শেখ মুজিব মুক্তিযুদ্ধের ‘বিরোধিতা’ করেছেন : তারেক রহমান
প্রকাশিত হয়েছে : ৮:৪৪:৪৯,অপরাহ্ন ০৬ নভেম্বর ২০১৪
নিউজ ডেস্ক: বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, ‘মুক্তিযুদ্ধ কী তা শেখ মুজিবের দেখার সৌভাগ্য হয়নি। যুদ্ধশেষে দেশে ফিরে তিনি অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করেন।’
তিনি বলেন, ‘এই ক্ষমতা দখলের পর কার্যত মুক্তিযুদ্ধবিরোধী ভূমিকায় অবতীর্ণ হন শেখ মুজিব। তিনি জনগণের মতামতের তোয়াক্কা না করে চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধীদের ছেড়ে দেন।’
বুধবার বিকেলে পূর্ব লন্ডনের একটি হলে যুক্তরাজ্য বিএনপি আয়োজিত ৭ নভেম্বর ‘বিপ্লব ও সংহতি দিবসের’ আলোচনা সভায় প্রধান অতিথিরি বক্তব্যে তারেক রহমান এসব কথা বলেন।
সংগঠনের স্থানীয় সভাপতি শায়েস্তা চৌধুরী কুদ্দুসের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক কয়সর এম আহমেদের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন- দলের কেন্দ্রীয় আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক মাহিদুর রহমান, তারেক রহমানের উপদেষ্টা ব্যারিস্টার এমএ সালাম, আসাদুজ্জামান, যুক্তরাজ্য বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক এমএ মালেক প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে ‘৭ নভেম্বরের তাৎপর্য’ তুলে ধরে দীর্ঘ দুই ঘণ্টার লিখিত বক্তব্য পেশ করেন তারেক রহমান।
তিনি অভিযোগ করেন, ‘সর্বহারা পার্টির নেতা সিরাজ সিকদারকে হত্যার পর জাতীয় সংসদে দাঁড়িয়ে শেখ মুজিব বলেন- ‘কোথায় আজ সিরাজ সিকদার?’ বিরোধী দলের একজন রাজনৈতিক নেতাকে বিনা বিচারে হত্যা করে জাতীয় সংসদে দাঁড়িয়ে এভাবে দম্ভভরে জাতীয় সংসদকে কলঙ্কিত করেন শেখ মুজিব।’
এ সময় তারেক রহমান বলেন, ‘পিতার মত অন্যায়ভাবে এখন এই সংসদ বিনা ভোটের কথিত এমপি দিয়ে দখল করে রেখেছেন ‘রং হেডেড’ শেখ হাসিনা।’
তিনি বলেন, ‘স্বাধীনতা পরবর্তী সময়কার চিত্র ছিল, শেখ মুজিব জনগণকে বিশ্বাস করতে পারেননি। তবে জনগণের পক্ষে না দাঁড়ালে যে ইতিহাসের নির্মম শাস্তি পেতে হয় এটি তিনি ঠিকই বুঝেছিলেন।’
বিএনপির এই প্রভাবশালী নেতা বলেন, ‘জোর খাটিয়ে বা রাজাকার আখ্যা দেয়ার ভয় দেখিয়ে শেখ মুজিবের পক্ষে যতই মিথ্যে ইতিহাস রচিত হোক, প্রকৃত সত্য হচ্ছে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম বিজয় দিবসটি তার আনন্দে উদযাপনের সৌভাগ্য হয়নি।’
তিনি জানান, ‘শেখ মুজিবের নির্যাতন ও স্বেচ্ছাচারিতার প্রতিবাদে সর্বহারা পার্টির ডাকে ওইদিন আধা-বেলা হরতাল পালিত হচ্ছিল। ১৯৭৪ সালের বিজয় দিবসেও হরতাল আহবান করে সর্বহারা পার্টি। এর আগে একই বছর ১৩ অক্টোবর শেখ মুজিবের বিরুদ্ধে গণআন্দোলনের ডাক দেয় শেখ হাসিনার আজকের বিশ্বস্ত ইনু গংদের জাসদ।’
তারেক বলেন, ‘বিজয় দিবসের মর্যাদা অবশ্য শেখ মুজিবের কাছে খুব বেশি আনন্দদায়ক হওয়ার কথাও নয়। কারণ মুক্তিযুদ্ধ শেখ মুজিব দেখেননি। মুক্তিযুদ্ধে গৌরবময় ভূমিকা রাখতে না পারার লজ্জা ছিল তার। আর এ কারণেই মুক্তিযুদ্ধে যারা বীরত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন, তাদের সঙ্গে শেখ মুজিব কখনো সহজ হতে পারেননি।’
তিনি তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু এবং কর্নেল তাহেরের কড়া সমালোচনা করেন। বলেন, ‘সেনবাহিনীতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির দায়ে সামরিক আদালতে বিদ্যমান আইনে তাহেরের বিচার হয়েছে। নিজেদের অপকর্ম ঢাকতে অব্যাহত অপপ্রচারের মাধ্যমে প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকে এজন্যে দায়ী করার অপচেষ্টা চালিয়ে আসছে ইনুরা। অথচ শেখ মুজিবের হত্যকাণ্ডসহ ১৯৭৫ সালের সব ঘটনার জন্যে দায়ী ইনু-তাহেররা।’
এ প্রসঙ্গে তারেক রহমান ৭ নভেম্বরকে সামনে রেখে বিভিন্ন সময় প্রকাশিত তাহের ও ইনুর কিছু সাক্ষাৎকারের বর্ণনা দেয়ার চেষ্টা করেন।
তিনি বলেন, ‘বলা হয় আমার পিতা জিয়াকে রক্ষা করেছেন তাহের-ইনুরা। কিন্তু প্রশ্ন হলো তাহের-ইনুরা ওই সময় জিয়াকে রক্ষা করতে গিয়েছিলেন, নাকি জিয়ার জনপ্রিয়তা ব্যবহার করে রাজনৈতিক ফায়দা হাসিল করতে চেয়েছিলেন?’
তারেক বলেন, ‘তাহের-ইনুর পরিকল্পনা ছিল জিয়াউর রহমানকে গ্রেপ্তার করা যা ইনু নিজে এক সাক্ষাৎকারে উল্লেখ করেছেন। তবে সাধারণ সৈনিক ও জনগণের মধ্যে জিয়ার জনপ্রিয়তায় তা সে সময়ে সম্ভব হয়নি।’
তিনি বলেন, ‘সেনাবাহিনীর মত একটি সুশৃঙ্খল বাহিনীতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে একজন শীর্ষ সেনা কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করার কথা যখন একটি উগ্র রাজনৈতিক সংগঠনের নেতা নিজেই প্রকাশ করেন, তখন এটিকে অপরাধ হিসেবেই দেখতে হবে। আর অপরাধ কখনো তামাদি হয় না।’
এই অপরাধের কারণে ইনুকেও বিচারের কাঠগড়ায় তোলার কথা বলেন তারেক রহমান।
১ নভেম্বর সারা দেশের বিদ্যুৎ বিপর্যয় সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের এই ব্যর্থতা বর্তমান অবৈধ সরকারের। কুইক রেন্টালের নামে প্রায় ৩৪ হাজার কোটি টাকা খরচ করে এরা এখন দিচ্ছে মাত্র ১৫ শতাংশ বিদ্যুৎ।’