বৈদেশিক বিনিয়োগের অন্যতম সুবিধাজনক স্থান বাংলাদেশে
প্রকাশিত হয়েছে : ১২:১৫:৩৮,অপরাহ্ন ০৪ এপ্রিল ২০১৫
প্রবাস ডেস্ক :: কানাডার ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট রিসার্চ সেন্টারে অনুষ্ঠিত এক সেমিনারে বক্তাগণ বৈদেশিক বিনিয়োগের অন্যতম সুবিধাজনক স্থান হিসেবে বাংলাদেশের প্রশংসা করেছেন। অটোয়াস্থ বাংলাদেশ হাই কমিশনের উদ্যোগে “বাংলাদেশ: বানিজ্য ও বিনিযোগ সুবিধা” শীর্ষক এই সেমিনারে কানাডার ফেডারেল এমপিসহ উচ্চপদস্থ সরকারী নীতি নির্ধারক, বিশবিদ্যালয়ের শিক্ষক, থিঙ্ক ট্যাঙ্ক,কর্পোরেট সিইও, ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ, আমদানিকারক, বিনিয়োগকারী এবং রাষ্ট্রায়াত্ত্ব সংস্থা’র নির্বাহীগণ যোগদান করেন। সাত জন প্যানেল স্পীকার ভিন্ন ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে বাংলাদেশের অভুতপূর্ব অর্থনৈতিক অগ্রগতি, ব্যবসায়-বাণিজ্যের সুবিধা এবং বৈদেশিক বিনিয়োগকারীদের জন্য বাংলাদেশ সরকার প্রদত্ত নানান ব্যতিক্রমী সুবিধার বিষয়ে বিশদ আলোচনা করেন।
সেমিনারে স্বাগত বক্তব্যে কানাডায় নিযুক্ত বাংলাদেশের হাই কমিশনার কামরুল আহসান বলেন, বিগত ছয় বছরে ৬.২% বার্ষিক প্রবৃদ্ধি বজায় রেখে বাংলাদেশের অর্থনীতি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্বে এগিয়ে চলেছে। তৈরি পোশাক শিল্পের সাথে সাথে বিশ্বমানের ঔষধ, সমুদ্রগামী ছোট জাহাজ, সফটওয়্যারসহ বিভিন্ন আইটি সেবা, চামড়াজাত শিল্প, হালকা প্রকৌশল সামগ্রী, ইলেক্ট্রনিক্স এবং ফাইন সিরামিক ইত্যাদি পণ্যও আন্তর্জাতিক বাজারে বাংলাদেশ রপ্তানী করছে । বাংলাদেশের উদীয়মান অর্থনীতিতে, বিশেষ করে, অবকাঠামো খাতে ব্যাপক বিনিয়োগের সুযোগ রয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
কানাডা-বাংলাদেশ দ্বি-পাক্ষিক বাণিজ্যিক সম্পর্কের বিষয়ে সেদেশের পররাষ্ট্র, বাণিজ্য ও উন্নয়ন সংক্রান্ত মন্ত্রণালয়ের দক্ষিন, দক্ষিণ-এশিয়া ও ওশানিয়া অঞ্চলের মহাপরিচালক পিটার ম্যাক-আর্থার বলেন, বর্তমানে উভয় দেশে মোট আমদানী-রপ্তানী প্রায় ২ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়েছে, যা ভবিষ্যতে আরও বৃদ্ধি পাবে। তিনি বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতির ভূয়সী প্রসংশা বলেন যে, ২০৫০ সালের মধ্যে দেশটি পৃথিবীর ২৩তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করবে। বাংলাদেশের সাথে ব্যবসার ইতিবাচক অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরেন প্রখ্যাত আমেরিকান পোশাক আমদানিকারক কোম্পানী ‘হ্যাগার কানাডা’র প্রেসিডেন্ট ব্রায়ান মেইন। তিনি বলেন, রানা প্লাজা ট্রাজেডির পরে ও আগে বাংলাদেশ সম্পর্কে অনেক নেতিবাচক প্রচারণা করা হয়েছে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে, গুণগত মাণসম্পন্ন পণ্য উৎপাদনে সক্ষম আর প্রতিশ্রুতিশীল শ্রম ও উদ্যোক্তা গোষ্ঠীর অবদানে বাংলাদেশ আজ পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম পোশাক রপ্তানীকারক দেশ হিসেবে স্থান করে নিয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
ট্রেড ফ্যাসিলিটেশন অফিস (টিএফও), কানাডার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা স্টিভ টিপম্যান কানাডায় রপ্তানীর ক্ষেত্রে বাংলাদেশ কী কী সুবিধা পেতে পারে তার বিস্তারিত তুলে ধরেন। কানাডার ফেডারেল পার্লামেন্টের সাংসদ ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সংক্রান্ত কমিটির সদস্য দেবীন্দর শোরি এমপি বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্প্রসারণে অভিবাসী বাংলাদেশীদের ভূমিকার বিষয়টি তুলে ধরেন। তিনি কানাডার ‘গো-গ্লোবাল’ নীতির কথা উল্লেখ করে বলেন, এক্ষেত্রে বাংলাদেশ কানাডার অন্যতম অংশীদার হতে পারে। বাংলাদেশ ফরেন ট্রেড ইন্সটিটিউটের ভারপ্রাপ্ত প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ড. মোস্তফা আবিদ খান বাংলাদেশের কাস্টমস ডিউটি, কর কাঠামো এবং বৈদেশিক বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সরকারের প্রদত্ত বিভিন্ন সুবিধার বিষয়ে বিস্তারিত উপস্থাপন করেন। শ্রম কল্যাণ ও শ্রমিক অধিকার রক্ষায় বাংলাদেশ সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগের বিষয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, আইএলও এবং এ্যাকর্ড-এ্যালায়েন্স –এর সহযোগিতায় ইতোমধ্যেই বাংলাদেশ ৭০ শতাংশ গার্মেন্ট্স ফ্যাক্টরীর পূর্ণাঙ্গ পরিদর্শন ও আন্তর্জাতিক অডিট সম্পন্ন করা করেছে। যে গুটিকয়েক ফ্যাক্টরীতে ত্রুটি পাওয়া গিয়েছিলো সেগুলো বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। তিনি জোর দিয়ে বলেন, বাণিজ্য বৃদ্ধির পাশাপাশি শ্রমিকদের কল্যাণ রক্ষায় বাংলাদেশ বদ্ধপরিকর। কানাডার বৃহত্তম রিটেইলার কোম্পানী লবল’জ এর সিনিয়র ডিরেক্টর এল্যান ব্রান্ডন বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানির ক্ষেত্রে তাঁর কোম্পানীর সংকল্পের কথা পুনর্ব্যক্ত করে বলেন, ভবিষ্যতে বাংলাদেশ থেকে তাদের ক্রয় আরও বৃদ্ধি পাবে। বাংলাদেশের হাই কমিশনার এ পর্যায়ে কানাডার পার্লামেন্ট, সরকার এবং কর্পোরেট সেক্টরের প্রতি বাংলাদেশের বিনিয়োগ ও বাণিজ্যের ক্ষেত্রে সহযোগিতা বৃদ্ধির আহবান জানান।
প্রশ্নোত্তর পর্বে সেমিনারে অংশগ্রহণকারীগণ উপস্থাপিত বিষয়ের উপর প্রশ্ন ও উন্মুক্ত আলোচনা করেন এবং প্যানেল বক্তাগণ বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন ও ভবিষ্যতে বাংলাদেশ-কানাডার মধ্যে বাণিজ্য-বিনিয়োগ উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। এ পর্যায়ে কানাডার ফেডারেল পার্লামেন্টের সাংসদ এবং কানাডা-বাংলাদেশ পার্লামেন্টারী ফ্রেন্ডশীপ গ্রুপের সভাপতি ম্যাথ্যু ক্যালওয়ে এমপি বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি ও মানবসম্পদ উন্নয়েনের ভূয়সী প্রশংসা করেন। কানাডায় নিযুক্ত বাংলাদেশের হাই কমিশনার কামরুল আহসানের সভাপতিত্বে সেমিনারে আগত অতিথিদের ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন বাংলাদেশ হাই কমিশনের কাউন্সিলর ইসরাত আহমেদ সেমিনার উপস্থাপনায় ছিলেন প্রথম সচিব (বাণিজ্যিক) দেওয়ান মাহমুদ।