ভাইবার, ট্যাঙ্গো, হোয়াটসঅ্যাপ, মাইপিপল ও লাইন বন্ধ, ফেসবুক চালু কেন ?
প্রকাশিত হয়েছে : ৫:৪৮:০৬,অপরাহ্ন ২১ জানুয়ারি ২০১৫
তথ্য-প্রযুক্তি ডেস্ক :: ফ্রি-কল, চ্যাট ও কনটেন্ট আদান প্রদানের সফটওয়্যার ভাইবার, ট্যাঙ্গো, হোয়াটসঅ্যাপ, মাইপিপল ও লাইন – এই সবক’টিতে গনপ্রজাতন্ত্রী(?) বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক তালা ঝুলিয়ে দেবার পর ফেসবুক, স্কাইপ, ইয়াহু ম্যাসেঞ্জার, গুগল টক বা হ্যাংআউটস, মিগ-৩৩ ও নিমবাজের মতো একই ক্যাটাগরির সফটওয়্যারগুলো চালু রাখার যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিভিন্ন দেশের সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার এবং নিরাপত্তা বিশ্লেষক ও বিশেষজ্ঞরা। অবশ্য এই প্রশ্ন তোলার পাশাপাশি নেপথ্যের মূল কারণ তথা বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় আনাড়িপনার পোস্টমর্টেম চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন তাঁরা। বাংলাদেশে বিগত দিনে প্রতিটি সরকার কর্তৃক সিক্রেট সার্ভিসকে ‘রাজনৈতিক হাতিয়ার’ হিসেবে ব্যবহারের বিষয়টিও সামনে এসেছে তাঁদের বিশ্লেষণে।
পৃথিবীর নানা প্রান্তে বেশ কিছু দেশের গোয়েন্দা বিভাগের সাথে নিবিড়ভাবে কাজ করেন আইটি বিশেষজ্ঞ উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মেধাবী বাংলাদেশী, যাঁরা চাকরির শর্ত অনুযায়ী কখনোই প্রকাশ্যে এমনকি সংশ্লিষ্ট দেশে বসবাসরত বাংলাদেশীদের কাছেও তাদের ঐ পরিচয়টি প্রকাশ করতে পারেন না। তেমনি কয়েকজনের সাথে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। ফ্রি-কল, চ্যাট ও কনটেন্ট আদান প্রদানের সফটওয়্যারগুলো কেন বাংলাদেশ সরকারের ঘুম হারাম করে দিয়েছে ? – এমন প্রশ্ন করা হলে গোয়েন্দা সংশ্লিষ্ট আইটি এক্সপার্টদের অনেকেই বেশ লজ্জ্বা সহকারে স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন রানা প্লাজা ট্র্যাজেডি, পদ্মায় পিনাক লঞ্চডুবি এমনকি সর্বশেষ ঢাকার একটি ভূগর্ভস্থ পাইপ থেকে শিশু জিয়াদের উদ্ধার অভিযানে রাষ্ট্রীয় সীমাবদ্ধতার কথা।
যুক্তরাজ্যের গোয়েন্দা বিভাগের সাথে কাজ করেন এমন একজন আইটি বিশেষজ্ঞ নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, “প্রথমেই আপনাকে যে কঠিন সত্যটি মেনে নিতে হবে তা হচ্ছে, বাংলাদেশে ডিবি এসবি সিআইডি এনএসআই ডিজিএফআই যাই বলুন না কেন – কোন এজেন্সিরই কিন্তু আন্তর্জাতিক মানদন্ডে উন্নীত হবার মতো প্রযুক্তিগত সামর্থ যেমন নেই, তেমনি অর্জিত অভিজ্ঞতাও ২০১৫ সালে এসে অনেকটাই অচল। তবে বাংলাদেশের উপরোক্ত এজেন্সিগুলোতে দেশপ্রেমিক কিছু লোকজন ঠিকই আছেন যাঁরা দেশের কল্যানে ভালো কিছু করতে চাইলেও গনতান্ত্রিক কাঠামো মজবুত না হওয়ায় এবং প্রশাসনযন্ত্রের প্রতিটি সেক্টরে রাজনৈতিক লেজুড়বৃত্তির সাথে তাল না মেলালে চাকরী হারাবার ভয়ে নিজেদের তাঁরা গুটিয়ে রাখছেন”।
“ঢাল নাই তলোয়ার নাই নিধিরাম সর্দার” – বাংলাদেশের প্রতিটি গোয়েন্দা বিভাগের এমন দৈন্যদশার কথা বারবার উল্লেখ করেন বিভিন্ন দেশের গোয়েন্দা বিভাগে পেশাগত দায়িত্বে থাকা বাংলাদেশী ও বাংলাদেশী বংশোদ্ভূতরা। রানা প্লাজার মতো ভয়াবহ ট্র্যাজেডি ও পদ্মায় পিনাক লঞ্চডুবির পর অতি সাম্প্রতিককালে ঢাকার রেলকলোনীতে ভূগর্ভস্থ পাইপে নিহত শিশু জিয়াদের উদ্ধার অভিযানের সময় চরম সীমাবদ্ধতা নিয়ে উদ্ভাসিত হয় বাংলাদেশের ‘দমকল বাহিনী’ তথা ফায়ার সার্ভিস এন্ড সিভিল ডিফেন্স। পেশাগত দায়িত্ব ভিন্ন হলেও বাংলাদেশের যে কোন গোয়েন্দা বিভাগ প্রযুক্তিগতভাবে ঐ ‘দমকল বাহিনী’র চাইতে তেমন আহামরি উন্নত নয় বলে মনে করেন বাংলাদেশের বাইরে বসবাসরত নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা। ডিবি এসবি সিআইডি এনএসআই ডিজিএফআই – সবক’টি এজেন্সি বাইরে মিডিয়াতে ‘ফিটফাট’ ভেতরে প্রযুক্তিগতভাবে ‘সদরঘাট’, অবস্থা যেন আজ তেমনই।
গোয়েন্দা বিভাগের সাথে সংশ্লিষ্ট লোকজন বলছেন, ফ্রি-কল, চ্যাট ও কনটেন্ট আদান প্রদানের সফটওয়্যারগুলো যদি বাংলাদেশে কেউ নাশকতার কাজে ব্যবহার করে থাকেন, তারা কিন্তু ভিন্ন সফটওয়্যারের কৃপায় এখনো বহাল তবিয়তেই তাদের কাজ সেরে নিচ্ছেন। বিটিআরসি’র ব্যানারে ঢাকঢোল পিটিয়ে ভাইবার, ট্যাঙ্গো, হোয়াটসঅ্যাপ, মাইপিপল ও লাইন বন্ধ করে সরকার যে নিরাপত্তার অজুহাত দেখাচ্ছেন, সেটাকে একধরণের ‘আইওয়াশ’ হিসেবে ‘ট্রিট’ করার ‘টেকনোলজিক্যাল’ কারণ রয়েছে মনে করেন আইটি বিশেষজ্ঞরা। রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার দোহাই যদি দেয়া হবে তবে বাংলাদেশে ফেসবুক, স্কাইপ, ইয়াহু ম্যাসেঞ্জার, গুগল টক বা হ্যাংআউটস, মিগ-৩৩ ও নিমবাজ চালু থাকার কোন যৌক্তিকতা আছে বলে মনে করছেন না বিশেষজ্ঞরা।