পরিবেশ দূষণে বেপরোয়া বিএসআরএম
প্রকাশিত হয়েছে : ৬:২৯:০৬,অপরাহ্ন ০১ ডিসেম্বর ২০১৪
নিউজ ডেস্ক::
বারবার জরিমানার পরও শোধরাচ্ছেনা দেশের বৃহত্তম লোহার রড তৈরির কারখানা বাংলাদেশ স্টিল রি-রোলিং মিল (বিএসআরএম)।
পাহাড় কাটায় প্রায় ৫০ লাখ টাকা অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হবার দু’বছর না যেতেই আবার বায়ূ দূষণের জন্য শাস্তি পেল প্রতিষ্ঠানটি।
রোববার ত্রুটিপূর্ণভাবে ডাস্ট এক্সট্রাকশন সিস্টেম এর মাধ্যমে কারখানা পরিচালনা করায় বিএসআরএমকে ১৫ লাখ টাকা জরিমানা করে পরিবেশ অধিদপ্তর।
বিএসআরএম প্রতিনিধির উপস্থিতিতে ঢাকা সদরদপ্তরে শুনানী শেষে পরিবেশ ও প্রতিবেশগত ক্ষতিসাধণের দায়ে প্রতিষ্ঠানটিকে এ জরিমানা করেন পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক (মনিটরিং ও এনফোর্সমেন্ট) মো. আলমগীর হোসেন।
বায়ু দূষণে দায়ী এ লোহার রড তৈরির প্রতিষ্ঠানটি এর আগে শিল্প স্থাপনের নামে পাহাড় ও সবুজ বনানী কেটে পরিবেশ ধ্বংস করার অপরাধেও দণ্ডিত হয়েছিল।
গত ১৮ নভেম্বর পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক মো. আলমগীর নেতৃত্বে একটি টিম বন্দরনগরীতে অবস্থিত কারখানাটিতে অভিযান চালায়। অভিযান চলাকালে প্রতিষ্ঠানির অনিয়ম ও পরিবেশ দূষণের বিষয়টি ধরা পড়ে। পরে এ বিষয়ে শুনানীতে অংশ নিতে প্রতিষ্ঠানটিকে নোটিশ ইস্যু করা হয়েছিল।
শুনানীতে অংশ নিয়ে বিএসআরএম‘র প্রতিনিধি অপরাধ স্বীকার করে ক্ষমা প্রার্থনার পাশাপাশি প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের অঙ্গীকার করেছে বলে জানান পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক (মনিটরিং ও এনফোর্সমেন্ট) মোহাম্মদ হাফিজুর রহমান।
তিনি জানান, একইদিন বিএসআরএমসহ চট্টগ্রামের সাতটি কারখানাকে মোট ৬৬ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে রয়েছে দুইটি পেপার অ্যান্ড বোর্ড মিল, দুইটি ডাইং মিল ও দুইটি ফিস প্রসেসিং মিল।
সবগুলো প্রতিষ্ঠানই পরিবেশ ও প্রতিবেশের ক্ষতিসাধনে নিজেদের দোষ স্বীকার করেছেন।
অন্যপ্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে কর্ণফুলী নদী দূষণ ও ইটিপি বন্ধ রেখে অপরিশোধিত তরল বর্জ্য নদীতে ফেলায় নন্দীরহাটের চিটাগাং এশিয়ান পেপার মিলকে আট লাখ, বায়েজিদের সুপার নিটিং অ্যান্ড ডাইংকে ১৩ লাখে ও এম এ রহমান ডাইং মিলকে পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।
এছাড়া ত্রুটিপূর্ণ ইটিপির মাধ্যমে কারখানা পরিচালিত করে বঙ্গোপসাগরকে দূষিত করায় সাগরিকার অ্যাপেক্স ফূডকে ১৫ লাখ, গাহরিয়া রোডের সি মার্ককে পাঁচ লাখ এবং অক্সিজেনের ম্যাক পেপার অ্যান্ড বোর্ড মিলসকে পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে বিএসআরএমকে এর আগে ২০১২ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়নের মস্তাননগরে বিস্তির্ণ এলাকার পাহাড় ও সবুজ বনানী কেটে ধ্বংস করার অপরাধে ৪০ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেছিল পরিবেশ অধিদপ্তর।
প্রতিষ্ঠানটি ওই এলাকার প্রায় ৬ একর পাহাড়ি জায়গার অধিকাংশই সমতল ভূমিতে পরিণত করেছিল। ওই সময় এলকাটিতে প্রায় ৫৬ একর পাহাড়ি ও সমতল জমিতে স্টিল মিল এবং একটি বিদ্যুতকেন্দ্র গড়ে তোলার কাজ শুরু করে বিএসআরএম।
প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে এ কাজের পরিবেশ ছাড়পত্র নিয়েও প্রতারণার অভিযোগ উঠেছিল।
নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক বিভাগীয় পরিবেশ অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা বলেন,পরিবেশ অধিদপ্তরের দেয়া অবস্থানগত ছাড়পত্রে পাহাড়ের আকৃতি ঠিক রেখে শিল্প স্থাপনের কথা বলা হয়। কিন্তু অবস্থানগত ছাড়পত্র নেয়ার পর বিএসআরএম শর্ত লঙ্ঘন করে প্রস্তাবিত জায়গায় টিলা ও পাহাড় কেটে পুরো সমতল ভূমিতে পরিণত করে।
তিনি বলেন, একাধিকবার দণ্ডিত করার পরও প্রতিষ্ঠানটি শোধরায়নি। তারা বেপরোয়াভাবে পরিবেশ দূষণ অব্যাহত রেখেছে।
এর আগে, চট্টগ্রাম নগরীতে সড়ক বিভাজক (রোড ডিভাইডার) হিসেবে পুলিশের ব্যবহার করা বিএসআরএম’র তৈরি ‘কোন’ নিয়েও অভিযোগ উঠেছে।
পুলিশকে যে ওজনের কোন সরবরাহ করার কথা, তার চেয়ে কম ওজনের কোন দিয়ে প্রতিষ্ঠানটি পুলিশের সঙ্গেও প্রতারণা করেছে বলে অভিযোগ আছে।