গ্যাসের দাম ১৩২% বৃদ্ধির প্রস্তাব হাস্যকর
প্রকাশিত হয়েছে : ১০:১৯:১৬,অপরাহ্ন ২১ মার্চ ২০১৯
নিউজ ডেস্ক:: শিল্প কারখানায় ব্যবহৃত গ্যাসের দাম এক লাফে ১৩২ শতাংশ বৃদ্ধির প্রস্তাবকে অযৌক্তিক এবং হাস্যকর বলে মন্তব্য করেছেন বস্ত্র ও পোশাক খাতের উদ্যোক্তারা। তাদের মতে, এত বেশি হারে জ্বালানির দাম বাড়ানোর নজির পৃথিবীর আর কোনো দেশে নেই। অতীতে বাংলাদেশেও এক দফায় এত বাড়ানো হয়নি। এভাবে গ্যাসের দাম বাড়ালে বস্ত্র ও পোশাক খাত বাঁচিয়ে রাখা যাবে না।
বুধবার বস্ত্র ও পোশাক খাতের তিন সংগঠনের নেতারা এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন। গ্যাসের দর বৃদ্ধির প্রস্তাব কার্যকর হলে বস্ত্র ও পোশাক খাতে কী ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে, তা তুলে ধরতেই এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। তৈরি পোশাক খাতের ওভেন (শার্ট, প্যান্ট) পণ্য উৎপাদন ও রফতানিকারক উদ্যোক্তাদের সংগঠন বিজিএমইএ, একই খাতের নিট (গেঞ্জি জাতীয়) পণ্য উৎপাদন ও রফতানিকারক উদ্যোক্তাদের সংগঠন বিকেএমইএ ও বস্ত্র খাতের মালিকদের সংগঠন বিটিএমএ যৌথভাবে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে। রাজধানীর কারওয়ান বাজারে বিজিএমইএ কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে তিন সংগঠনের সভাপতিসহ নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
দর বাড়ানোর দাবি কেন হাস্যকর- সে ব্যাখ্যায় নেতারা বলেছেন, আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম ক্রমেই কমে আসছে।অতিসম্প্রতি তিতাস তার শেয়ারহোল্ডারদের ৩৫ শতাংশ মুনাফা দিয়েছে। আবার সরকারি এই কোম্পানি ভর্তুকি দিয়ে চলছে- এ রকম স্ববিরোধী প্রচারণাও চালানো হচ্ছে।
নেতারা বলেছেন, প্রস্তাবিত দরে গ্যাসের মূল্য পরিশোধ করতে হলে শিল্পের প্রবৃদ্ধি ও বিকাশ রুদ্ধ হবে। ভয়াবহ বিপর্যয় নেমে আসবে বস্ত্র ও পোশাক খাতে। এ প্রসঙ্গে সরকারের মনোযোগ আকর্ষণ করে নেতারা বলেন, এমন কোনো পদক্ষেপ নেবেন না- যাতে বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত হয়, শ্রমিক কাজ হারায়, সর্বোপরি দেশের অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। এ প্রসঙ্গে তারা মনে করিয়ে দেন, মোট রফতানি আয়ের ৮৪ শতাংশ আসে বস্ত্র ও পোশাক খাত থেকে। প্রায় ৪৫ লাখ শ্রমিকসহ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে প্রায় তিন কোটি মানুষ এই খাতের ওপর নির্ভরশীল। এসব বিবেচনায় পোশাক ও বস্ত্র খাতের অস্তিত্বের স্বার্থে এই দুই খাতকে গ্যাসের বর্ধিত মূল্য থেকে অব্যাহতি চেয়েছেন তারা।
সংবাদ সম্মেলনে বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, তিতাসসহ গ্যাস বিতরণ কোম্পানিগুলোর প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে নিয়ন্ত্রক সংস্থা এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) সম্প্রতি এ নিয়ে গণশুনানি করেছে। এতে শিল্প খাতে প্রতি ঘনফুট গ্যাস ৭ টাকা ৭৬ পয়সা থেকে দ্বিগুণেরও বেশি বাড়িয়ে ১৮ দশমিক ০৪ টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে। অর্থাৎ দর বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে ১৩২ শতাংশ। এতে করে পোশাক খাতে অতিরিক্ত উৎপাদন ব্যয় বাড়বে ৫ শতাংশ। এই প্রস্তাব শিল্পের বিকাশ ও প্রবৃদ্ধির সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
বিজিএমইএ সভাপতি এ প্রসঙ্গে পোশাক খাতের জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক চাপে থাকার কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, বিশ্ববাজারে পোশাকের দর না বাড়লেও প্রতিবছর গড়ে ৮ শতাংশ হারে উৎপাদন ব্যয় বাড়ছে।
নতুন কাঠামোয় মজুরি বৃদ্ধির কারণে উৎপাদন ব্যয় বেড়েছে ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ। ইউরোপ এবং আমেরিকাসহ সব বাজারে পোশাকের দর কমেছে যথাক্রমে প্রায় ৭ এবং ৪ শতাংশ। এ সময় মুদ্রার প্রতিকূল বিনিময় হার, ব্যাংক ঋণের উচ্চ সুদ ও বিদেশি উৎস থেকে ঋণ গ্রহণের সুবিধা বন্ধ হয়ে যাওয়াসহ বিভিন্ন সমস্যার কথা তুলে ধরেন তিনি।
সব শেষে তিনি বলেন, ‘সরকারের কাছে আমাদের অনুরোধ, শুধু একটি খাতের অধিক মুনাফা বিবেচনা না করে দেশের সামগ্রিক উৎপাদনশীল খাতগুলোর স্বার্থ বিবেচনায় নিন। পোশাক ও বস্ত্র খাতকে টিকিয়ে রাখার জন্য এ খাতকে গ্যাসের বর্ধিত মূল্য থেকে অব্যাহতি দিন।’
পৃথক লিখিত বক্তব্যে বিটিএমএ সভাপতি মোহাম্মদ আলি খোকন বলেন, গত ১০ বছরে ছয়বার গ্যাস ও বিদ্যুতের মূল্য ৪০০ শতাংশ বৃদ্ধি করা হয়েছে। গত দুই দফায় গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির কারণে সুতা উৎপাদন খরচ কেজিতে বেড়েছে সাড়ে আট টাকা বা ৯ সেন্ট। এতে সুতা বিক্রি করা কঠিন হয়ে পড়েছে। কেজিতে ৩০ সেন্ট লোকসান দিয়ে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন কারখানা মালিকরা। এতে এক ধরনের বিপর্যয় চলছে বস্ত্র খাতে। নতুন করে গ্যাসের দাম বৃদ্ধির প্রস্তাবনায় উৎপাদন খরচ নতুন করে ৩৩ টাকা বা ৩৯ সেন্ট বাড়বে। এতে বস্ত্র খাতে কী ধরনের পরিস্থিতি অপেক্ষা করছে, সেটা সহজেই অনুমান করা যায়। তিনিও গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির প্রস্তাব প্রত্যাহারের জন্য অনুরোধ জানান।
বিকেএমইএর ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মনসুর আহমেদ বলেন, মজুরি বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন কারণে এ বছর বস্ত্র ও পোশাক খাত সংকটে আছে। এর মধ্যে ১৩২ শতাংশ হারে গ্যাসের দর বৃদ্ধির প্রস্তাব কার্যকর হলে মহামারী নেমে আসবে। এ অবস্থায় কারখানা বন্ধ করে দেওয়ার সুযোগ (এক্সিট প্ল্যান ) চান তারা।
এ সময় সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে নেতারা বলেন, নিরবচ্ছিন্ন এবং মানসম্পন্ন গ্যাস পাওয়া গেলে যুক্তিসঙ্গত হারে মূল্য দিতে রাজি আছেন তারা।