ভারত থেকে আমদানি করা ২১৬৯ গাড়ি দীর্ঘদিন ধরে পড়ে আছে বন্দরে
প্রকাশিত হয়েছে : ৭:৩৬:৫৩,অপরাহ্ন ১২ মার্চ ২০১৫
নিউজ ডেস্ক::
ভারত থেকে আমদানি করা ২১৬৯ টি গাড়ি বেনাপোল বন্দরে খালাসের অপেক্ষায় আটকা পড়ে আছে দীর্ঘদিন ধরে। কাস্টমস ও বন্দর কর্তৃপক্ষ বারবার তাগিদ দেয়া সত্বেও বন্দরের ভারতীয় ট্রাক টার্মিনালে আমদানি করা গাড়িগুলো মজুদ করে রাখা হয়েছে। অধিক মুনাফার লাভের আশায় আমদানিকারকরা গাড়িগুলো বন্দরে মাসের পর মাস বছরের পর বছর ফেলে রাখায় বন্দরে সৃস্টি হয়েছে ভয়াবহ পন্যজট। এ কারণে চলতি মাসে তাদের শোকজ নোটিশ পাঠানো হয়েছে। ৩০ দিনের মধ্যে বন্দর থেকে যে কোন পন্য খালাশ কার না হলে পন্য গুলো নিলামে বিক্রির বিধান থাকলেও অদৃশ্য কারণে গাড়িগুলো নিলামে বিক্রি করা হচ্ছে না।
বেনাপোল কাস্টমস সূত্রে জানা গেছে, ২০১৩-১৪ অর্থবছরে বেনাপোল দিয়ে গাড়ি আমদানি করা হয়েছে ২৩ হাজার ৮৯৭টি। এর মধ্যে খালাস হয়েছে ২৩ হাজার ২৬৭টি। আর চলতি ২০১৪-১৫ অর্থবছরের প্রথম ৭ মাসে গাড়ি আমদানি হয়েছে ১৫ হাজার ১৬৭টি। খালাস হয়েছে ১৪ হাজার ৭৯৭টি। এ দুই অর্থ বছরে মোট এক হাজার গাড়ি সহ আগের থাকা ১ হাজার ১৬৯টি মিলে মোট ২ হাজার ১৬৯টি গাড়ি বর্তমানে বন্দরের শেডে পড়ে রয়েছে। বন্দরে পড়ে থাকা গাড়ির আমদানিকারক হচ্ছে নিটল মোটরস, র্যাংকস মোটরস, উওরা মোটরস সহ আরো বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান। আমদানি করা গাড়ির মধ্যে রয়েছে- ট্রাক,বাস, চেসিস, পিকআপ ও ছোট প্রাইভেটকার।
এর মধ্যে র্যাংগস মোটরসের জেনারেল ম্যানেজার সত্যজিৎ সাহা বেনাপোল কাস্টমসে চিঠি দিয়ে বলেছেন, গাড়ি ছাড় করানোর দিন থেকে আমাদের ব্যাংক সুদ দিতে হয়। ছাড় করানোর পরে যদি গাড়ি বিক্রি না হয় তাহলে আমাদের ব্যাপক লোকসান গুনতে হবে। তাই চিঠির মাধ্যমে তিনি আরও সময় চান। নিটল গ্রুপের ডিজিএম গোলাম রব্বানি বলেন, দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে গাড়ি বেনাপোল থেকে নিয়ে আসা যাচ্ছে না। আবার নিয়ে এলেও বিক্রি হচ্ছে না। তাই ধীরে ধীরে গাড়ি ছাড় করানো হচ্ছে। এ ব্যাপারে যশোর চেম্বার অব কমার্সের শীর্ষ এক নেতা বলেন, ‘বেনাপোল বন্দর দিয়ে আমদানি করা গাড়ি ছাড় না হওয়ার কারণ হল ব্যবসায়িক মুনাফা বাড়ানো। বেশি মুনাফার জন্যই হয়তো তারা গাড়ি ছাড় করাচ্ছেন না।
কাস্টমস কর্তৃপক্ষ বলছে, গাড়িগুলো ছাড় করাতে আমদানিকারকদের তাগাদা দেওয়া সত্ত্বেও তারা কোনো কার্যকর উদ্যোগ নিচ্ছেন না। এ কারণে চলতি মাসে তাদের শোকজ নোটিশ পাঠানো হয়েছে। বেনাপোল কাস্টমস কর্তৃপক্ষের দায়সারা শোকজ নোটিশে বলা হয়েছে, দ্রততম সময়ের মধ্যে গাড়িগুলো ছাড় না করালে নিলামে তোলা হবে। বন্দরের শেডে পড়ে থাকা গাড়ির মূল্য শত কোটি টাকা বলে কাস্টমস কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। এতে সরকারের রাজস্ব পাওনা রয়েছে কমপক্ষে ৫০ কোটি টাকা।
বেনাপোল কাস্টমসের সহকারী কমিশনার অনুপম চাকমা বলেন, আমাদের নিয়ম রয়েছে গাড়ি আমদানির পর ৩০ দিন পার হয়ে গেলে সংশ্লিষ্ট আমদানিকারকদের চিঠি দিয়ে গাড়ি ছাড় করানোর জন্য বলা। এরপর সাড়া না পাওয়া গেলে তা নিলামে ওঠানো। তিনি আরও বলেন, গাড়িগুলো দেশের বড় বড় ব্যবসায়ীরা আমদানি করে এনেছেন। তাই তাদের দিকে তাকিয়ে দুই মাস ছাড় দেওয়া হয়েছে। কিন্তু বার বার সংশ্লিষ্ট আমদানিকারকদের চিঠি দিলেও তারা কোনো জবাব দিচ্ছিলেন না। তাই বাধ্য হয়ে শোকজ করা হয়েছে। এরপরও তারা গাড়ি খালাস না করলে তা নিলামে ওঠানো হবে।
বেনাপোল কাস্টমসের যুগ্ম-কমিশনার আতিকুর রহমান বলেন, ২০১৩ সালের ১৮ মে বেনাপোলে নৌমন্ত্রী শাজাহান খানের সঙ্গে বন্দর কর্তৃপক্ষ ও কাস্টমসের বৈঠক হয়। সেখানে মন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছিলেন পড়ে থাকা গাড়িসহ বিভিন্ন পণ্য নিলামে তোলার। তিনি আরও বলেন, ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্ট আমদানিকারকদের চিঠি দিয়ে চলতি মাসের মধ্যে গাড়ি ছাড় করাতে বলা হয়েছে। তা না করলে আগামী মাসের প্রথম দিকে নিলাম আহ্বান করা হবে। এতে সরকারও লাভবান হবে।