রেলের জায়গায় যুবলীগ নেতার জমিদারি
প্রকাশিত হয়েছে : ১০:৫৮:০৪,অপরাহ্ন ২৮ নভেম্বর ২০১৪
নিউজ ডেস্ক::
চট্টগ্রাম নগরীতে এম এ আজিজ স্টেডিয়াম সংলগ্ন অফিসার্স ক্লাবের পশ্চিম পাশে রেলওয়ে পুর্বাঞ্চলের সুবিশাল বাংলো। থাকেন ডেপুটি ফিন্যান্সিয়াল অ্যাডভাইজার জামাল উদ্দিন। প্রায় দশ শতক জায়গা জুড়ে অবস্থিত বাংলোটির সামনে পেছনে অন্তত ৩০ শতক খোলা জায়গা। পেছনে কর্মচারীদের তিন কক্ষের ঘর; সামনে গাড়ি রাখার একচালা টিনের ঘর। বাড়ির চারপাশে রয়েছে নিরাপত্তা বেস্টনি।
রেলওয়ের উর্ধ্বতন কর্মকর্তার জন্য বরাদ্দ থাকা এ বাংলো জোরপূর্বক অন্তত ১৫ বছর ধরে দখলে রেখেছেন স্থানীয় এনায়েতবাজার ওয়ার্ড যুবলীগের যুগ্ম সম্পাদক কবির হোসেন।
বাংলোর একপাশ দখল নিয়ে গত ১০বছর ধরে পরিবার নিয়ে বসবাস করছেন কবির হোসেন। সামনে ও পেছনে ১৬ শতক জায়গা জুড়ে টাইলসের গোডাউন বসিয়েছেন। কর্মচারীদের জন্য তৈরি করা তিন কক্ষে রাখছেন গোডাউনের শ্রমিকদের। গাড়ির গ্যারেজেও টাইলস রাখা হয়েছে।
কবিরের স্ত্রী মাসুদা বেগম অবশ্য জানিয়েছেন, মাসে ১২হাজার টাকা ভাড়ার বিনিময়ে সেখানে থাকছেন তারা।
তবে বাংলোর মালিক জামাল উদ্দিন দাবি করেছেন, বিগত ১৫ বছর ধরে জোরপূর্বক দখলে রেখেছেন কবির। দুই বছর আগে এই বাংলো বরাদ্দ পাওয়ার পর অবৈধ দখলের বিষয়টি কর্তৃপক্ষকে জানালেও যুবলীগ নেতার দাপটে তাকে সরানো যায়নি।
জামাল উদ্দিন বলেন, বাংলো বরাদ্দ নেয়ার আগে থেকেই কবির সাহেব বসবাস করে আসছেন। আমি বারবার বলার পরও বিষয়টির সমাধান হয়নি। কবিরের সঙ্গে এলাকার মাস্তানদের উঠা-বসা। তাই নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে আমি এ বিষয়ে বেশি কথা বলতে যাইনি।
জামাল উদ্দিন কোন ধরনের ঘর ভাড়া বা টাকা পয়সা গ্রহণ করেন না বলে দাবি করলেও তার কথার সত্যতা পাওয়া যায়নি। কারণ বাংলোর পেছনে দুই হাজার টাকার বিনিময়ে একটি পরিবারকে দুটি কক্ষ ভাড়া দিয়েছেন।
প্রথমে বাংলোর নিরাপত্তা ও পরিস্কার পরিচ্ছন্নতার জন্য তাকে রাখা হয়েছে বলে জানালেও পুলিশের ধমকে প্রকৃত সত্য বলেছেন ঘরের বাসিন্দা ঝিনু ঘোষ।
ঝিনু বলেন, ‘কেউ আসলে বলবা, পরিস্কার পরিচ্ছতার কাজ করি আর স্যারের বাসায় কাজ করি। সেজন্য আমাকে এখানে থাকতে দিছে। কোন ভাড়া দিতে হয় না। আজ সকালে সাহেব বলে গেছে। আসলে আমরা প্রতিমাসে দুই হাজার টাকা ভাড়া দিয়ে থাকি।’
অভিযোগ রয়েছে, রেলওয়ে পূর্বাঞ্চরের বিভাগীয় ভূ-সম্পত্তি বিভাগ থেকে ৫ বার নোটিশ দিয়ে জায়গা খালি করে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হলেও রাজনৈতিক ক্ষমতার দাপটে সে আদশে আমলে নেননি কবির। সর্বশেষ একজন নির্বাহি ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে তিনদিন সময় বেধে দেওয়া হয়। এতে কর্ণপাত করেননি কবির।
বৃহস্পতিবার উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করে ভূ-সম্পত্তি বিভাগ। এতে নেতৃত্ব দেন চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের নির্বাহি ম্যাজিস্ট্রেট রাকিব হাসান। সময় দেওয়ার পরও টাইলস সরিয়ে না নেওয়ায় সেগুলো ধ্বংস করা হয়। প্রায় তিনঘন্টা অভিযান চালিয়ে প্রায় ৩০ শতক জায়গা ও স্থাপনা দখলমুক্ত করা হয়।
রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের বিভাগীয় ভূ-সম্পত্তি কর্মকর্তা মো. জসিম উদ্দীন বলেন, রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের ডেপুটি ফাইন্যান্সিয়াল অ্যাডভাইজার জামাল উদ্দীনের বাসার সামনে-পেছনে প্রায় ৩০ শতক জায়গা অবৈধভাবে দখলে রেখেছে কবির। তাকে ৫ বার নোটিশ দেওয়া হলেও জায়গাটি ছাড়েনি। সর্বশেষ তিনদিন সময় বেধে দেওয়ার পরও ছেড়ে না যাওয়ায় উচ্ছেদ অভিযান চালিয়ে দখলমুক্ত করা হয়েছে।
এ বিষয়ে কথা বলার জন্য কবির হোসেনের মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি কোন কথা বলতে পারবেন না বলে সংযোগ কেটে দেন। এরপর বেশ কয়েকবার চেষ্টা করেও সংযোগ পাওয়া যায়নি।
থাকার ঘরটিও ভাড়া দিলেন জামাল
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জামাল উদ্দিন রেলের বাংলো নিজের নামে বরাদ্দ নিয়ে একটি রুম রেখে উচ্ছেদকৃত গোডাউনের মালিকসহ তিনজনকে ভাড়া দিয়েছেন।
বাংলোয় তার এক বোনকে নিয়ে থাকেন দাবি করলেও মূলত একটি কক্ষ রেখে পুরো বাসাটি ভাড়া দিয়েছেন তিনি। এ বিষয়ে জামাল উদ্দিন বলেন, আসলে আমার দুই ছেলে মেয়ে ঢাকায় থাকে। আমাকেও ঢাকায় বদলি করা হচ্ছে।
বাংলোর পাশের ভাড়াটিয়া মাসুদা বেগম বলেন, বাড়ির মালিক (জামাল উদ্দিন) এখানে থাকে না। তার বাসাটি ভাড়া দিয়েছেন। তবে মাঝে মধ্যে আসেন দেখাশুনার জন্য। তাই একটি কক্ষ তার জন্য রেখেছেন।