উপজেলা নির্বাচন: লড়াই হবে নৌকা বনাম আ. লীগে
প্রকাশিত হয়েছে : ১১:০৮:৪০,অপরাহ্ন ০৪ মার্চ ২০১৯
নিউজ ডেস্ক:: এবারই প্রথম দলীয়ভাবে কয়েকধাপে সারাদেশে অনুষ্ঠিত হচ্ছে উপজেলা নির্বাচন। তবে, দলীয়ভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলেও নির্বাচনী মাঠে নেই ৪১ দল। ফলে নির্বাচন নিয়ে নেই কোনো বাড়তি উৎসবের আমেজ। বিএনপি উপজেলা নির্বাচনকে প্রত্যাখ্যান করলেও জাতীয় পার্টি এই নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে। তবে, অধিকাংশ উপজেলায় দলীয় প্রার্থী নিয়ে সংকটে রয়েছে দলটি। অবশ্য, অধিকাংশ উপজেলায় নৌকা প্রতিকের বিপরীতে নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন আওয়ামী লীগের একাধিক প্রার্থী। সব মিলিয়ে অনেকটাই নিরুত্তাপ ভাবেই অনুষ্ঠিত হচ্ছে ৫ম বারের মতো উপজেলা নির্বাচন।
বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটে সংরক্ষিত সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী দেশে নিবন্বিত রাজনৈতিক দল রয়েছে ৪৩ টি। নিবন্বিত দলগুলোর মধ্যে আওয়ামী লীগ এবং জাতীয়পার্টি ছাড়া আর কোনো দলের প্রার্থী নেই এবারের উপজেলা নির্বাচনে। এই চিত্র গোটা সিলেট বিভাগের। এমনকি একাদশ জাতিয় সংসদ নির্বাচনে সিলেট-২ আসনে গণফোরাম উদীয়মান সূর্য প্রতিক নিয়ে ১ টি আসন লাভ করলেও উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী নেই তাদের। আ. লীগের নের্তৃত্বাধীন মহাজোটের শরিক অন্যান্য দলগুলোরও অংশ নেই উপজেলা নির্বাচনে। তবে, মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে বাংলাদেশের ওয়ার্কাস পার্টি থেকে আবদুল আহাদ মিনার নামে একজন প্রার্থী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। বিভাগের অন্যান্য উপজেলার ২/১ টিতে বিচ্ছিন্নভাবে অন্যান্য দলের অংশ নেওয়ার খবরও পাওয়া গেছে।
এদিকে, দলীয়ভাবে নিজ নিজ জেলা থেকে উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য কেন্দ্রে তালিকা প্রেরণ করে আওয়ামী লীগ। জেলার পাঠানো তালিকা যাচাই বাছাই শেষে কেন্দ্র থেকে প্রতি উপজেলায় ১জনকে দলীয় প্রার্থী হিসেবে নৌকা প্রতিক তুলে দেওয়া হয়। কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ ছোঁড়ে অনেক প্রার্থীই বিদ্রোহী হিসেবে প্রতিযোগীতা করছেন উপজেলা নির্বাচনে। দলীয় সিদ্ধান্তের বিপরীতে প্রার্থীতা প্রত্যাহার না করায় স্বস্থিতে নেই নৌকাপ্রতিকের আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীরা। এক উপজেলায় নৌকা প্রতিকের বিপরীতে আওয়ামী লীগের একাধিক প্রার্থী ও রয়েছেন নির্বাচনী মাঠে। ফলে একাদশ সংসদ নির্বাচনে দলীয়ভাবে নিরঙ্কুশ বিজয় অর্জনের পর ৫ম উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে একক জয় নিয়ে শংকায় আছে দলটি।
এদিকে কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি অংশ নিচ্ছেনা উপজেলা নির্বাচনে। তবে,দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে অনেক প্রার্থী ব্যক্তিগত ভাবে অংশ নিচ্ছে উপজেলা নির্বাচনে।তবে, সিলেট জেলা বিএনপি নেতৃবৃন্দ জানিয়েছেন, দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারীদের জন্য শাস্তির খরগ আসছে শীঘ্রই। বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টিও প্রত্যাখ্যান করেছে উপজেলা নির্বাচন। বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল বাসদও অংশ নিচ্ছেনা নির্বাচনে। বিএনপি ছাড়া অন্যান্য দলগুলোতে রয়েছে ব্যাপক প্রার্থী সঙ্কট। সবকিছু মিলিয়ে চলতি উপজেলা নির্বাচনে মুল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে আওয়ামী লীগ বনাম নৌকা প্রতিকের মধ্যে।
তবে, গেলো সংসদ নির্বাচনে দলীয় বিদ্রোহী প্রার্থীদের বিরুদ্ধে শাস্তির খরগ নির্ধারিত থাকলেও এবার বাড়তি সুবিধা পাচ্ছেন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীরা। নির্বাচনী মাঠে প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দল না থাকায় বিদ্রোহী প্রার্থীদের দিয়ে মাঠ গরম রাখতে চায় আওয়ামী লীগ। এর মধ্য দিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচন এবং ভোটের আমেজ ধরে রাখতে চায় দলটি।
৫ম উপজেলা পরিষদ নির্বাচন নিয়ে মন্তব্য জানতে চাইলে বাংলাদেশের ওয়ার্কাস পার্টি কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য কমরেড সিকান্দর আলী বলেন, নির্বাচনে অংশ নেওয়া প্রতিটি রাজনৈতিক দলের জন্য অপরিহার্য্য। অংশগ্রহণ মূলক নির্বাচন ব্যতিত গণতন্ত্র প্রতিষ্টা করা যায়না। নির্বাচন কমিশন নির্বাচনের মাধ্যমে যথারীতি সাংবিধানিক দায়িত্ব পালন করবে। তিনি বলেন, নির্বাচনে কোন দল অংশ গ্রহণ করলো তার চেয়ে বড় কথা হলো নির্বাচন কতোটুকু অবাধ ও শান্তিপূর্ণ হলো। তিনি উপজেলা নির্বাচনে মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলায় নিজ দলের প্রার্থী অংশ নিয়েছে বলে জানান।
বাংলাদেশের কমিউনিষ্ট পার্টি সিলেট জেলা সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট আনোয়ার হোসেন বলেন, আজ্ঞাবহ এই নির্বাচন কমিশনের অধিনে কোনো নির্বাচনই সুষ্টু এবং অংশ গ্রহণ মূলক হতে পারেনা। তাই বাংলাদেশের কমিউনিষ্ট পার্টি উপজেলা নির্বাচন বর্জন করেছে।
এ ব্যাপারে মন্তব্য জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সিলেট জেলা ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এডভোকেট লুৎফুর রহমান এবং সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব শফিকুর রহমান চৌধুরীর মোবাইল ফোনে একাধিকবার ফোন করেও মন্তব্য আদায় করা সম্ভব হয়নি।
তবে জেলা যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ সুজাত আলী বলেন, জেলা থেকে বাছাই করে প্রাথমিক একটি লিস্ট কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে-যেখানে প্রতি উপজেলায় ২ থেকে ৩ জন প্রার্থীর নাম ছিলো। সেখান থেকে কেন্দ্র বাছাই করে প্রতি উপজেলায় ১জনকে মনোনয়ন করে উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী হিসেবে চুড়ান্ত করেছে। তিনি বলেন, কেউ দলের সিদ্ধান্তের বাহিরে গিয়ে প্রার্থী হলে সেই প্রার্থীর বিরুদ্ধে কেন্দ্রই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে। তবে বিদ্রোহী প্রার্থী মাঠে থাকায় পরাজয়ের আশঙ্কাকেও উড়িয়ে দিচ্ছেননা তিনি।
তিনি বলেন, এর মধ্যে দিয়ে জনগণের অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে প্রতিযোগীতামূলক একটি নির্বাচন এবং স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় নিরপেক্ষ ভাবে সম্পন্ন হবে বলে তিনি মনে করেন। তিনি বলেন, ‘আমি দলীয় আনুগত্যের কারণেই দলীয় সিদ্ধান্ত মেনে উপজেলা নির্বাচন থেকে সড়ে দাঁড়য়েছি’।
দলের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এডভোকেট মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ এ বিষয়ে বলেন, দলীয় সিদ্বান্ত মেনে চলা সকল দলীয় কর্মীর জন্য বাধ্যতামূলক। যারা দলীয় সিদ্ধান্ত বিরোধীতা করে দল যথারীতি তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। তিনি বলেন, বাংলাদেশের একটি বৃহৎ দল হিসেবে প্রতি উপজেলায় দলের একাধিক প্রার্থী থাকতেই পারে। তবে, আমরা চাই দেশের সুসংহত গণতন্ত্র ও সংবিধান রক্ষায় সকল দলের অংশ গ্রহণে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হোক।