নিটার শিক্ষার্থীদের ‘মারধর করে’ ক্যাম্পাস ছাড়েন অবরুদ্ধ শিক্ষক-কর্মকর্তারা
প্রকাশিত হয়েছে : ১০:০৫:৩৩,অপরাহ্ন ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪
ঢাকার সাভারে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড রিসার্চের (নিটার) শিক্ষার্থীরা নানা দাবিতে তিন দিন ধরে আন্দোলন চালিয়ে আসছিলেন।
মো. আবদুল্লা আল আমীন
সোমবার (২ সেপ্টেম্বর) সাবেক অধ্যক্ষ ও তার অনুসারীদের পদত্যাগসহ বিভিন্ন দাবিতে প্রশাসনিক ভবন অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন তারা। এ ঘটনার পর মঙ্গলবার (৩ সেপ্টেম্বর) প্রতিষ্ঠানটির অবরুদ্ধ শিক্ষক-কর্মকর্তারা শিক্ষার্থীদের মারধর করে আহতের পর ক্যাম্পাস ত্যাগের অভিযোগ উঠেছে।
প্রতিবাদে মঙ্গলবার সকালে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের নয়ারহাট এলাকায় সড়ক অবরোধ করে ১ ঘণ্টা ধরে বিক্ষোভ করেন নিটারের শিক্ষার্থীরা। এতে মহাসড়কে যানচলাচল বন্ধ হয়ে গেলে সেনাবাহিনীর সদস্যদের আশ্বাসে সড়ক থেকে সরে যান শিক্ষার্থীরা।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা বলেন, ‘সোমবার আমাদের যে ১৮টি দাবি ছিল, সেগুলো বিটিএমসির চেয়ারম্যান ব্রিগেডিয়ার জিয়াউল স্যার শুনেছেন। তিনি আমাদের মৌখিক দাবিগুলো লিখিত আকারে দিতে বলেছিলেন। সোমবার রাতেই আমরা লিখিত দিয়েছি। কিন্তু নিটারের সাবেক অ্যাডভাইজার ড. মিজানুর রহমানের অনুসারী ১৪ জন শিক্ষকের পদত্যাগ ও বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালে ছাত্রদের কর্মকাণ্ডের তথ্যগুলো ডিরেক্টরসহ কর্মকর্তারা যারা স্থানীয় এমপিসহ অন্যান্যদের সরবরাহ করেছেন তাদের অপসারণ; এই প্রধান ২টা দাবির ব্যাপারে এখনও স্পষ্ট করা হয়নি।’
তারা আরও বলেন, ‘আজ আমাদের কোনো কর্মসূচি ছিল না। সোমবার রাতে আমাদের দাবির আওতাভুক্ত ১৪ জন শিক্ষকের পদত্যাগপত্র দিতে পারেননি। তাই তারা ক্যাম্পাসের ভেতরেই ছিলেন। আমরা তাদের খাবারের ব্যবস্থা করে পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু আজ সকালে বৃষ্টি শুরুর পর অবস্থানরত কিছু শিক্ষার্থী রুমে চলে গিয়েছিলেন। কিছু মেয়ে শিক্ষার্থী ভেতরের পকেট গেটে আর ছেলেরা মেইন গেটে অবস্থান করছিলেন। তখন শতাধিক শিক্ষক ও পরিচালক একসঙ্গে বের হয়ে মেয়ে শিক্ষার্থীদের মেরে পকেট গেটের তালা ভেঙে বের হয়ে যান। এরপর মেইন গেটে ছেলে শিক্ষার্থীদেরও লাথি-ঘুসি মেরে আহত করে শিক্ষকরা চলে যান। আমাদের ৭ থেকে ৮ জন শিক্ষার্থী আহত অবস্থায় এখন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। পরে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা নিটারের সামনে ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করেন। এরপর সেনাবাহিনীর সদস্যরা সেখানে এসে আমাদের আশ্বস্ত করলে সড়ক থেকে অবরোধ তুলে নেয়া হয়।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নিটারের এক শিক্ষক বলেন,
গত ১ সেপ্টেম্বর থেকে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন দাবিতে আমাদের ক্যাম্পাসে অবরুদ্ধ করে রাখেন। আমরা এক কাপড়ে দেড়শ জন শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী সেখানে আটকা ছিলাম। সোমবার গভীর রাত পর্যন্ত তাদের দাবি- দাওয়া নিয়ে আলোচনা হয়েছে। শিক্ষার্থীরা কোনো প্রকার প্রমাণ ছাড়াই অনেক শিক্ষকের নামের তালিকা নিয়ে তাদের জোরপূর্বক পদত্যাগের জন্য চাপ দিচ্ছেন। কর্তৃপক্ষ তাদের দাবির বিষয়ে যাচাই-বাছাইয়ের জন্য সময় চাইলেও শিক্ষার্থীরা একদিনের আলটিমেটাম বেঁধে দিয়েছে।
শিক্ষার্থীদের মারধর করে ক্যাম্পাস ত্যাগের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা যেহেতু এখানে আটকে আছি, অনেকের ফ্যামিলি ও বাচ্চারা কান্নাকাটি করছেন। তখন শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সবাই এক হয়ে বলছেন, শিক্ষার্থীরা একেকবার একেক দাবি- দাওয়া নিয়ে আসছেন এবং ওরা কিছু মানছেন না। পরে সবাই গণপদত্যাগ পত্রে স্বাক্ষর করে সকাল সাড়ে ৯টার দিকে ক্যাম্পাস থেকে বের হয়ে আসেন। এ সময় শিক্ষার্থীরা সবগুলো গেটে তালা দিয়ে আটকে রেখেছিলেন, সেগুলো ভেঙে সবাই বের হয়েছেন। তখন শিক্ষার্থীরা দুই শিক্ষককে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়ে আহত করেছেন। আমরা সবাই এখন বিটিএমসিতে এসেছি।’
ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড রিসার্চের (নিটার) ডিরেক্টর ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইইই ডিপার্টমেন্টের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জুনাইবুর রশীদ মানসিকভাবে অসুস্থতার কারণে কথা বলতে রাজি হননি।