হরতাল : ঢাকার সঙ্গে সারাদেশের সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন
প্রকাশিত হয়েছে : ৩:৪২:২৩,অপরাহ্ন ০৫ নভেম্বর ২০১৪
নিউজ ডেস্ক: জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের ডাকে দেশ ব্যাপি ৪৮ ঘন্টার হরতাল শুরু হয়েছে । আজ বুধবার ভোর ৬টায় এ হরতাল শুরু হয়েছে। শেষ হওয়ার কথা শুক্রবার ভোর ৬ টায়। দলের আমির মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী , দলের সূরা সদস্য মীর কাসেম আলীকে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় অভিযুক্ত করে মৃত্যুদন্ডাদেশ দেয়া এবং সহকারী সেক্রেটারী জেনারেল কামারুজ্জামানের মৃত্যুদন্ড বহাল রাখার প্রতিবাদে জামায়াতে ইসলামী এ হরতালের ডাক দেয়। হরতাল ঠেকাতে রাজধানীসহ বিভাগীয় শহর এবং গুরুত্বপূর্ণ জেলা শহরে পুলিশ, আমর্ড পুলিশ ব্যাটালিয়ন এবং র্যাবের পাশাপাশি আধাসামরিক বাহিনী (বিজিবি) নামানো হয়েছে। রাজধানীসহ দেশের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার নিরাপত্তায় অতিরিক্ত পুলিশ নিযুক্ত করা হয়েছে। রাজধানীর তিনটি আন্ত:জেলা বাস টার্মিনাল থেকে দূরপাল্লার কোন বাস ছেড়ে যায়নি এবং ঢাকায় আসেওনি। ঢাকার সঙ্গে সড়ক পথে সারাদেশের যোগাযোগ বিচ্ছিন রয়েছে। তবে রেল চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে।
রাজধানীসহ বিভিন্নস্থানে আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে হরতাল সমর্থকদের সংঘর্ষ হয়েছে। কয়েকটিস্থানে পুলিশ গুলি চালিয়েছে। সারাদেশেই জামায়াতে ইসলামী নেতা-কর্মীদের পাশাপাশি বিএনপিসহ বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের গণহারে গ্রেফতার করছে আইন শৃংখলা বাহিনী। হরতাল সমর্থকেরা মিছিল নিয়ে রাস্তায় বের হওয়া মাত্রই পুলিশ তাতে হামলা করছে, মিছিলকারীদের পিটিয়ে ছত্রভঙ্গ করার সঙ্গে গ্রেফতারও করছে। পক্ষান্তরে পুলিশ ও আইন শৃংখলা বাহিনীর পাহারায় সরকার সমর্থকেরা বিভিন্নস্থানে মিছিল করেছে।
রাজধানীর সূত্রাপুরে সকাল ৯ টার দিকে ছাত্রশিবিরের নেতা-কর্মী ও পুলিশের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। হরতালের সমর্থনে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা শিবিরের নেতা-কর্মীরা সূত্রাপুরের লোহারপুল থেকে একটি মিছিল নিয়ে কাঠেরপুলে যাওয়ার সময় পুলিশ বাধা দিলে উভয় পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়াও সংঘর্ষ বাধে। এ সময় শিবিরের দু’জন কর্মী আহত হন।
এর আগে সকাল ৭টার দিকে গেন্ডারিয়া থানার দয়াগঞ্জ মোড় থেকে শিবির কর্মীরা একটি মিছিল বের করে। মিছিলটি যাত্রাবাড়ীর দিকে যাওয়ার সময় পুলিশ তাতে বাধা দেয়। এনিয়ে পুলিশের সঙ্গে তাদের ধাওয়া- পাল্টা দাওয়া এবং সংঘর্ষ বাধে । শিবির কর্মীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছুড়লে পুলিশ তাদের ধাওয়া দেয় ও গুলি ছুড়ে। এতে তিন জন আহত হয়। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে কয়েকজনকে গ্রেফতার করেছে। যাত্রাবাড়ী থান পুলিশ এ সম্পর্কে বলেছে , ‘সকালের দিকে শিবির কর্মীরা হরতালের সমর্থনে মিছিল করার চেষ্টা করলে পুলিশতাদের ধাওয়া দেয়। তারা ইটপাটকেল ছুড়লে আমরা কয়েক রাউন্ড গুলি বর্ষণ । তবে হতাহতের কোন ঘটনা গটেনি বলে পুলিশ দাবি করেছে।
সিলেট: নগরীতে সড়ক অবরোধ ও গাড়ি ভাঙচুরের মাধ্যমে হরতাল শুরু করেছে জামায়াত-শিবির। আজ বুধবার সকাল সোয়া ৬টার দিকে নগরীর মিরাবাজারে সড়ক অবরেরাধ করলে পুলিশের হামলার আগেই তারা সটকে পড়েন।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, সকাল সোয়া ৬টার দিকে নগরীর মিরাবাজারে রাস্তায় টায়ার জ্বালিয়ে সিলেট-তামাবিল সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করে জামায়াত-শিবির নেতাকর্মীরা। এসময় তারা একটি ট্রাক ও একটি সিএনজি অটোরিকশা ভাংচুর করে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছলে সড়ক অবরোধকারীরা পালিয়ে যায়। কদমতলী ও কুমারগাঁও টার্মিনাল থেকে কোনো ধরনের বাস ছেড়ে যায়নি।
রাজশাহী: বিক্ষিপ্ত পিকেটিং এর মধ্যদিয়ে রাজশাহীতে পালিত হচ্ছে জামায়াতের ডাকা তৃতীয় দফার ৪৮ ঘন্টার হরতাল। হরতালের সমর্থনে নগরীর কয়েকটি পয়েন্টে মিছিল করেছে করেছে জামায়াত-শিবির নেতাকর্মীরা। যে কোন ধরনের সহিংসতা এড়াতে সতর্ক অবস্থায় রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। দুপুর একটা পর্যন্ত কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। হরতাল শুরুর আগেই অভিযান চালিয়ে জামায়াত-শিবির কর্মী সন্দেহে ৩ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, হরতালের সমর্থনে বুধবার সকাল সাড়ে ৬টার দিকে নগরীর তালাইমারী কাঁচাবাজার এলাকায় মিছিল বের করে জামায়াত-শিবিরকর্মীরা। এ সময় তারা রাস্তায় পেট্রোল ঢেলে আগুন জ্বালিয়ে অবরোধ করে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছলে হরতাল সমর্থকরা পালিয়ে যায়। সকাল ৭টার দিকে নগরীর গ্রেটার রোড জামে মসজিদের সামনে মিছিল বের করে জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীরা। মিছিলটি বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে নগর ভবনের সামনে গিয়ে সমাবেশ করে।
সকাল ৮টার দিকে নগরীর হড়গ্রাম এলাকায় হরতাল সমর্থনে মিছিল বের করে জামায়াত-শিবির কর্মীরা। তারা রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ করে। কিছুক্ষণ পর তারা ওই এলাকাছেড়ে চলে যায়। এছাড়া ভোর থেকে নগরীর বেশ কয়েকটি পয়েন্টে জড়ো হওয়ার চেষ্টা করে জামায়াত-শিবির কর্মীরা। পুলিশের ধাওয়া খেয়ে তারা সেটা করতে পারেনি।
এদিকে, হরতালের কারণে রাজশাহী থেকে আন্তঃজেলা ও দূরপাল্লার কোনো বাস চলাচল করেনি। তবে রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশন থেকে বিভিন্ন গন্তব্যে ট্রেন চলাচল করছে। এতে যাত্রী কম দেখা গেছে। ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে।
এছাড়া ,বরিশাল, শেরপুর, বগুড়া, ফেনী, নোয়াখালী,সাতক্ষীরা, লক্ষীপুরসহ কয়েকটি জেলায় হরতালের সমর্থনে জামায়াত-শিবির মিছিল করেছে। তারা সড়ক অবরোধ করে ঠায়ারে আগুন ধরিয়ে দিয়ে বিক্ষোভ করছে। এরই পাশাপাশি পুলিশ ও আওয়ামী লীগ কর্মীদের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষ হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। তবে দেশের জেলা ও উপজেলাগুলোর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে অঘোষিত ছুটি চলছে। রাজধানীসহ দেশের সব সরকারী অফিসে কাজ কামের তেমন একটা জোর ছিলনা।