রিমান্ডে বিমানবালা: যেভাবে হয় সৌদি আরব থেকে স্বর্ণ আনার চুক্তি
প্রকাশিত হয়েছে : ১১:২১:২৯,অপরাহ্ন ২৫ মার্চ ২০১৯
নিউজ ডেস্ক:: সৌদি আরবের জেদ্দা থেকে বাংলাদেশ। দূরত্ব ৪,৫৮৪ কি.মি.। বিমানে আসতে সময় লাগে পাঁচ ঘণ্টার মতো। এই সময়ে কিছু মাল বহন করার বিনিময়ে পাবেন বিপুল অঙ্কের টাকা। এই লোভ সামলাতে পারেন নি সৌদি এয়ারলাইন্সের দুই বিমানবালা সায়মা আক্তার ও ফারজানা আফরোজ। দু’জনে প্যান্টির নিচে করে জেদ্দা থেকে বাংলাদেশে ৩৬ পিস স্বর্ণ আনার চুক্তি করেন মিন্টু নামের এক লোকের সঙ্গে। বাংলাদেশে এই স্বর্ণ রিসিভ করার কথা ছিল রাকিব নামের একজনের। যার বাড়ি কুমিল্লা।
কিন্তু গত সোমবার হযরত শাহজালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছার পর ওই দুই বিমানবালাকে স্বর্ণসহ এয়ারপোর্ট আর্মড পুলিশের সহযোগিতায় আটক করে কাস্টম কর্তৃপক্ষ। পরদিন দু’জনকে আদালতে হাজির করা হয়। ফারজানা বর্তমানে কাশিমপুর কারাগারে রয়েছেন। আর সায়মা আক্তারকে দুইদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে আদালত। রিমান্ডে পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে সায়মা এসব তথ্য দেন। গতকাল ফের তাকে আদালতে হাজির করা হয়।
তবে, দুজনের পরিবারেরই দাবি, তারা কখনো এই কাজের সঙ্গে জড়িত ছিলেন না। তাদের ফাঁসানো হয়েছে। তবে পুলিশ বলছে, তারা একটি বড় চক্রের সঙ্গে জড়িত। আগেও এই দু’জন এমন কাজ করেছে বলে সন্দেহ করছে পুলিশ। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এস আই সফিকুল ইসলাম গতকাল বলেন, রিমান্ড শেষে আমরা রোববার তাকে কোর্টে নিয়ে এসেছি। সায়মার কাছ থেকে কিছু তথ্য পেয়েছি। আশা করছি, ফারজানাকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে আরো তথ্য পাওয়া যাবে।
বিমানবালা সায়মা আক্তারের স্বামী তানভীর আহমেদ। আড়াই বছর হয় বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছেন দু’জন। তারা রাজধানীর কলাবাগানের একটি ভাড়া বাসায় থাকেন। তানভীর আগে একটি বিয়ে করেছেন। ওই স্ত্রীর সঙ্গে তার ডিভোর্স হয়ে গেছে। আগের সংসারে একটি ছেলে আছে। তার বয়স ১৭ বছর। সে একটি ইংলিশ মিডিয়ামে ও লেবেলে পড়ে। সায়মা ৮ বছর ধরে সৌদি এয়ারলাইন্সে বিমানবালা হিসেবে কর্মরত।
সায়মার স্বামী তানভীর বলেন, আমাদের বিয়ে হয়েছে আড়াই বছর হলো। সে আগে কখনো এই কাজ করেছে বলে আমার মনে হয় না। আর যদি করেও থাকে আমি জানতাম না। যখন এই খবর শুনেছি আমি খুবই আশ্চর্য হয়েছি। এখন আইনি প্রক্রিয়ায় আমার স্ত্রীকে মুক্ত করার চেষ্টা করে যাচ্ছি। আমার স্ত্রী যেহেতু এই কাজের জন্য আটক হয়েছে, এর জন্য আমি খুবই অনুতপ্ত।
এদিকে ফারজানা আফরোজের বিয়ে হয়েছে দুই বছর হলো। তার স্বামী আরিফুল হক। তিনি নাসা কোম্পানির টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কর্মরত। তিনি স্বামীর সঙ্গে গুলশানে একটি বাসায় থাকেন। ফারজানার বাবার বাড়ি লক্ষ্মীপুর জেলায়। তবে সে ছোটবেলা থেকে তার পরিবারের সঙ্গে ঢাকায় থাকেন।
ফারজানার শ্বশুর অবসরপ্রাপ্ত স্বাস্থ্য কর্মকর্তা আনোয়ারুল হক বলেন, ঘটনার দিন আমার ছেলে বৌমাকে আনতে বিমানবন্দরে গিয়েছিল। এই ঘটনা শোনার পরে সেখান থেকে সে চলে আসে। ওই দিন রাতে আর আমাদের কিছু জানায়নি। পরদিন সকালে ছেলের কাছ থেকে বিস্তারিত জানতে পারি।
আমরা কখনোই বিশ্বাস করতে পারছি না যে, আমার পুত্রবধূ এই কাজ করতে পারে। আর এর আগে এমন কোনো লক্ষণও আমরা তার মধ্যে দেখতে পাইনি। যেহেতু ঘটনা ঘটে গেছে এখন আমরা তাকে আইনি প্রক্রিয়ায় মুক্ত করার চেষ্টা করছি।
গত সোমবার গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে কাস্টম কর্তৃপক্ষ ও এয়ারপোর্ট আর্মড পুলিশ জানতে পারে দুই বিমানবালার স্বর্ণ চোরাচালানের বিষয়টি। স্বর্ণ রয়েছে সৌদি আরব থেকে আসা সৌদি ফ্লাইট এসভি-৮০২ এর দুই নারী কেবিন ক্রু সায়মা ও ফারজানার কাছে। ওই তথ্যের ভিত্তিতে প্রস্তুতি নেন তারা। রাত ২টার দিকে ওই ফ্লাইট হযরত শাহজালাল (রহ.) বিমানবন্দরে অবতরণের পর তাদের আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। প্রথমে পুরো বিষয়টি অস্বীকার করেন তারা। নিজেদের রক্ষা করতে নানা কৌশল অবলম্বন করেন।
জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে তারা স্বর্ণ থাকার বিষয়টি স্বীকার করে। এসময় বিমানবালা সায়মার প্যান্টির ভেতর থেকে ২৬ পিস এবং ফারজানা আফরোজের প্যান্টির ভেতর থেকে ১০ পিস মোট ৩৬ পিস স্বর্ণের বার জব্দ করা হয়।