নিসর্গপ্রেমীদের প্রিয় নাগলিঙ্গম ফুল
প্রকাশিত হয়েছে : ১২:৪০:১৮,অপরাহ্ন ১০ ডিসেম্বর ২০১৪
দৃষ্টিনন্দন নাগলিঙ্গম ফুল এবং ফল। ছবিটি লেখক কর্তৃক বাংলাদেশ টি রিসার্স ইনস্টিটিউট থেকে তোলা
হাবিবুর রহমান স্বপন : বিশাল বা সুউচ্চ নাগলিঙ্গম গাছের কান্ড বেশ মোটা। উচ্চতায় গাছটি প্রায় ৮০ ফুট পর্যন্ত হতে পারে। এর গুচ্ছ পাতাগুলো লম্বায় সাধারণত ৫-৭ ইঞ্চি লম্বা এবং ৪-৫ ইঞ্চি চওড়া। পাতার রং গাঢ় সবুজ। বছরের প্রায় সব ঋতুতেই এই গাছের পাতা ঝরে এবং পরে নতুন করে গজায়। নাগলিঙ্গমের আরো দুটি ভিন্ন প্রজাতির নাম হলো- নাগেশ্বর এবং নাগকেশর।
নাগলিঙ্গম গাছে তীব্র মিষ্টি ঘ্রাণযুক্ত বড় বড় ফুল হয়। ফুলের পরাগচক্র বিশেষ বাঁকানো। সাপের ফণার মতো এবং বড় আকৃতির ফুল থেকে বড় গোল (অনেকটা বেলের মতো দেখতে) ফল হয়। এই ফল হাতির খুবই প্রিয়। এ জন্য এর অন্য নাম ‘হাতির জোলাপ গাছ’। নাগলিঙ্গম ত্রিনিদাদ এবং ল্যাটিন আমেরিকায় বেশি দেখা যায়। দক্ষিণ আমেরিকার উষ্ণ এলাকায় এর আদি নিবাস। ভারতে এ গাছের দেখা মেলে আজ থেকে প্রায় আড়াই হাজার বছর আগে। ক্রমশ তা বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা শিব পূজায় নাগলিঙ্গম ফুল ব্যবহার করে। বৌদ্ধদের মন্দিরেও এই ফুলের যথেষ্ট কদর রয়েছে। এ কারণে থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা, মায়ানমারের বৌদ্ধ মন্দির প্রাঙ্গনে নাগলিঙ্গম গাছ বেশি দেখা যায়।
ভেষজ গুণসম্পন্ন নাগলিঙ্গম গাছের ফুল, পাতা ও বাকলের নির্যাস থেকে বিভিন্ন ধরনের ওষুধ হয়। এন্টিবায়োটিক, এন্টিফাঙ্গাল, এন্টিসেপটিক হিসেবে ব্যবহার করা হয় এর নির্যাস। এই গাছ থেকে তৈরি ওষুধ পেটের পীড়া দূর করে। পাতার রস ত্বকের নানা সমস্যায় কাজ দেয়। ম্যালেরিয়া রোগ নিরাময়ে নাগলিঙ্গমের পাতার রস ব্যবহার হয়। চারা রোপণের ১২-১৪ বছর পর নাগলিঙ্গম গাছে ফুল ধরে। গ্রীষ্মকাল এবং বর্ষাকালে ফুল ফোটে। গাছের কান্ডের সঙ্গে ঝুলে থাকে অসংখ্য মঞ্জুরি। প্রায় ৭ ফুট দীর্ঘ মঞ্জুরিতে বড় বড় গোলাকার ফুল ধরে। ৬টি পাপড়িবিশিষ্ট ফুলের ব্যাস ২-৩ ফুট। পাপড়িগুলো বাঁকানো এবং পুরু। গোখরা সাপের মতো ফণা তোলা ফুলের ভেতরের দিক গাঢ় গোলাপী এবং বাইরের দিক হালকা হলুদ বর্ণের। এই ফুলের আলাদা একটি সৌন্দর্য লক্ষ্যণীয়, আর তা হলো এর সুগন্ধ।
সাপের মতো ফণা তোলা ফুল, এ কারণে এর নামকরণ হয়েছে নাগলিঙ্গম। বাংলাদেশে নাগলিঙ্গম খুব একটা দেখা যায় না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে দুটি নাগলিঙ্গম গাছ আছে। একটি ভূতত্ত্ব বিভাগের পাশে, অপরটি কার্জন হল প্রাঙ্গণে। এ ছাড়াও সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, রমনা পার্ক, বলধা গার্ডেন, লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান এবং চন্দ্রিমা উদ্যানে বিভিন্ন বয়সী কয়েকটি নাগলিঙ্গম গাছ আছে। শ্রীমঙ্গলের চা গবেষণা ইনস্টিটিউট ভবনের ঠিক সামনে রয়েছে বিশাল একটি নাগলিঙ্গম গাছ। বান্দরবান এবং কক্সবাজারের কয়েকটি বৌদ্ধ মন্দির প্রাঙ্গণেও এ গাছ দেখা যায়।
দ্রুত বর্ধনশীল নাগলিঙ্গম গাছের বাকলের রং ধূসর এবং অসমান। গাছটির গোড়ার দিকে প্রায় ১৮ ফুট ব্যাসবিশিষ্ট হয় এবং কান্ড হয় ২৫-৩০ ফুট দীর্ঘ। গাছটির ফুল বিস্ময়কর সুন্দর! যেমন বড় তেমন চোখ জুড়ানো রং। নাগলিঙ্গম ফল বড় বেলের মতো। ওজন প্রায় চার কেজি পর্যন্ত হয়। ক্যনন বলের মতো দেখতে, তাই এর ইংরেজি নাম ক্যাননবল। দ্বিস্তরে পুরু আবরণে ঢাকা ফল পাকলে গাছ থেকে পরে। তবে কারও মাথায় পরলে মারাত্মক ক্ষতি বা জখম হওয়ার আশঙ্কা। ফলের শাঁস ঝাঁঝালো গন্ধযুক্ত। আমাদের দেশে অনেকেই এই গাছকে নাগেশ্বর বলে জানেন। নাগেশ্বর কিন্তু নাগলিঙ্গম থেকে একটু আলাদা।