বৈশ্বিক অভিবাসন প্রশাসনে ভূ-রাজনৈতিক গুরুত্ব তুলে ধরল বাংলাদেশ
প্রকাশিত হয়েছে : ৫:০১:০৬,অপরাহ্ন ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৯
নিউজ ডেস্ক:: ‘আন্তর্জাতিক অভিবাসন ও উন্নয়ন’ শীর্ষক জাতিসংঘের চলতি মাইগ্রেশন উইকে সাধারণ পরিষদের সভাপতি আয়োজিত উচ্চ পর্যায়ের আলোচনায় প্যানেলিস্ট হিসেবে প্রদত্ত বক্তব্যে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব মো.শহিদুল হক রোহিঙ্গা সঙ্কট নিরসনের ক্ষেত্রে বৈশ্বিক অভিবাসন প্রশাসনে ভূ-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের গুরুত্ব তুলে ধরেন। একই সাথে তিনি বাংলাদেশ সরকারের চূড়ান্ত বিবেচনাধীন জাতীয় অভিবাসন কাঠামোর বিষয়ে এই সভাকে অবহিত করেন যা প্রশংসিত হয়।
এর আগে আজ দুপুরে ফ্রেন্ডস অব মাইগ্রেশনের কো-চেয়ারদের আয়োজিত একটি ইভেন্টে সঞ্চালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব। এখানে তিনি মিশ্র অভিবাসন, মানবপাচার, অনিয়মিত অভিবাসনসহ অভিবাসনের জটিল বিষয়গুলো নিরসনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের জাতীয় অভিবাসন কাঠামোর গুরুত্ব তুলে ধরেন।
আইওএম এর মহাপরিচালক অ্যান্তোনিও ভিতোরিনো,জাতিসংঘে নিযুক্ত আয়ারল্যান্ডের স্থায়ী প্রতিনিধিসহ সভাটিতে উপস্থিত সকলে পররাষ্ট্র সচিব উপস্থাপিত বাংলাদেশের এই ধারণার ভূয়সী প্রশংসা করেন। ইভেন্টটিতে আইওএম এর মহাপরিচালক নবগঠিত জাতিসংঘ অভিবাসন ফোরামের অর্জিত সাংগঠনিক অগ্রগতি সম্পর্কে সদস্য রাষ্ট্রসমূহকে অবহিত করেন।
‘আন্তর্জাতিক অভিবাসন ও উন্নয়ন’ শীর্ষক ইভেন্টটিতে প্যানেলিস্ট হিসেবে আরো অংশ নেন জাতিসংঘের ল্যাটিন আমেরিকা ও ক্যারিবিয়ান অঞ্চল সংক্রান্ত্ম অর্থনৈতিক কমিশনের নির্বাহী সচিব মিজ অ্যালিসিয়া বার্সেনা, ইউরোপিয়ান কমিশনের সহযোগিতা ও উন্নয়ন বিষয়ক মহাপরিচালক হেনরিএটি গেইজার, আন্তর্জাতিক মালিক সংস্থার (আইওই) এর মহাসচিব রবার্টো সুয়ারেজ-স্যান্তোস। অনুষ্ঠানটির মডারেটরের দায়িত্বে ছিলেন জাতিসংঘে নিযুক্ত স্পেনের স্থায়ী প্রতিনিধি প্রতিনিধি আগুস্টিন স্যান্তোজ।
সাধারণ পরিষদের সভাপতির সাথে বৈঠক
অবিভাসন সপ্তাহের উচ্চ পর্যায়ের ইভেন্টসমূহে যোগদানের পাশাপাশি আজ জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের সভাপতি (পিজিএ) মারিয়া ফার্নান্দে এস্পিনোসা’র সাথে একান্ত বৈঠক করেন পররাষ্ট্র সচিব শহিদুল হক। অত্যন্ত সৌহার্দপূর্ণ এ বৈঠকে সাধারণ পরিষদের সভাপতি জলবায়ু পরিবর্তন, শান্তির সংস্কৃতি ও রোহিঙ্গা ইস্যুতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সক্রিয় নেতৃত্বের ভূয়সী প্রশংসা করেন। ‘দুর্যোগে বাস্তুচ্যুতি সংক্রান্ত প্লাটফর্ম এর চেয়ারম্যান হিসেবে বাংলাদেশের দায়িত্বশীল ভূমিকারও প্রশংসা করেন তিনি।
আন্তর্জাতিক অভিবাসন রিভিউ ফোরামের কো-ফ্যাসিলেটেটর হিসেবে বাংলাদেশকে মনোনীত করে বাংলাদেশের প্রতি তিনি যে আস্থা রেখেছেন তার জন্য সাধারণ পরিষদের সভাপতিকে ধন্যবাদ জানান পররাষ্ট্র সচিব শহিদুল হক। পররাষ্ট্র সচিব আগামী মে মাসে কক্সবাজারে অনুষ্ঠিতব্য অভিবাসন সংক্রান্ত সম্মেলনে পিজিএকে অংশগ্রহণের আমন্ত্রণ জানান।
জাতিসংঘকে জনগণের সাথে সম্পৃক্ত করার ক্ষেত্রে পিজিএ বাংলাদেশকে দৃষ্টান্ত হিসেবে উল্লেখ করেন। জাতিসংঘের কাজের গুণগত মান বৃদ্ধিতে তিনি বাংলাদেশকে একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হিসেবে আখ্যা দেন। এ প্রেক্ষিতে জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেনের গঠনমূলক ভূমিকার ভূয়সী প্রশংসা করেন সাধারণ পরিষদের সভাপতি (পিজিএ) মারিয়া ফার্নান্দে এস্পিনোসা।
এর আগে গতকাল ইউএন ডেসা আয়োজিত এক্সপার্ট সিম্পোজিয়াম অন ইন্টারন্যাশনাল মাইগ্রেশন এন্ড ডেভোলপমেন্টে অংশ নেন পররাষ্ট্র সচিব। এছাড়া গতকাল সন্ধ্যায় মিশনস্থ বঙ্গবন্ধু মিলনায়তনে ‘অভিবাসন সপ্তাহ’ উপলক্ষে জাতিসংঘে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশন আয়োজিত সম্বর্ধনা অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন পররাষ্ট্র সচিব মো. শহিদুল হক। তিনি তার বক্তব্যে বৈশ্বিক অভিবাসন কম্প্যাক্ট প্রণয়ন ও গ্রহণে সিভিল সোসাইটির তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকার কথা উল্লেখ করেন।
আগামী মে মাসে বাংলাদেশের কক্সবাজারে অভিবাসন সংক্রান্ত দু’দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে মর্মে উল্লেখ করেন পররাষ্ট্র সচিব। অভিবাসি ও শরণার্থী বিষয়ক জাতিসংঘের দুটি কম্প্যাক্টসহ এসডিজি বাস্তবায়নের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় একযোগে কাজ করা এবং আরো সক্রিয় হওয়ার জন্য সুশীল সমাজসহ সকল পক্ষের প্রতি আহ্বান জানান পররাষ্ট্র সচিব।
আগামীকালও অভিবাসন সংক্রান্ত কয়েকটি উচ্চ পর্যায়ের ইভেন্টে অংশ নিবেন পররাষ্ট্র সচিব। উল্লেখ্য গত ২৬ জানুয়ারি থেকে জাতিসংঘের অভিবাসন সপ্তাহ শুরম্ন হয়েছে যা আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চলবে।