ভারতের সাথে ব্যান্ডউইথ রফতানি চুক্তি
প্রকাশিত হয়েছে : ১:৩৬:৫৪,অপরাহ্ন ০১ জুন ২০১৫
নিউজ ডেস্ক::
দীর্ঘ তিন বছর আলোচনা শেষে আগামী শনিবার ভারতে ব্যান্ডউইথ রফতানির চূড়ান্ত চুক্তি স্বাক্ষর হতে যাচ্ছে। মূলত ৬ জুন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরকালে এ চুক্তির স্বাক্ষর হবে বলে জানিয়েছে বিএসসিসিএল কর্মকর্তারা।
বিএসসিসিএলের সাথে ভারতের টেলিকম সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান ভারত সঞ্চার নিগম লিমিটেড (বিএসএনএল)-এর মধ্যে এ চুক্তি স্বাক্ষর হবে। চুক্তি স্বাক্ষরকালে ভারত সঞ্চার নিগম লিমিটেড (বিএসএনএল)-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক অনুপম শ্রিবাস্তব, পরিচালক সুজাতা রায় এবং মহাব্যবস্থাপনা পরিচালক আনন্দ খের উপস্থিত থাকবেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
ব্যান্ডউইডথ রপ্তানি করে দেশেরইন্টারনেট ব্যবস্থাপনাকারী প্রতিষ্ঠান বিএসসিসিএলের বছরে ১০০ কোটি টাকা আয় হবে।
গত ১১ মে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানিয়েছে ভারত। বিএসসিসিএল চুক্তির খসড়া ভারতের কাছে পাঠালে তারা এই সিদ্ধান্ত জানায়। এর আগে এপ্রিলের ২০ তারিখ সচিবালয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠকে এ চুক্তির অনুমোদন দেয়া হয়। ওই বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ মোশাররাফ হোসাইন ভূইঞা সাংবাদিকদের জানান, দেশে বর্তমানে ২০০ জিবিপিএস ব্যান্ডউইথ আছে। এর মধ্যে মাত্র ৩০ জিবিপিএস বাংলাদেশ ব্যবহার করে।
বাকি ১৭০ জিবিপিএস ব্যবহার হয় না। তখন তিনি বলেন, অব্যবহৃত ব্যান্ডউইথ থেকেই মাত্র ১০ জিবিপিএস ব্যান্ডউইথ রফতানি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। তবে তা ৪০ জিবিপিএস পর্যন্ত বাড়ানো যাবে। চুক্তির মেয়াদকাল হবে তিন বছর। এছাড়া প্রথম তিন বছরের চুক্তির পর প্রতি বছর চুক্তি নবায়ন করা হবে। এতে ব্যান্ডউইথ মূল্য নতুন করে ঠিক করা হবে।
দীর্ঘদিন থেকে ঝুলে থাকার পর ১১ মে ব্যান্ডউইথ রফতানি চুক্তির এই প্রস্তাব মন্ত্রিসভায় অনুমোদনের জন্য দেয়া হয়। এতে বিএসসিসিএল প্রতি এমবিপিএস ব্যান্ডউইথ ১০ ডলারে (৭৮০ টাকা) রফতানির প্রস্তাব ছিল যা অনুমোদন পেয়েছে। ১০ জিবিপিএস ব্যান্ডউইথ রফতানি করে বাংলাদেশ ৯ কোটি ৪২ লাখ টাকার বৈদেশিক মুদ্রা আয় করবে। এ টাকার ৪ ভাগের এক অংশ দিয়ে বিটিসিএলের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন দেয়া যাবে। আর বিভিন্ন কোম্পানির চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে ভারত ভবিষ্যতে ৪০ জিবিপিএস পর্যন্ত ব্যান্ডউইথ নিলে সেক্ষেত্রে আয় ৪ লাখ ডলার পর্যন্ত হতে পারে। প্রথম দফার চুক্তিতে আখাউড়া দিয়ে ত্রিপুরার সঙ্গে সংযোগ স্থাপিত হবে। পরে আরও দুটি সংযোগ হবে। এর মাধ্যমে দেশটির পূর্বদিকের সাতটি রাজ্য বাংলাদেশের ব্যান্ডউইথের মাধ্যমে ইন্টারনেট সেবা দেবে।
এর আগে মো. মনোয়ার হোসেন জানান, ১০ জিবিপিএস নিয়ে এখন শুরু হলেও ২০১৬ সালে বিএসসিসিএল দ্বিতীয় সাবমেরিন ক্যাবল সংযোগ পেলে এরপর অল্প সময়ের মধ্যে ভারতের এ দিককার রাজ্যগুলোর জন্য ব্যান্ডউইথ রফতানি ১০০ জিবিপিএস ছাড়িয়ে যেতে পারে।তিনি বলেন, আগামী বছরের মধ্যে দ্বিতীয় সাবমেরিন ক্যাবলের সাথে যুক্ত হওয়ার কাজ দ্রুত এগিয়ে চলেছে। এই সাবমেরিন ক্যাবলের সাথে যুক্ত হলে আমরা আরো ১৩০০ জিবিপিএস ব্যান্ডউইথ পাবো। তখন দেশের উচ্চ গতির ইন্টারনেট চাহিদা মিটিয়ে অন্যান্য দেশেও ব্যান্ডউইথ রফতানি করে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা যাবে।
ব্যান্ডউইথ রফতানি শুরুর জন্য ইতোমধ্যে রুটও ঠিক করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কুমিল্লা এবং আখাউড়ার স্থলভাগ দিয়ে লিংক সাবমেরিন ক্যাবল গিয়ে যুক্ত হবে ভারতের গোহাটিতে। দেশের সাবমেরিন ক্যাবলের ল্যান্ডিং স্টেশন কক্সবাজার থেকে চট্টগ্রাম হয়ে কুমিল্লা পর্যন্ত আসবে ফাইবার অপটিক ক্যাবল লাইন। এরপর কুমিল্লা থেকে আখাউড়া সীমান্ত পেরিয়ে আগরতলা হয়ে ত্রিপুরা পর্যন্ত পৌঁছে যাবে ইন্টারনেট সংযোগ। এর জন্য নতুন করে প্রায় ৩২ কিলোমিটার নতুন লিংক লাইন তৈরি করতে হবে।
ব্যান্ডউইথ রফতানির জন্য আরও একটি রুট ঠিক করা হয়েছে জানিয়ে মনোয়ার হোসেন বলেন, এই রুটটি ব্রাহ্মণবাড়িয়া, সিলেট হয়ে তামাবিল সীমান্ত দিয়ে ভারতের মেঘালয়ের রাজধানী শিলং পর্যন্ত বিস্তৃত হবে। সেখান থেকে বিএসএনএল নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় আসামে পৌঁছে যাবে বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি হওয়া ব্যান্ডউইথ।
ভারতের মুব্বাইয়ে ৯টি ও চেন্নাইয়ে ৬টিসহ মোট ১৫টি সাবমেরিন ক্যাবল সংযোগ থাকলেও এর সবই ভারত মহাসাগর ও আরব সাগরের পাড়কেন্দ্রিক রাজ্যগুলোর সাথে সংশ্লিষ্ট। এসব ক্যাবলগুলোর ল্যান্ডিং স্টেশন থেকে ‘সেভেন সিস্টার্স’ রাজ্যগুলোর দূরত্ব অনেক বেশি এবং এসব এলাকায় এসব স্টেশন থেকে ইন্টারনেট সংযোগ দিতে গেলে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে হয়। ফলে ইন্টারনেট সংযোগের খরচ অনেক বেড়ে যায়। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশ থেকে এসব রাজ্যের জন্য
ব্যান্ডউইথ কিনতে পারলে অবকাঠামো নির্মাণ ও পরিবহন খরচ দু’টোই কমে যায়। বাংলাদেশ থেকে একাধিক রুটে ব্যান্ডউইথ ভারতে নেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে ভারতের। সমঝোতা স্মারকে বলা আছে, মূল্য যাই হোক না কেন প্রতি মাসের ৭ তারিখের মধ্যে ডলারের মাধ্যমে ভারতীয়রা বিএসসিসিএলকে মূল্য পরিশোধ করবে।