মানুষ কূটনামি করতে এত পছন্দ করে কেন?
প্রকাশিত হয়েছে : ৩:১৫:৩৩,অপরাহ্ন ০৪ নভেম্বর ২০১৪
লাইফস্টাইল ডেস্ক: এ ব্যাপারটি অস্বীকার করার উপায় নেই যে নারী হোক বা পুরুষ, যে কোনো বয়সের, যে কোনো শিক্ষাগত যোগ্যতার মানুষের মাঝে কূটনামি করার একটা প্রবণতা দেখা যায়। স্বীকার করুন, নিজের সহকর্মীর ব্যাপারে কোনো একটি গুঞ্জন শুনে আপনিও হয়তো সেই ঘটনা শুনতে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন কখনো। কিন্তু আমরা আসলে কেন কূটনামি করি বা এতে আগ্রহী হই?
নতুন এক গবেষণায় জানা যায়, কূটনামির প্রতি আমাদের আগ্রহ থাকার কারণ হলো আমরা এর মাধ্যমে খুঁজে বের করার চেষ্টা করি আমাদের বন্ধুমহলে আমাদের স্থান আসলে কেমন আর এই অবস্থানের উন্নতি কি করে করা যেতে পারে।
এই গবেষণার নেতৃত্বে থাকা নেদারল্যান্ডসের ইউনিভার্সিটি অফ গ্রনিঞ্জেন এর এলেনা মারটিনেস্কু জানান, ভবিষ্যতে নিজেকে নিরাপদ রাখার জন্য এবং নিজের পরিস্থিতি ভালো করে তোলার জন্যই কূটনামিতে অংশগ্রহণ করে থাকেন অনেকে। নিজেদের ব্যাপারে জানার জন্য অন্যদের ব্যাপারে জানাটা জরুরী।
এই গবেষণা দুইটি পর্যায়ে সম্পন্ন হয়। প্রথম পর্যায়ে ১৭৮ জন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীকে আলাদা আলাদা গ্রুপে ভাগ করে দেওয়া হয়। এই গ্রুপের সবারই একজন আরেকজনের সাথে কিছুটা হলেও পূর্ব পরিচয় ছিলো, তারা আগে কোনো একটি গ্রুপ অ্যাসাইনমেন্টে একত্রে কাজ করেছিলেন। তাদেরকে বলা হয়, এই গ্রুপের কেউ যদি অন্য কোনো গ্রুপ সদস্যের ব্যাপারে তাদের কাছে অতীতে কূটনামি করে থাকেন বা ভালো কিছু বলে থাকেন তবে তা লিখতে। দেখা যায়, ৮৫ জন মানুষ ইতিবাচক কিছু শোনার অভিজ্ঞতা ব্যক্ত করেন, ৯৩ জন নেতিবাচক বা কুটনামি শুনে থাকার অভিজ্ঞতা জানান। এতে আরও দেখা যায়, তারা এই অভিজ্ঞতা থেকে জ্ঞান নেবার চেষ্টা করে থাকেন। যেমন, “এই ব্যাপারে জানার ফলে আমি অমুকের থেকে ভালো শিক্ষা পেলাম”, অথবা “আমি যা শুনেছিলাম তাতে মনে হয়েছে অমুকের তুলনায় আমার পরিস্থিতি অনেক ভালো”। নিজেকে নিরাপদ রাখার ব্যাপারটাও তাদের মাঝে দেখা যায় যেমন, “সেদিন এ কথা শোনার পর মনে হলো ওই বন্ধুটির সামনে আমার নিজের ইমেজ রক্ষা করে চলতে হবে।”
গবেষণার পরবর্তী পর্যায়ে ১২২ জন শিক্ষার্থীকে একটি বড় কোম্পানির “সেলস এজেন্ট” হিসেবে কাজ করতে দেওয়া হয়। তাদের কোনো একজন সহকর্মী তাদেরকে জানান যে ওপর একজন ব্যক্তি হয় খুব ভালো অথবা খুব খারাপ পরিস্থিতিতে আছে। পরবর্তীতে এই কথা শুনে তাদের মনোভাব কেমন হয়েছিলো তার ব্যাপারে তথ্য নেওয়া হয়। গবেষণার প্রথম পর্যায়ের কাজগুলোও তাদেরকে করতে দেওয়া হয়।
গবেষণার দুটি পর্যায়েই দেখা যায়, যে কারণেই হোক না কেন এমন কূটনামিকে নিজের উন্নতির একটি উপায় হিসেবেই ব্যবহার করে থাকেন বেশিরভাগ মানুষ। অন্যদের ব্যাপারে অজানা তথ্য ব্যবহার করে নিজের উন্নতি করে থাকেন তারা। অনেকে একে দেখেন “পজিটিভ গসিপ” হিসেবে। গবেষকদের মতে, কূটনামিকে যতই খারাপ মনে করা হোক না কেন আসলে বেশিভাগ সময়েই যার ব্যাপারে কথা বলা হচ্ছে তার কোনো ক্ষতি করার মানসিকতা থেকে কূটনামি করা হয় না। কূটনামি থেকে মানুষ বুঝতে পারে যে ভবিষ্যতে তাদের নিজেদেরকেও এমন সমালোচনার শিকার হতে পারে এবং তারা সাবধান হয়ে যান।
(মূল: Huffington Post)