নগরীতে বছরে ৫০০ কোটি টাকার অবৈধ বিলবোর্ড বাণিজ্য!
প্রকাশিত হয়েছে : ৫:৪৭:১৭,অপরাহ্ন ২১ নভেম্বর ২০১৪
নিউজ ডেস্ক:: নগরীতে রাতের অন্ধকারে অবৈধ বিলবোর্ড বসিয়ে বছরে প্রায় ৫০০ কোটি টাকা আয় করছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। বছরের পর বছর ধরে নগরীর অবৈধ এসব বিলবোর্ড ভাড়া দিয়ে শতশত কোটি টাকা হাতিয়ে নিলেও সেখান থেকে এক কানাকড়িও পায়নি চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক)।
চসিক থেকে নগর পুলিশকে হস্তান্তর করা নথিতে নগরীর ৪২২ টি অবৈধ বিলবোর্ডের বাৎসরিক ভাড়া প্রায় ১০১ কোটি ২ লক্ষ ৮০ হাজার টাকা বলে বলা হয়েছে। কিন্তু খোঁজ নিয়ে জানা গেছে- নগরীতে ছোট-বড় সাইজের অবৈধ বিলবোর্ডের সংখ্যা প্রায় দুই হাজার।
সেই হিসেবে নগরীর বিভিন্ন জায়গায় স্থাপন করা ছোট-বড় অবৈধ বেলবোর্ড, মিনি সাইনবোর্ড, মেগা সাইনবোর্ড, বিলবোর্ড ও ইউনিপোল বোর্ড ভাড়া দিয়ে বাৎসরিক প্রায় ৪৮০ কোটি টাকা আয় করছে ওই চক্র।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সিটি কর্পোরেশনের রাজস্ব বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেন, আমরা আপাতত ৪২২টি অবৈধ বিলবোর্ডের একটি তালিকা করেছি। তবে নগরীর অবৈধ বিলবোর্ডের প্রকৃতসংখ্যা কত জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখনো তালিকা চুড়ান্ত হয়নি। এই সংখ্যা ২ হাজারের অধিক হবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, হতে পারে।
গত ১৬ নভেম্বর থেকে নগরীতে শুরু হয়েছে অবৈধ বিলবোর্ড উচ্ছেদ অভিযান।
নগরীর সৌন্দর্য রক্ষায় নগরবাসীর দীর্ঘদিনের জোর দাবির প্রেক্ষিতে অবৈধ বিলবোর্ড উচ্ছেদে গত ১৬ নভেম্বর থেকে অবশেষে মাঠে নামে নগর পুলিশ ও সিটি কর্পোরেশন। আজ বৃহস্পতিবার পর্যন্ত চালানো ওই উচ্ছেদ অভিযানে ইউনিপোল (রাস্তার মাঝখানের বিলবোর্ড) সহ প্রায় ৩০টি ছোট-বড় বিলবোর্ড উচ্ছেদ করা হয়। এর মধ্যে নগরীর ওয়াসা ও লালখানবাজার এলাকা থেকে ৫টি, টাইগারপাস এরাকা থেকে ৩টি, প্রবর্তকমোড় ও মির্জার পুল এলাকা থকে ৫টি এবং আজ বৃহস্পতিবার আগ্রাবাদ ও দেওয়ানহাট ডিটি রোড এলাকা থেকে ইউনিপোল বোর্ডসহ ১৭টি বিলবোর্ড উচ্ছেদ করা হয়েছে।
কর্পোরেশন সূত্রে জানা গেছে, নগরীতে অনুমোদিত বিলবোর্ডের আকার দৈর্ঘ্যে-প্রস্থে ২০ বাই ৪০ ফুট, ১০ বাই ২০ ফুট এবং ইউনিপোল বোর্ড ১৫ বাই ৩০ ফুট হওয়ার কথা থাকলেও কর্পোরেশনের সে আইন মানেননি বিজ্ঞাপনি এজেন্সিগুলো। নগরীতে বিজ্ঞাপনে ভাড়া দেয়ার জন্য মিনি সাইনবোর্ড, মেগা সাইনবোর্ড, বিলবোর্ড, ইউনিপোল বোর্ড ও বেল সাইনবোর্ড রয়েছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে নগরীর জিইসি, ২ নাম্বার গেইট, আগ্রবাদ, টাইগারপাস, নিউমার্কেট এলাকাসহ নগরীর বেশ কিছু এলাকায় অনুমোদিত আকারের দুই থেকে তিন গুণ বড় বিলবোর্ড বসিয়েছে এজেন্সির মালিকরা। এর মধ্যে সর্বোচ্চ ৩০ ফুট বাই ৬০ ফুট আকারের বিলবোর্ড রয়েছে।
নগরীতে সে হিসেবে প্রতিটি বিলবোর্ড গড়ে ২০ বাই ৩০ ফুট ধরা হলে নগর পুলিশের ৪ অভিযানে উচ্ছেদকৃত বিলবোর্ডের বর্তমান বাৎসরিক বাজার মূল্য (ভাড়া) ৭২ লক্ষ টাকা।
সিটি কর্পোরেশন সূত্রে জানা যায়, কোনো বিলবোর্ড বসাতে হলে প্রতি বর্গফুটের জন্য কর্পোরেশনের বাৎসরিক ভাড়া কর্পোরেশনের নিজস্ব জমিতে ৫০ টাকা এবং ব্যক্তি মালিকানাধীন ও কোম্পানি মালিকানাধীন জমির ক্ষেত্রে সেই হার ২৫ টাকা। সেই হিসেবে ২০ বাই ৩০ ফুটের একটি বিলবোর্ডের ক্ষেত্রে কর্পোরেশন বাৎসরিক ভাড়া গ্রহণ করে মাত্র ৩০ হাজার টাকা। ব্যাক্তি মালিকানাধীন জমি থেকে মাত্র ১৫ হাজার টাকা। অপর পক্ষে প্রতিটি বিজ্ঞাপনি সংস্থা বাৎসরিক আয় করে বিজ্ঞাপন প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান একেকটি বিলবোর্ড থেকে আয় করে বছরে কমপক্ষে ২ লক্ষ ৪০ হাজার টাকা।
অভিযোগ রযেছে- শত কোটি টাকার এই বাণিজ্য থেকে সিটি কর্পোরেশন ও সরকার এক পয়সা না পেলেও এই বিলবোর্ড বাণিজ্য করে নগরীতে আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হয়েছেন অনেকেই। এর মধ্যে সরকারি দলের নেতা-কর্মীরা যেমন রয়েছেন তেমনি রয়েছেন বিএনপি সমর্থিত নেতা-কর্মীরাও।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিজ্ঞপনের জন্য নগরীর গুরুত্বপূর্ণ জায়গা যেমন জিইসি, আগ্রবাদ, এ কে খান গেইটসহ বেশ কিছু এলাকায় বিলবোর্ড ভাড়ার এই হার হয় বছরে ৮ লক্ষ থেকে ১০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত।
নগর পরিকল্পনাবিদ প্রকৌশলী দেলোয়ার হোসেন মজুমদার বিলবোর্ড উচ্ছেদের বিষয়টিকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, পরিকল্পিত সুন্দর নগরী গড়তে যত্রতত্র বিলবোর্ড লাগানো বন্ধ হওয়া উচিত। সিএমপি কমিশনারের সহযোগিতায় চসিকের এই অবৈধ বিলবোর্ড উচ্ছেদ অভিযান অব্যাহত থাকলে এর সুফল এই নগরবাসীই ভোগ করবে।