ফোন ছাড়া ঘুমাবেন যেভাবে
প্রকাশিত হয়েছে : ৬:৪৪:৪৩,অপরাহ্ন ২০ ডিসেম্বর ২০১৪
লাইফ স্টাইল ডেস্ক:: এখন অনেকেই ঘুমানোর সময় মোবাইল ফোনটি সঙ্গী করে ঘুমান। বালিশের পাশে বা নিচে পড়ে থাকা ফোনটিতে কল এলে আচমকা ঘুম ভেঙে যায়। বিছানায় ফোন সঙ্গী করে ঘুমানোর এই অস্বাস্থ্যকর অভ্যাসটি থেকে মুক্তি পেতে এবং শান্তিমতো ঘুমাতে বেশ কিছু পরামর্শ দিয়েছেন প্রযুক্তি বিশ্লেষকেরা।প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যাঁরা ফোন পাশে রেখে ঘুমান, আগে সেটা বন্ধ করতে হবে। ফোন থেকে নীল রঙের যে আলো নির্গত হয়, তা মস্তিষ্ককে জাগিয়ে রাখে বলে ঘুম নষ্ট হয়। যদিও কম্পিউটার, ল্যাপটপ বা ট্যাব থেকেও এ ধরনের আলো নির্গত হয়, কিন্তু ঘুমানোর আগে আপনার ছোট স্মার্টফোনটির ব্যবহারে ক্ষতি বেশি হয়।আরেকটি বিষয় মনে রাখতে হবে। তা হচ্ছে, মোবাইল থেকে নির্গত হওয়া রেডিয়েশন বা তরঙ্গের বিকিরণের বিষয়টি। অবশ্য মোবাইল থেকে নির্গত রেডিয়েশনে ক্যানসার বা এ-জাতীয় কোনো সমস্যা সৃষ্টির বিষয়ে গবেষকেরা নির্দিষ্ট উপসংহারে পৌঁছাননি। তবে কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, ফোনের এই রেডিয়েশনের কারণে ঘুম চক্র নষ্ট হয়। তাই ভালোমতো ঘুমাতে হলে ফোনটি দূরে রাখাই ভালো হবে।অনেকেই বালিশের নিচে বা ঘুমানোর সময় হাতের নাগালে ফোনটি রাখেন যাতে সহজেই তা পাওয়া যায়। কিন্তু কীভাবে এই অভ্যাসটি দূর করবেন?অ্যালার্ম ঘড়ি হিসেবে ফোন ব্যবহারঅনেকেই মোবাইল ফোনটিকে অ্যালার্ম ঘড়ি হিসেবে ব্যবহার করেন। ঘুম ভাঙানোর জন্য এখন অ্যালার্ম ঘড়ির জায়গা দখল করেছে মোবাইল ফোন। যাঁরা এ কাজ করেন তাঁরা রাতে ঘুমানোর বালিশের পাশে কিংবা বিছানার ওপর ফোন না রেখে কিছু দূরে কোনো কিছুর ওপরে ফোনটি রাখুন। এতে ফোনের রেডিয়েশন থেকে ঘুম নষ্ট হবে না। এ ছাড়াও যখন অ্যালার্ম বাজবে তখন আপনাকে উঠে গিয়ে ফোন বন্ধ করতে হবে তাই অলসতা সহজেই কেটে যাবে।গুরুত্বপূর্ণ কল বা বার্তা শোনার অপেক্ষা অনেকে মনে করেন রাতে গুরুত্বপূর্ণ কল বা মেসেজ আসতে পারে তাই ফোনটি হাতের কাছে রেখে দেন। জরুরি দরকারে যাতে হাতের কাছে ফোনটি থাকে সে জন্য সারা রাত ফোনটি চালু রাখেন। সমাধান হিসেবে একেবারে মাথার কাছে না রেখে ফোনটি বেশ কিছুটা দূরে রাখতে পারেন। এ ক্ষেত্রে ‘ডু নট ডিস্টার্ব’ মোডটি কাজে লাগাতে পারেন। আইফোন, অ্যান্ড্রয়েডনির্ভর ফোন বা উইন্ডোজ ফোনে এ ফিচারটি পাওয়া যায়। এতে নির্দিষ্ট কিছু নম্বর আগে থেকে প্রোগ্রাম করে রাখা যায়। শুধু জরুরি দরকারে ওই নম্বরগুলো থেকে যোগাযোগ করা যাবে। এটি সেট করাও সহজ।আইওএসের সেটিংস থেকে ডু নট ডিস্টার্ব ফিচারটি ম্যানুয়ালি চালু করে দিতে পারেন এবং কন্ট্যাক্ট নম্বর নির্বাচন করে দিতে পারেন। অধিকাংশ অ্যান্ড্রয়েড ফোনেই সেটিংস থেকে ব্লক মোড বা ডু নট ডিস্টার্ব মোড চালু করা যায়। আপনি কার কাছ থেকে কী ধরনের নোটিফিকেশন পেতে চান, তা নির্ধারণ করে দিতে পারেন। অ্যান্ড্রয়েড ৫.০ চালিত ডিভাইসগুলোতে ভলিউম লকারে চাপ দিয়ে প্রায়োরিটি মোড চালু করে নোটিফিকেশন বন্ধ করে দেওয়া যাবে। উইন্ডোজ ফোনেও কোয়াইট আওয়ারস মোড নামে একটি ফিচার থেকে এই সুবিধা পাওয়া যাবে।গান শুনতে শুনতে ঘুমঅনেকেই মোবাইল ফোনে গান চালিয়ে তা শুনতে শুনতে ঘুমান। দেখা যায়, মোবাইল ফোনের সঙ্গে হেডফোন লাগিয়ে তা কানে দিয়ে ঘুমানোর আগে গান চালাচ্ছেন অনেকেই। এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে ভালো হয় ব্লুটুথ হেডফোনের ব্যবহার। আপনার ফোনটিকে দূরে রেখে আপনি ব্লুটুথ হেডফোন দিয়ে গান শুনতে পারেন। অনেক ব্লুটুথ হেডফোন দিয়ে ১০ মিটার দূর থেকেই গান শোনার সুবিধা রয়েছে। রাতে ঘুমানোর আগে তাই ফোন নির্দিষ্ট জায়গায় রেখে ব্লুটুথ হেডফোন দিয়ে গান শুনতে পারেন। বাজারে ঘুমানোর সময় কাজে লাগে—এমন বিশেষ নকশার হেডফোনও পাওয়া যায়।ফেসবুক চালাতে চালাতে ঘুমঅনেকেই ফেসবুক চালাতে চালাতে ফোন চালু রেখেই ঘুমিয়ে যান। আবার অনেকেই ঘুমানোর আগে দীর্ঘ সময় মেইল ব্যবহার করেন বা গেম খেলেন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ ধরনের অভ্যাস ঘুমানোর জন্য মোটেও ভাল নয়। এতে মানসিক চাপ বাড়তে থাকে। আপনার ফোন ব্যবহার সীমিত করুন। রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে ফোন নিয়ে যাবেন না। হাতের কাছে ফোন থাকলে তা বারবার ব্যবহার করার আগ্রহ বাড়বে। আপনার ফোন রাখার জন্য একটি নির্দিষ্ট জায়গা বরাদ্দ রাখুন। যেখানে চার্জার, হেডফোন বা অন্যান্য টুকিটাকি দরকারি জিনিসপত্র রাখেন আপনার মোবাইল ফোনটিও সেখানেই রেখে দিতে পারেন।ফোন ব্যবহারের সময়সীমা ঠিক করুন আপনি কতক্ষণ মোবাইল ফোন ব্যবহার করবেন তার একটি দৈনন্দিন রুটিন তৈরি করুন। আপনি বাড়িতে ঢুকেই কতক্ষণ ফোন চালাবেন, তা ঠিক করে নিন এবং কখন ঘুমাতে যাবেন—সময় নির্দিষ্ট করে রাখুন। প্রতিদিন নির্দিষ্ট ওই সময়ের মধ্যেই কেবল ফোন ব্যবহার করবেন আর রাতের বাকি সময়টাতে সকাল না হওয়া পর্যন্ত আর ফোন স্পর্শ করবেন না। এটা যদি অভ্যাস হিসেবে গড়ে ওঠে, তখন আপনার ফোনটিকে সব সময় বিছানার পাশে হাতড়ে বেড়াতে হবে না কিংবা ঘুমের বিঘ্ন হবে না। মোবাইলে ক্যান্ডি ক্রাশ খেলে ঘুমাতে যাওয়ার চেয়ে কোনো একটি বই হাতে তুলে নিতে পারেন, যাতে মস্তিষ্ক কিছুতেই বিক্ষিপ্ত না হয়। এবার ঘুমাবেন শান্তিতেই।