পুলিশ হেফাজতে আসামীর মৃত্যু, পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ
প্রকাশিত হয়েছে : ৩:১০:২৭,অপরাহ্ন ৩০ মে ২০১৫
নিউজ ডেস্ক::
চট্টগ্রাম: নগরীর কোতোয়ালী থানা হাজতে ইসহাক মিয়া(৫০) নামে এক আসামীর মৃত্যু হয়েছে। পরিবারের অভিযোগ, থানায় পুলিশ পিটিয়ে তাকে হত্যা করেছে। শনিবার সকাল পৌনে নয়টার দিকে থানা হাজতের বাথরুমে ভেন্টিলেটরের সঙ্গে ঝুলানো অবস্থায় তার লাশ উদ্ধার করেছে বলে দাবি পুলিশের।
পুলিশ জানায়, ইসহাক মিয়া ডে নাইট সিকিউরিটি সার্ভিস নামে একটি বেসরকারি নিরাপত্তা সংস্থায় কর্মরত ছিলেন। সংস্থাটির হয়ে নগরীর নন্দনকানন এলাকায় কোমলপানীয় পরিবেশক জাহিদ এন্টারপ্রাইজের নৈশ প্রহরীর দায়িত্বে ছিলেন। বুধবার (২৭ মে) রাতে জাহিদ এন্টারপ্রাইজে চুরির ঘটনা ঘটে। এ অভিযোগে ইসহাক মিয়াকে আসামী করে থানায় মামলা করে প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপক জাকির খান।
জাকিরখান বলেন,‘রাতে দায়িত্বপালনের পর ইসহাক মিয়া বৃহস্পতিবার সকালে চলে যায়। সকালে এসে দেখি কলাপসিবল গেইটের লোহা বাকানো। কেবিনেট ফাইল ভাঙ্গা। ভল্ট ভাঙ্গার চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু পারেনি। কোন টাকা পয়সা খোয়া যায়নি। খুচরা ৪ থেকে ৫ হাজার টাকা চুরি হতে পারে। বিষয়টি ডে নাইট সিকিউরিটিকে জানায়। তাদেরকে ব্যবস্থা নিতে বলি।’ কিন্তু জাকিরখান মামলার এজাহারে ১০হাজার টাকা চুরির কথা উল্লেখ করেন।
ডে নাইট সিকিউরিটির মালিক আবদুল জলিল বলেন,‘জাহিদ এন্টারপ্রাইজের লোকজন ইসহাককে হাজির করতে বলে। শুক্রবার সন্ধ্যায় তাকে জাহিদ এন্টারপ্রাইজে নিয়ে যায়। সেখান থেকে আমি ও প্রতিষ্ঠানটির লোকজন তাকে থানায় নিয়ে যায়। আমি অসুস্থ হয়ে পড়ায় থানা থেকে চলে আসি। পরে কি হয়েছে আমি জানি না।’
কোতোয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জসীম উদ্দিন বলেন,‘শুক্রবার রাত নয়টার দিকে প্রতিষ্ঠানটির লোকজন ইসহাককে ধরে নিয়ে আসে থানায়। এরপর একই ঘটনায় ওমর ফারুক নামে আরেকজনকে আটক করা হয়। ভিন্ন ঘটনায় গোয়েন্দা পুলিশ এক আসামীকে নিয়ে আসে। তিনজনই রাতে থানা হাজতে ছিল। সকালে গোয়েন্দা পুলিশ তাদের আসামীকে নিয়ে যায়। ’
তিনি বলেন,‘শনিবার সকালে হাজতের দায়িত্বে থাকা সেন্ট্রি আসামীদের খোঁজ নিতে গিয়ে দেখে ওমর ফারুক মেঝেতে শুয়ে আছে। ইসহাক মিয়া নেই। তার খোঁজ জানতে চাইলে ওমর ফারুক জানায় সে বাথরুমে গেছে। বাথরুম খুলে দেখে ভেন্টিলেটরের সঙ্গে শার্ট পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করেছেন তিনি। ’
তবে ইসহাক মিয়ার ভাই দীন মোহাম্মদ বলেন,‘বুধবার রাতে দায়িত্বপালন শেষে বৃহস্পতিবার সকালে সে বাড়িতে চলে যায়। ওই দিন সিকিউরিটি সার্ভিসের লোকজন তাকে ফোন করে নিয়ে এসে থানায় নিয়ে যায়। শুক্রবার সকালে থানায় তার সঙ্গে দেখা করি। রাত ১০টা পর্যন্ত আমরা থানায় ছিলাম। আমরা চলে আসার পর রাতে পুলিশ পিটিয়ে আমার ভাইকে হত্যা করেছে।’ শুক্রবার রাতে কর্তব্যরত এক পুলিশ সদস্য ঘুষ চেয়েছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
দীন মোহাম্মদ বলেন,“থানায় নিয়ে আসার পর ভাইয়ের স্ত্রী জাহিদ এন্টারপ্রাইজের লোকজনের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তারা জানান ‘ইসহাকের শিক্ষা হওয়ার জন্য টাকা দিয়ে কয়েক দিনের জন্য থানায় রেখেছি।”
ইসহাক মিয়ার প্রতিবেশী আসিফ ইকবাল বাংলানিউজকে বলেন,‘উনি কষ্ট করে ছেলে মেয়েদের পড়ালেখা করান। এধরণের ঘটনার সঙ্গে তিনি কোনভাবে জড়িত নন। তাকে ফাঁসানো হয়েছে। ’ লাশের সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করেছেন জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রাজীব উল হাসান।
তিনি বলেন,‘মৃতের শরীরে কোন কাপড় ছিল না। সাদা চেক শার্টের একাংশ গলার সঙ্গে বাধা অবস্থায় ছিল। গলার ডান পাশে এক ইঞ্চি মতো মোটা একটা কালো দাগ আছে। কপালের কিছু অংশে চামড়া ছিড়ে গেছে। ডান পাশে বুকের নিচে পেটের উপরে একটা কালো আঘাতের চিহ্ন ছিল। এছাড়া শরীরে আর কোন আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি।’ ইসহাক মিয়া জালাল উদ্দিন সওদাগরের ছেলে। তার বাড়ি কর্ণফুলী থানার শিকলবাহা এলাকায়। তিনি এক মেয়ে দুই সন্তানের জনক ছিলেন।