শিক্ষক সঙ্কটে কুবির গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ
প্রকাশিত হয়েছে : ১:৪৪:৩১,অপরাহ্ন ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪
কুবি প্রতিনিধি:: কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে তিন শিক্ষক নিয়ে চলছে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ছয়টি ব্যাচ। ফলে সেশনজটের আশঙ্কা করছেন শিক্ষার্থীরা। বিভাগটির নয় জন শিক্ষকের মধ্যে বর্তমানে ছয়জনই শিক্ষা ছুটিতে রয়েছেন।
দায়িত্বশীল সূত্র ও সরজমিনে পরিদর্শন করে দেখা যায়, চলমান ৬ টি ব্যাচের শিক্ষার্থীর সংখ্যা ২৫১ জন। এর বিপরীতে শিক্ষক সংখ্যা মাত্র নয় জন। যাদের মধ্যে ৬ জন শিক্ষক উচ্চশিক্ষার জন্য দেশের বাহিরে আছেন। ফলে ৩ জন শিক্ষকের তত্ত্বাবধানেই চলছে বিভাগটি। উল্লেখ্য তিনজন শিক্ষক হলেন- কাজী এম. আনিছুল ইসলাম, মাহমুদুল হাসান রাহাত ও জাকিয়া জাহান মুক্তা। আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী শিক্ষক-শিক্ষার্থীর অনুপাত ১:১০ হলেও গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে এই অনুপাত হলো ১:৮৪। এদিকে শিক্ষক সংকটের কারণে অধিকাংশ কোর্স চলছে বহিস্থ শিক্ষক দিয়ে। ফলে শিক্ষার্থীদের মধ্যে পড়ছে নানা প্রভাব। বিষয়টি নিয়ে তারা শঙ্কিত এবং সেশনজটের আশঙ্কা করছেন। শিক্ষক সংকটের কারণে বিভাগের শিক্ষকদের উপরও মানসিক চাপ পড়ছে।
এ প্রসঙ্গে কুবির গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আনিছুল ইসলাম বলেন, কুবি প্রশাসন বরাবর কয়েকবার চিঠি দেওয়ার পরও কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি। তিনি আরো বলেন, এই ব্যাপারে প্রশাসনের খামখেয়ালিপনা ছিল, যা তাদের চরম ব্যর্থতার বহিঃপ্রকাশ। শিক্ষক সঙ্কটের ফলে শিক্ষকদের উপর অমানবিক চাপ সৃষ্টি হচ্ছে যা ক্লাসের গুণগত মানের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। তাই তিনি জরুরী ভিত্তিতে এ সঙ্কট সমাধানের দাবি জানান।
এদিকে শিক্ষক সঙ্কটের ফলে বিভাগটির সেমিস্টারের ফলাফল দিতেও লাগছে ৫ থেকে ৬ মাস। যেখানে ৬ মাসে সেমিস্টার শেষ করার কথা, সেখানে ৮ মাসেও শেষ হয় না। কারণ, কিছু সংখ্যক শিক্ষক মিলে অনেকগুলো ব্যাচের খাতা দেখতে হয়। সে কারণে পরবর্তী সেমিস্টারের পরীক্ষা নিতেও দেরি হয়।
এ বিষয়ে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী উম্মে হাবিবা মৌ (১৭তম আবর্তন) বলেন, বর্তমানে আমাদের বিভাগে ব্যাচ চালু আছে ৬টি। এই ৬টি ব্যাচ পরিচালনা করছেন মাত্র ৩ জন শিক্ষক। যা আমাদের ও আমাদের শিক্ষকদের জন্য একটি চ্যালেঞ্জিং ব্যাপার। শিক্ষকরা যেমন ক্লাস ঠিকভাবে পরিচালনা করতে হিমশিম খাচ্ছে তেমন ভাবে আমরাও অনেক সময় বিভিন্ন কোর্সের ক্লাসে ঠিকমত মনোযোগ দিতে পারছি না। এ ক্ষেত্রে প্রশাসনের উচিৎ দ্রুত শিক্ষক নিয়োগ দিয়ে আমাদের এই সমস্যার সমাধান করা।
এ বিষয়ে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের আরেক শিক্ষার্থী রকিবুল হাসান (১৫ তম আবর্তন) বলেন, আমাদের বিভাগটি গতিশীল এবং সেশনজটমুক্ত একটি বিভাগ, কিন্তু বর্তমানে আমরা চরম শিক্ষক সংকটের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি। শিক্ষক সংকটের মধ্যে আমাদের বিভাগের একাডেমিক কার্যক্রম ঠিক রাখতে নিয়মিত গেস্ট টিচার এনে ক্লাস নেয়া হচ্ছে, আবার অনেক সময় অনলাইনে ক্লাস করতে হয়। অনলাইন ক্লাসে সরাসরি ক্লাসের মত সব কিছু বুঝতে পারা সম্ভব হয় না। ফলে আমাদের শিক্ষালাভে ব্যাঘাত ঘটছে। যদি দ্রুত স্থায়ী শিক্ষক নিয়োগ না করা হয়, তাহলে এই সমস্যা আরও জটিল হয়ে উঠবে।
সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন ড. মুহম্মদ সোহরাব উদ্দিন বলেন, একটি বিভাগ কখনোই তিনজন শিক্ষক নিয়ে চলতে পারে না। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় বহিস্থ শিক্ষকের উপর নির্ভরশীল হলে সকল কার্যক্রম ব্যাহত হয়। তাতে করে শিক্ষার্থীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। প্রশাসনের উচিত ছিল জরুরি ভিত্তিতে শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া। একটি বিভাগ পরিচালনার জন্য অন্তত দশজন শিক্ষক প্রয়োজন, সেজন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া দরকার।
রেজিস্ট্রার মো. মুজিবুর রহমান মজুমদারের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে রেজিস্ট্রারের দায়িত্ব পেয়েছি খুব বেশি দিন হয়নি, এরমধ্যে কিছু সময় দেশের বাহিরেও অবস্থান করেছি। একটি বিভাগে শুধুমাত্র তিনজন শিক্ষক আছে জানতে পেরে অবাক হয়েছি। এ পরিস্থিতিতে শিক্ষকরা সারাদিনের ক্লাসের প্রস্তুতি নিতে ব্যর্থ হয়, ফলে শিক্ষার গুনগত মান নষ্ট হয়। শিক্ষাছুটি এবং বিভাগে শিক্ষক নিয়োগ দুটোই বিভাগ থেকে পরিকল্পনা করে আসতে হবে। এক্ষেত্রে বিভাগের ক্ষতি হবে কিনা সেটা দেখে শিক্ষাছুটি দেওয়া উচিত বলে মনে করি। বিভাগ থেকে শিক্ষক নিয়োগের সুযোগ থাকলে অতিদ্রুত নিয়োগ হবে, যাতে করে শিক্ষার্থীরা সামনের দিকে আর ক্ষতিগ্রস্থ না হয়।