গণভবনে সংবাদ সম্মেলনে শেখ হাসিনা
ঢাকা: যুদ্ধাপরাধীরা যেন রাষ্ট্রপতির দণ্ড মওকুফের কোনও সুযোগ না পায়, তা সুস্পষ্ট করতে সংবিধান সংশোধনের দাবি উঠলেও তা না করার কথা বললেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মৃত্যুদণ্ডের শাস্তি আপিলের রায়ে কমে কারাদণ্ড হওয়ার পর সংবিধানের ৪৯ অনুচ্ছেদ সংশোধনের দাবি জোরেশোরে উঠলে আইনমন্ত্রী আনিসুল হকও তা বিবেচনার আশ্বাস দিয়েছিলেন।
৪৯ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, “কোনও আদালত, ট্রাইব্যুনাল বা অন্য কোনও কর্তৃপক্ষ কর্তৃক প্রদত্ত যে কোনও দণ্ডের মার্জনা, বিলম্বন ও বিরাম মঞ্জুর করিবার এবং যে কোনও দণ্ড মওকুফ, স্থগিত বা হ্রাস করিবার ক্ষমতা রাষ্ট্রপতির থাকিবে।”
এই অনুচ্ছেদ সংশোধনের দাবি যারা তুলেছেন, তাদের আশঙ্কা, ভবিষ্যতে ক্ষমতার পালাবদল হলে রাষ্ট্রপতির ক্ষমার সুযোগ পেয়ে যেতে পারেন একাত্তরে যুদ্ধাপরাধে দণ্ডিতরা।
সাম্প্রতিক আমিরাত সফর নিয়ে বৃহস্পতিবার গণভবনে সংবাদ সম্মেলনে এলে প্রশ্নোত্তর পর্বে এই বিষয়ে সরকারের অবস্থান সরকার প্রধানের কাছে জানতে চান এক সাংবাদিক।
উত্তরে শেখ হাসিনা বলেন, “রাষ্ট্রপতির একটা অধিকার থাকে। এটা থাকতে পারে।… আমরা দেশ চালাই। নাগরিকদের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করতে মহামান্য রাষ্ট্রপতির হাতে কিছু ক্ষমতা থাকতে হয়, এটা থাকতে পারে।”
৪৯ অনুচ্ছেদের পাশাপাশি সংবিধানের ৪৭ ক (২) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, “এই সংবিধানে যাহা বলা হইয়াছে, তাহা সত্ত্বেও যে ব্যক্তির ক্ষেত্রে এই সংবিধানের ৪৭ অনুচ্ছেদের (৩) দফায় বর্ণিত কোনও আইন প্রযোজ্য হয়, এই সংবিধানের অধীন কোনও প্রতিকারের জন্য সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করিবার কোনও অধিকার সেই ব্যক্তির থাকিবে না।”
৪৭ অনুচ্ছেদের ৩ দফায় বলা হয়েছে, “এই সংবিধানে যাহা বলা হইয়াছে, তাহা সত্ত্বেও গণহত্যাজনিত অপরাধ, মানবতাবিরোধী অপরাধ বা যুদ্ধাপরাধ এবং আন্তর্জাতিক আইনের অধীন অন্যান্য অপরাধের জন্য কোনও সশস্ত্র বাহিনী বা প্রতিরক্ষা বাহিনী বা সহায়ক বাহিনীর সদস্য বা অন্য কোনও ব্যক্তি, ব্যক্তি সমষ্টি বা সংগঠন কিংবা যুদ্ধবন্দিকে আটক, ফৌজদারিতে সোপর্দ কিংবা দণ্ডদান করিবার বিধান-সংবলিত কোনও আইন বা আইনের বিধান এই সংবিধানের কোনও বিধানের সহিত অসমঞ্জস্য বা তাহার পরিপন্থি, এই কারণে বাতিল বা বেআইনি বলিয়া গণ্য হইবে না কিংবা কখনও বাতিল বা বেআইনি হইয়াছে বলিয়া গণ্য হইবে না।”
রাষ্ট্রপতির দণ্ড মওকুফের ক্ষমতার কয়েকটি প্রয়োগ নিয়ে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি উভয়ই সমালোচিত।
বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার আমলে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত বিএনপি নেতা মহিউদ্দিন ঝিণ্টুর দণ্ড মওকুফের কড়া সমালোচনা ছিল আওয়ামী লীগের।
অন্যদিকে লক্ষ্মীপুরের আওয়ামী লীগ নেতা আবু তাহেরের ছেলে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত আফতাব উদ্দিন বিপ্লবের দণ্ড আওয়ামী লীগ আমলে মওকুফের পর তার সমালোচনা ওঠে বিএনপির মধ্য থেকে।
যুদ্ধাপরাধের বিচার দাবির আন্দোলনকারীদের অনেকের আশঙ্কা, দণ্ডিত যুদ্ধাপরাধীরা পরে এই ক্ষমার সুযোগ পেয়ে যেতে পারেন।
এজন্য সংবিধান সংশোধনের দাবিতে গত ১৯ অক্টোবর আইনমন্ত্রীর কাছে স্মারকলিপি দেয় গণজাগরণ মঞ্চ।
ওই স্মারকলিপি নিয়ে আনিসুল হক বলেছিলেন, “বাংলাদেশের মহামান্য রাষ্ট্রপতি ভবিষ্যতে মানবতাবিরোধী অপরাধীকে মাফ করে দেবেন- এটা ভাবতেও গা শিউরে ওঠে।
“কিন্তু আমরা দেখেছি মুজাহিদ-নিজামী বাংলাদেশের মন্ত্রী হয়েছিলেন। ভবিষ্যতের জন্য কিছু একটা চিন্তা করতে হবে (মানবতাবিরোধীদের ক্ষমায়), এটা আমি মনে করি।”