপে দংশিত হোসেন মিয়া (৪০) নামের এক মাছ ব্যবসায়ীর মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। নিহত হোসেন মিয়া যাত্রাপুর পশ্চিম পাড়া গ্রামের মৃত সুন্দর আলীর ছেলে।এ বিষয়ে মৃত হোসেন মিয়ার স্ত্রী বকুল বাদী হয়ে বৃহস্পতিবার মুরাদনগর থানায় ভন্ডপীর সামছুল হক সাম মিয়ার বিরুদ্ধে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। এ ঘটনায় এলাকাবাসীর মধ্যে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। যে কোন সময় ঐ ভন্ড পীরের আস্তানায় হামলার আশংকা করছে স্থানীয়রা।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বুধবার সন্ধ্যা যাত্রাপুর গ্রামের মাছ ব্যবসায়ী হোসেন মিয়া বাড়ীর পার্শ্ববর্তী বিলে ইরি ধানের জমিতে পানি সেচের ড্রেন পরিষ্কার করাকালীন সময়ে সেখানে তার হাতে বিষধর সাপে কামড় দেয়। পরে স্থানীয় লোকজন তার হাতে কয়েকটি বাঁধন দিয়ে তাকে উদ্ধার করে বাড়ীতে নিয়ে গেলে পার্শবর্তী চৈনপুর গ্রামের ভন্ডপীর শামছুল হক শামমিয়াকে আহত হোসেনের চিকিৎসার নামে কিছু ঝাঁড়-ফুঁক দিয়ে হাতের বাধন খুলে দিয়ে তাকে দুধ মাখা ভাত খাইয়ে পুনরায় আবার ঝাঁড়-ফুঁক দিয়ে বিষ চলে গেছে বলে জানায়। ভন্ডপীর চলে যাওয়ার কিছুক্ষন পরেই হোসেন মিয়ার অবস্থার অবনতি হতে থাকে। অবস্থা বেগতিক দেখে তাকে দ্রুত মুরাদনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষনা করেন। এ ঘটনায় নিহতের পরিবারে শোকের ছায়া নেমে আসে।
মুরাদনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এর কর্তব্যরত ডাক্তার জানান সাধারন মানুষ নানান কুসংস্কার বিশ্বাস করে এবং তারা বিষধর সাপে কামর দিলে বিভিন্ন ওঝা-কবিরাজের কাছে নিয়া ঝাঁড়- ফুঁক দিয়ে চিকিৎসার নামে অপচিকৎসা করে ফলে বাংলাদেশের আনেক মানুষের অকাল মৃত্যু ঘটে। ঝাঁড়- ফুঁক দিয়ে কখনোই বিষধর সাপের বিষ নামানো যায় না। তিনি আরো জানান সাপকে প্রধানত দুই ভাগে ভাগ হয়।
সাধারন সাপে(যে সকল সাপ বিষধর নয়) কাঁমড় দিলে কিছুই হয়না ,২। বিষধর সাপ। প্রায় ক্ষেত্রে দেখা যায় সাধারন সাপে কাঁমড় দিলে ওঝা-কবিরাজের কাছে নিয়া ঝাঁড়- ফুঁক দিয়ে চিকিৎসার দেয় । ওঝা-কবিরাজের ঝাঁড়- ফুঁক দিয়ে বলে ভাল হয়ে গেছে তখন গ্রামের মানুষ বিশ্বাস করে ওঝা-কবিরাজের ঝাঁড়- ফুঁক ফলে রোগীটি ভাল হয়ে গেছে।প্রকৃতপক্ষে এই ধরনের সাধারন সাপে কাঁমড় দিলে মানুষের কিছুই হয়না কিন্তু বিষধর সাপে কাঁমড় দেওয়া রোগী ওঝা-কবিরাজের ঝাঁড়- ফুঁক দিয়ে কখনোই ভাল করতে পারে না।তাই আমি বলবো বিষধর সাপে কাঁমড় দিলে কালক্ষেপন না করে সাথে স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা দিতে হবে। বিষধর সাপে কাটলে সাধারনত একপাশে ২টি দাঁতের কামঁড় বসানো অবস্থায় দেখা যায় এবং সাধারন সাপে কাটলে অনেক গুলো দাঁতের কামড় থাকে বলে জানান।
এ ঘটনায় মৃত হোসেন মিয়ার স্ত্রী বকুল বাদী হয়ে মুরাদনগর থানায় ভন্ডপীর সামছুল হক সাম মিয়ার বিরুদ্ধে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। ঘটনার পর থেকে পীর ছামছুল হক পলাতক রয়েছে। ক্ষোভে ফূসে উঠেছে এলাকার সর্বস্তরের জনসাধারন। ভন্ডপীরের আস্তানায়ও হামলার আশংকা করা হচ্ছে। এব্যাপারে মুরাদনগর থানার অফিসার ইনচার্জ(ওসি) মিজানুর রহমান জানান, নিহতের স্ত্রী বকুল একটি অভিযোগ দায়ের করেছে । আইন অনুযায়ী যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।