মাঠে সরব স্বতন্ত্ররা
প্রকাশিত হয়েছে : ১:০০:২০,অপরাহ্ন ০৫ জানুয়ারি ২০২৪
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বাকি আর মাত্র দুদিন। এবারের নির্বাচনে ২৯৯টি সংসদীয় আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ১ হাজার ৯৭০ জন প্রার্থী। একজন প্রার্থী মারা যাওয়ায় নওগাঁ-২ আসনের ভোট স্থগিত রয়েছে। ভোটের শেষ সময়ে প্রতিটি আসনে উত্তাপ ছড়াচ্ছেন প্রার্থীরা। তবে এবারের সংসদ নির্বাচনের ট্রামকার্ড হিসেবে মাঠে রয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী এই স্বতন্ত্ররা আসলে কতটুকু স্বতন্ত্র- এমন প্রশ্নই ঘুরপাক খাচ্ছে জনমনে।
স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নৌকার বিপক্ষে যারা লড়ছেন তাদের মধ্যে আলোচিত মজিবুর রহমান চৌধুরী নিক্সন, ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন, তালুকদার মোহাম্মদ তৌহিদ জং মুরাদ, সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী মুরাদ হাসান, চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহি, এ কে আজাদ। ছবি: সংগৃহীত
এবারের নির্বাচনে ২৮টি রাজনৈতিক দল থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ১ হাজার ৫৩৪ প্রার্থী। আর স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ভোটের মাঠে আছেন আরও ৪৩৬ জন। বৃহস্পতিবার (৪ জানুয়ারি) নির্বাচন কমিশন থেকে এ তথ্য জানানো হয়।
নির্বাচনে দেশের জনগণের নজর এই স্বতন্ত্র প্রার্থীদের দিকে। কেননা অধিকাংশ স্বতন্ত্র প্রার্থী আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। শুধু তাই নয়, এই তালিকায় বেশ কিছু হেভিওয়েট আওয়ামী লীগ প্রার্থী রয়েছেন।
আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের সঙ্গে গণভবনে এক মতবিনিময়কালে দলের শীর্ষ পর্যায় থেকে বলা হয়েছিল, দলের মনোনয়নবঞ্চিতরা কেউ কেউ চাইলে স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে পারবেন। এক্ষেত্রে দল বাধা দেবে না। দলের মনোনীত প্রার্থীরা কেউ যেন স্বতন্ত্র প্রার্থীদের প্রার্থিতা প্রত্যাহারে চাপ সৃষ্টি না করেন এবং বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হওয়ার চেষ্টা না করেন- সেই ব্যাপারেও সতর্ক করে দেন আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড।
এরই প্ররিপ্রেক্ষিতে মাঠে সরব স্বতন্ত্ররা। দলের বিভিন্ন পর্যায় থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, ২৯৯ আসনের মধ্যে একশরও বেশি আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের নিয়ে তীব্র কোন্দল ও বিভাজন সৃষ্টি হয়েছে দলের মধ্যে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীক নিয়ে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে জয়ী হওয়া ১৮ সংসদ সদস্য এবার ভিন্ন প্রতীক নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লড়াই করছেন আওয়ামী লীগেরই মনোনীত নৌকা প্রতীকের বিরুদ্ধে।
নৌকার বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থানে স্বতন্ত্ররা
স্বতন্ত্রদের মধ্যে যারা আলোচনার শীর্ষে রয়েছেন তাদের মধ্যে শেখ হাসিনার আত্মীয় এবং চিফ হুইপ নুর-ই-আলম চৌধুরীর ভাই মজিবুর রহমান চৌধুরী নিক্সন; যিনি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কো-চেয়ারম্যান ও দলটির সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারণী ফোরাম সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফরউল্লাহর বিরুদ্ধে।
শরীয়তপুর-২ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন সরকারের উপমন্ত্রী এনামুল হক শামীম। তার বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন খালেদ শওকত যার বাবা প্রয়াত কর্নেল (অবসরপ্রাপ্ত) শওকত আলী, আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে অতীতে একাধিকার সংসদ সদস্য হয়েছিলেন।
ঢাকা-১৯ আসনে সরকারের ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমানের বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন ওই আসনের সাবেক এমপি তালুকদার মোহাম্মদ তৌহিদ জং মুরাদ। এদিকে চাঁদপুর জেলার প্রার্থীদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা যে ভার্চুয়াল সভা করেন, সেখানে জায়গা পাননি ওই জেলার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। তাদের বিরুদ্ধে দলীয় প্রার্থীদের অভিযোগ হলো, তারা জেলার প্রতিটি আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের জন্য কাজ করছেন।
রাজশাহী-১ (গোদাগাড়ী-তানোর) আসনে ট্রাক প্রতীকের প্রার্থী চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহি। যিনি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী বর্তমান সংসদ সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরীর বিরুদ্ধে।
পিরোজপুরে বর্তমান সরকারের মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিমের বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করছেন ওই এলাকার আওয়ামী লীগ দলীয় সাবেক এমপি এ কে এম আউয়াল। এরমধ্যেই দুগ্রুপের সংঘর্ষে সেখানে একজনের মৃত্যুর খবরও পাওয়া গেছে। মুন্সীগঞ্জের একটি আসনে আওয়ামী লীগ ও স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে গত ১৮ ডিসেম্বর বেশ কয়েকজন আহত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে।
এদিকে হবিগঞ্জ-৪ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমনের সমর্থকদের ওপর নৌকার সমর্থকদের হামলার ঘটনা ঘটেছে। এতে ৭ ঈগল সমর্থক আহত হয়েছেন।
ময়মনসিংহ-৩ আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী নিলুফার আনজুমের বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করছেন দলেরই জেলা কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শরীফ হাসান অনু। ফরিদপুর সদর আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী শামীম হক ও স্বতন্ত্র প্রার্থী এ কে আজাদের সমর্থকদের মধ্যে কয়েক দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।
এমপি থেকেও স্বতন্ত্র যারা
সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী মুরাদ হাসান এবার দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। আবার রাজশাহী-৪ আসনে তিনবারের এমপি এনামুল হক এবার কাঁচি প্রতীক নিয়ে নৌকার বিরুদ্ধে নির্বাচন করছেন। একাদশ সংসদের হুইপ ও চট্টগ্রাম-১১ আসন থেকে সামশুল হক চৌধুরী নৌকা প্রতীক নিয়ে আগে তিনবার বিজয়ী হলেও এবার তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী।
সুনামগঞ্জ-২ আসনে আওয়ামী লীগের এমপি ও প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের স্ত্রী জয়া সেন গুপ্ত স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন দলের মনোনীত প্রার্থী চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মাহমুদের বিরুদ্ধে। টাঙ্গাইল-৫ আসনের এমপি ছানোয়ার হোসেন এবার নির্বাচন করছেন ঈগল প্রতীক নিয়ে। একই ভাবে আরও যেসব সংসদ সদস্য দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন, তাদের মধ্যে আছেন নওগাঁ-৩ আসনের ছলিম উদ্দিন তরফদার, নওগাঁ-৪ আসনের ইমাজ উদ্দিন প্রামাণিক।
এছাড়াও স্বতন্ত্র হয়েছেন বরিশাল-৪ আসনের পঙ্কজ দেবনাথ, কক্সবাজার-১ আসনের জাফর আলম, সুনামগঞ্জ-১ আসনের মোয়াজ্জেম হোসেন রতন, গাইবান্ধা-৪ আসনের মনোয়ার হোসেন চৌধুরী, ঝিনাইদহ-৩ আসনের শফিকুল আজম খান, যশোর-৪ আসনের রণজিৎ কুমার, সাতক্ষীরা-২ আসনের মীর মোস্তাক আহমেদ রবি, হবিগঞ্জ-২ আসনের আব্দুল মজিদ খান ও ময়মনসিংহ-৯ আসনের বর্তমান এমপি আনোয়ারুল আবেদীন খা। এছাড়া ঢাকাতেও বেশ কিছু আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের কারণে হিমশিম খাচ্ছেন দলীয় মনোনয়ন পাওয়া প্রার্থীরা।
সারা দেশে আওয়ামী লীগের মনোনীত এসব প্রার্থীর বিরুদ্ধে স্বতন্ত্রদের অবস্থানে দ্বিধা-দ্বন্দ্বে ভুগছেন আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা। বিভিন্ন স্থানে দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে বিভাজন এবং সংঘর্ষের ঘটনা বিব্রতকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে। শেষ পর্যন্ত বিজয়ের হাসি কে হাসবে, সেটা ব্যালটের মাধ্যমে নির্ধারণ হবে ৭ জানুয়ারি।