ব্রাশফায়ারে উড়ে গেল ৩টি গাড়ি, ছিন্নভিন্ন আমরা সবাই
প্রকাশিত হয়েছে : ৫:১৮:০৫,অপরাহ্ন ২০ মার্চ ২০১৯
নিউজ ডেস্ক:: ‘আমরা সবাই মাচালং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে নির্বাচনী দায়িত্বে ছিলাম। আমাদের কেন্দ্রে শান্তিপূর্ণভাবে ভোটগ্রহণ হয়েছিল। কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। ফলাফল ঘোষণা শেষে বিকেল ৫টার দিকে আমরা সবাই জিপ গাড়িযোগে বাঘাইছড়ি উপজেলায় ফিরছিলাম।
বাঘাইছড়ি-দীঘিনালা সড়কের ৯ মাইল এলাকায় পৌঁছালে আমাদের গাড়িতে গুলি এসে লাগে। সঙ্গে সঙ্গে আমরা চমকে উঠি। গুলির পরপরই দুই পাহাড় থেকে ব্রাশফায়ার চালানো হয়। গুলি আর ব্রাশফায়ারের এক মুহূর্তেই উড়ে গেল আমাদের গাড়ি। ছিন্নভিন্ন হয়ে গেলাম আমরা সবাই। এসব ঘটনা এক মিনিটের মধ্যেই ঘটেছে।’
রাঙ্গামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলায় ব্রাশফায়ার ও নৃশংস হামলার বর্ণনা এভাবেই দিয়েছেন প্রাণে বেঁচে যাওয়া আনসার সদস্য হাবিবুর। সোমবার দ্বিতীয় ধাপে অনুষ্ঠিত পঞ্চম উপজেলা নির্বাচনের দায়িত্ব শেষে সীমান্তবর্তী এলাকা সাজেক ইউনিয়ন থেকে ফেরার পথে এ হামলার মুখে পড়েন তারা। এ হামলায় সাতজন নিহত হয়েছেন। একই সঙ্গে আনসার সদস্য হাবিবুর গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। পাশাপাশি আহত হয়েছেন অন্তত ১৪ জন।
আনসার সদস্য হাবিবুর বলেন, শান্তিপূর্ণভাবে ভোটগ্রহণ শেষে আমরা বাড়ি ফিরছিলাম। যেহেতু ভোট নিয়ে আমাদের কেন্দ্রে কোনো অনিয়ম হয়নি সেহেতু আমরা ছিলাম ভয়মুক্ত। কে জানতো এমন ঘটনা ঘটবে। ৯ মাইল এলাকায় আসার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের তিনটি জিপ গাড়ির ওপর হামলা চালায় সন্ত্রাসীরা। গোলাগুলির শব্দ পেয়ে আমাদের গাড়িচালক গাড়ি না থামিয়ে স্পিড বাড়িয়ে দেন। এ সময় সন্ত্রাসীরা চারদিক থেকে গুলি ছুড়তে শুরু করে। এতে আমাদের কয়েকজনের শরীরে গুলি লেগে আহত হন।
তিনি আরও বলেন, মূলত দুই পাহাড়ে অবস্থান করেছিল সন্ত্রাসীরা। দুই পাহাড় থেকে প্রথমে গুলি ছোড়া হয়। এর পরপরই ব্রাশফায়ার চালানো হয়। এতে আমাদের গাড়ি উড়ে যায়। ছিন্নভিন্ন হয়ে যাই সবাই। এরপর কি হয়েছে আমি জানি না, চোখ খুলে দেখি আমি হাসপাতালে।
সোমবার সারাদেশের ১১৫টি উপজেলায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। তারই ধারাবাহিকতায় রাঙ্গামাটির বাঘাইছড়িতেও নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচন শেষে বাঘাইছড়ি উপজেলার সাজেকের তিনিটি কেন্দ্র- কংলাক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মাচালং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও বাঘাইহাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে দায়িত্ব পালন শেষে উপজেলা সদরে ফিরছিলেন নির্বাচন কর্মকর্তারা। উপজেলার ৯ মাইল এলাকায় পৌঁছার সঙ্গে সঙ্গে এসব গাড়িতে ব্রাশফায়ার চালায় সন্ত্রাসীরা। এতে সাতজন নিহত ও ১৪ জন আহত হন।
এদিকে, মঙ্গলবার সকালে রাঙ্গামাটির বিলাইছড়ি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সুরেশ কান্তি তঞ্চঙ্গ্যাকে গুলি করে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা। তাকে হত্যার সময় ছেলে নিরুপম তঞ্চঙ্গ্যা (২৮) বাবার সঙ্গে ছিলেন।
নৃশংস ঘটনার বর্ণনা দিয়ে নিরুপম তঞ্চঙ্গ্যা বলেন, আমাদের বাড়ি বিলাইছড়ি উপজেলার ফারুয়া ইউনিয়নে। আমরা নিরাপত্তার কারণে বিলাইছড়ি উপজেলা সদরে বসবাস করি। নির্বাচনে ভোট দেয়ার জন্য আমরা এলাকায় যাই। ভোট দিয়ে উপজেলা সদরে আসার সময় আলিক্ষ্যং এলাকায় আমার বাবাকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। আমার বাবা নির্বাচনী প্রতিহিংসার শিকার।
তিনি বলেন, ইঞ্জিনচালিত নৌকাযোগে ফারুয়া থেকে উপজেলা সদরে আসছিলাম আমরা। আলিক্ষ্যং এলাকায় পৌঁছালে হঠাৎ নৌকা থামান মাঝি। আমি কারণ জানতে চাইলে মাঝি বলেন আমাকে তীরে নৌকা থামাতে বলছে ওরা। মাঝিকে নৌকা চালাতে বললে মাঝি বলেন তারা গুলি ছুড়ছে। পরে মাঝি নৌকা থামান তীরে। নৌকা থামাতেই অস্ত্রধারী তিনজন আমার মাকে লাথি মেরে ফেলে দেয়। আমার বাবাকে নামিয়ে নিয়ে গুলি করে চলে যায় তারা। চার মিনিটের মধ্যে বাবা প্রাণ হারান, সেই সঙ্গে আমরা এতিম হয়ে যাই। আমি আমার বাবার হত্যাকারীদের বিচার চাই।
পাহাড়ের এ দুই ঘটনায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। আতঙ্কে আছেন উপজেলাবাসী। এখন পর্যন্ত এসব হামলার ঘটনায় মামলা হয়নি বলে জানিয়েছেন রাঙ্গামাটির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ছুফিউল্লাহ।
তিনি বলেন, বাঘাইছড়িতে ব্রাশফায়ারে নিহত ছয়জনের ময়নাতদন্ত খাগড়াছড়ি সদর হাসপাতালে সম্পন্ন হয়েছে। ময়নাতদন্ত শেষে মরদেহ বাঘাইছড়িতে নিয়ে আসা হয়। সেখান থেকে স্বজনদের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করা হবে।