যুক্তরাষ্ট্রে ১৬৬৮ বাংলাদেশী গ্রেফতার
প্রকাশিত হয়েছে : ৩:৫৪:০৮,অপরাহ্ন ১৫ জুন ২০১৫
প্রবাস ডেস্কঃ
মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশের মানব পাচার নিয়ে বিশ্ব জুড়ে যখন আলোচনা তুঙ্গে, এসময় যুক্তরাষ্ট্রেও আলোচনায় স্থান করে নিয়েছে বাংলাদেশী যুবকরা। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধ প্রবেশের দায়ে গত ৬ মাসে ১ হাজার ৬৬৮ বাংলাদেশী গ্রেফতার হয়েছেন। এসব যুবকের বয়স ২২ থেকে ৩২ বছরের মধ্যে। রাজনৈতিক কারণে তাদের জীবন বিপন্ন হওয়ায় যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমাতে বাধ্য হয়েছেন – এ যুক্তি দেখিয়ে তারা স্থায়ীভাবে বসবাসের আবেদন করেছেন। দালালকে ২০ থেকে ২৫ লাখ টাকা করে দিয়ে ভারত, ব্রাজিল, গুয়াতেমালা, মেক্সিকো, বলিভিয়া, পানামা সিটি হয়ে দুর্গম সীমান্ত পথে পাড়ি দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের সময় তারা আটক হয়।
ওদিকে রাজনৈতিক আশ্রয় পাওয়া কঠিন হয়ে দাড়িয়েছে বাংলাদেশীদের। ক্ষমতাসীন মহাজোটের কর্মী-সংগঠকরাও জামায়াতে ইসলামী অথবা বিএনপির সমর্থক বলে যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনা করছেন। এ ঘটনা বিরূপ প্রভাব ফেলেছে এ দেশের ইমিগ্রেশন বিভাগের উপর। রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ পদে অধিষ্ঠিতদের স্বজনেরাও রাজনৈতিক কারণে নিগৃহিত হবার নথিপত্র সাবমিট করেছেন রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনার আবেদনে। সাম্প্রতিক সময়ে এ ধরনের ঘটনা বাড়ার কারনে ইমিগ্রেশন বিভাগের কর্মকর্তা এবং কোর্টের বিচারকরাও সহজে কারোর আবেদন মঞ্জুর করছেন না।
এসাইলাম প্রার্থনার আবেদনপত্র প্রস্তুত, সাবমিট এবং পরবর্তীতে ইন্টারভিউর সময়ে অনুবাদক হিসেবে দায়িত্ব পালনকারী এবং ইমিগ্রেশন কোর্টে বাংলাদেশীদের পক্ষাবলম্বনকারী এটর্নীগণের কাছে থেকে এসব তথ্য জানা গেছে। তারা জানান, কয়েক মাস আগেও বাংলাদেশের সাংবাদিকদের আবেদন খুব দ্রুত মঞ্জুর হলেও এখন পরিস্থিতি পাল্টেছে বলেও জানা গেছে।
ওদিকে এদেশের সুপ্রীম কোর্ট শিগগিরই অবৈধ ইমিগ্র্যান্ট সংক্রান্ত দুটি প্রধান ইস্যুর প্রশ্নে সিদ্ধান্ত নেবে। যে সব বিষয় প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে সে সবের মধ্যে রয়েছে যাতে যেসব ইমিগ্রান্ট আমেরিকায় অবৈধভাবে বসবাস করছে তারা যাতে গোপনীয়তা ভেঙে বেড়িয়ে আসতে পারে। তাদের পরিবার পালনে আরো অর্থ উপার্জন করতে পারে। এবং তাদের যাতে রাজনৈতিক ক্ষমতা অর্জিত হয় এবং সরকারে প্রতিনিধিত্ব পেতে পারে। দুটি মামলার একটি হচ্ছে ওবামা প্রশাসনের নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে তাদের ডিপোর্টেশন বিলম্বিতকরণ এবং প্রায় ৪-৫ মিলিয়ন অবৈধকে ওয়ার্ক পারমিট দেয়া। যদি নিম্ন আদালত বিষয় দুটি বাস্তবায়নে প্রতিবন্ধকতা অব্যাহত রাখে তাহলে তা নিষ্পত্তির জন্য সুপ্রীম কোর্টে যেতে পার
হচ্ছে ভোটার রিডিস্ট্রিটিং রুল পরিবর্তন। যাতে অবৈধ ইমিগ্র্যান্টদের আদমশুমারি থেকে বাদ দেয়া যেতে পারে। একাধিক লিগ্যাল এক্সপার্ট জানিয়েছে যে, ইমিগ্র্যান্ট রাইট মামলায় বিচারকরা কোন দিকে ঝুঁকবে তা তাদের জন্য এক লিটমাস টেস্ট। তবে অনেক ইমিগ্র্যান্ট গ্রহণকারি একমত যে, ওবামা প্রশাসন ইমিগ্রেশন আইন বাস্তবায়নের পদক্ষেপ বৈধভাবে জারি করেছে। সে জন্য সুপ্রীম কোর্ট ওবামার পদক্ষেপের পক্ষেই রায় দেবেন। আর জটিল ভোটিং ডিস্ট্রিক্ট গঠন করায় সিদ্ধান্ত নিতে হবে এমন লিগ্যাল স্ট্যান্ডার্ডের ওপর যা খুব ভালোভাবে ভেবে দেখা হয়নি।
এর আগে ইমিগ্রেশন ইস্যুতে গত বছর নভেম্বরে নির্বাহী আদেশ জারি করেন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। নির্বাহী আদেশ জারির পর এ প্রথম ওবামা তা উদ্যোগের ব্যাপারে হতাশা ব্যক্ত করলেন। ওদিকে এ নির্বাহী আদেশ জারির পর ইমিগ্রেশন প্রক্রিয়া সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করতে তিন হাজারেরও বেশি অফিসার ও কর্মী নিয়োগের যে পরিকল্পনা ডিপার্টমেন্ট অব হোমল্যান্ড সিকিউরিটি নিয়েছিল তা স্থগিত করা হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত আনডকুমেন্টেড প্রায় ১ কোটি ১০ লাখ অভিবাসীর নাগরিকত্ব প্রাপ্তি আবারো অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছে। নাগরিকত্ব দেয়ার উপর আদালতের আরোপ করা নিষেধাজ্ঞাসহ অন্যান্য আইনী জটিলতা নিরসন না হওয়া পর্যন্ত এ প্রক্রিয়া বন্ধ রাখতে ইতোমধ্যে ডিপার্টমেন্ট অব হোমল্যান্ড সিকিউরিটিকে নির্দেশ দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। সম্প্রতি সম্মেলনে প্রেসিডেন্ট ওবামা ইমিগ্রেশন নিয়ে হতাশা ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, নির্বাহী আদেশের উপর যেসব আইনগত প্রশ্ন তোলা হয়েছে সেগুলো সুস্পষ্ট না হওয়া পর্যন্ত আনডকুমেন্টেড ইমিগ্র্যান্ট আবেদন গ্রহণ করা ঠিক হবে না। আমরা চাই না যে লোকজন একটি প্রক্রিয়ার মধ্যে পড়ে অনিশ্চয়তার মধ্যে থাকুক এবং প্রক্রিয়াটি আরো বিলম্বিত হোক।
সূত্র : নয়াদিগন্ত