‘বড় সহিংসতা থেকে রক্ষা পেয়েছে চট্টগ্রাম’
প্রকাশিত হয়েছে : ১১:২৬:১২,অপরাহ্ন ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৫
নিউজ ডেস্ক::
ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য এনামুল কবিরকে (৩১) গ্রেপ্তারের মধ্য দিয়ে বড় ধরনের ধ্বংসাত্মক কর্মকান্ডের হাত থেকে বন্দরনগরী চট্টগ্রাম রক্ষা পেয়েছে বলে দাবি করেছে পুলিশ। এছাড়া এনামুল কবিরের নাশকতার ছক পুরোপুরি গুঁড়িয়ে দিতে সাবেক সাংসদ শাহজাহান চৌধুরীসহ জামায়াত-শিবিরের কয়েকজন নেতাকে গ্রেপ্তারে সর্বাত্মক চেষ্টা চালাচ্ছে পুলিশ।
এনামুল কবিরসহ তিনজনকে গ্রেপ্তারের পর শনিবার দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানিয়েছেন নগর পুলিশের কোতয়ালি জোনের সহকারি কমিশনার শাহ মো.আব্দুর রউফ। এসময় নগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপ কমিশনার মো.হাছান চৌধুরীও উপস্থিত ছিলেন।
রউফ বলেন, ‘এনামুল গত ১২ ফেব্রুয়ারি নাশকতার বার্তা নিয়ে ট্রেনে করে চট্টগ্রামে আসেন। এরপর থেকে শহরে বাসে, তেলের লরিতে আগুন দেয়াসহ বিভিন্ন নাশকতার ঘটনা ঘটেছে। তেলের ডিপোসহ রাষ্ট্রায়ত্ত বিভিন্ন স্থাপনায় আগুন দেয়ার পরিকল্পনা ছিল তাদের। চট্টগ্রাম শহরকে উত্তাল করে ফেলারও পরিকল্পনা জামায়াত-শিবিরের ছিল। কিন্তু আমরা এনামুলকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হওয়ায় সব পরিকল্পনা ব্যর্থ হয়েছে।’এনামুলের সঙ্গে গ্রেপ্তার হওয়া বাকি দু’জন হল, মো.মোস্তফা (২৮) এবং মুশফিক আবরার মাহিন (২০)।
এদের মধ্যে মোস্তফা শিবিরের চট্টগ্রাম মহানগর (উত্তর) শাখার পাঠাগার সম্পাদক ও সাউদার্ণ ইউনিভার্সিটির ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের তৃতীয় সেমিস্টারের ছাত্র। মোস্তফা ফাটিকছড়ি উপজেলার পাইন্দং ইউনিয়নের মনির আহম্মদের ছেলে। তারা নগরীর চন্দনপুরা এলাকায় মিয়ার বাপের মসজিদ এলাকায় থাকে।
মাহিন জামায়াত-শিবিরের দলীয় চিত্রগ্রাহক ও জামায়াতের দেওয়ানবাজার ওয়ার্ড শাখার বায়তুল মাল সম্পাদক। তার বাবা ইসলামী ব্যাংকের কর্মকর্তা মহিবুল হক। বাঁশখালী উপজেলার চেচুরিয়া গ্রামের মহিবুল বাকলিয়া থানার বগারবিল এলাকায় পরিবার নিয়ে থাকেন। এনামুল ঢাকা মহানগর শিবিরের সাবেক মানবসম্পদ উন্নয়ন বিষয়ক সম্পাদক। বর্তমানে শিবিরের কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদের সদস্য। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজিতে স্নাতকোত্তর এনামুল ঢাকা ‘ল’ কলেজ থেকে এলএলবি পাশ করেছেন।
কোতয়ালি থানার ওসি একেএম মহিউদ্দিন সেলিম জানান, শুক্রবার ভোরে বগারবিল এলাকায় মহিবুলের বাসা থেকে এনামুলকে বাকি দু’জনসহ গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারের পর তাদের নিয়ে সাবেক সাংসদ শাহজাহান চৌধুরী ও শিবির নেতা এইচ এম সোহেল এবং নূরুল আমিন, রাসেলসহ কয়েকজনকে গ্রেপ্তারে হাটহাজারী, লোহাগাড়া, সাতকানিয়া ও সীতাকুণ্ড থানা এলাকায় অভিযান চালানো হয়।
সহকারি পুলিশ কমিশনার আব্দুর রউফ জানান, ১২ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রামে আসার পর এনামুলের সঙ্গে প্রথমে শিবিরের মহানগর শাখার (দক্ষিণ) সভাপতি আ ম ম মসরুর হোসাইনের সঙ্গে কথা হয়। মসরুর এনামুলকে শিবিরের মহানগর (উত্তর) শাখার সভাপতি নূরুল আমিনের সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দেন। নূরুল আমিন তাকে নিয়ে চকবাজার কলেজ রোডে পার্সিভিল হিল এলাকায় একটি ফ্ল্যাটে রাখেন। ১৩ ফেব্রুয়ারি এনামুলের সঙ্গে নগর ও জেলার ছাত্রশিবিরের নেতাদের যোগাযোগ হয়। ১৪ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যা ৭টার দিকে শিবিরের মহানগর (দক্ষিণ) নেতা খালিদের সঙ্গে গিয়ে ফয়’জলেন এলাকায় এইচ এম সোহেলসহ শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন এনামুল।
১৫ ফেব্রুয়ারি সকালে ১০টার দিকে শিবির মহানগর (উত্তর) শাখার সভাপতি নূরুল আমিন ও দক্ষিণের সভাপতি এইচ এম সোহেলের সঙ্গে চট্টগ্রাম কলেজ এলাকায় বৈঠক করেন এনামুল। পরবর্তী বৈঠকের কথা ছিল সাবেক সাংসদ ও নগর জামায়াতের নায়েবে আমির শাহজাহান চৌধুরীর সঙ্গে।
সহকারি পুলিশ কমিশনার আব্দুর রউফ বলেন, ১৬ ফেব্রুয়ারি সকালে নগরীর সাব এরিয়া এলাকায় বাসে ককটেল হামলা হয়েছে এনামুলের পরিকল্পনা অনুযায়ী। এ হামলার সঙ্গে মোস্তফা ও মাহিন জড়িত ছিল বলে আমাদের কাছে তথ্য আছে।
তাদের ওই মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন জানানো হবে বলে জানিয়েছেন শাহ মো.আব্দুর রউফ। সংবাদ সম্মেলনে কোতয়ালি থানার পরিদর্শক (তদন্ত) নেজাম উদ্দিনও উপস্থিত ছিলেন।