দুই যুগ ধরে উপাচার্য নিয়োগে অধ্যাদেশ মানা হচ্ছে না
প্রকাশিত হয়েছে : ১:১৭:৫৫,অপরাহ্ন ২৩ মে ২০১৫
নিউজ ডেস্ক::
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশ অনুযায়ী উপাচার্য নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে না। ১৯৭৩ সালের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশ অনুযায়ী দুই যুগ পর সিনেট সদস্যদের ভোটে নির্বাচিত তিন জনের প্যানেল থেকে আচার্য (রাষ্ট্রপতি) কর্তৃক উপাচার্য নিয়োগ দেওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হলেও আইনী জটিলতায় তা স্থগিত হয়ে গেল।
আইনী জটিলতায় এভাবে প্যানেল নির্বাচন বন্ধ হয়ে যাওয়াকে গণতান্ত্রিক চর্চায় শুভ নয় বলে মন্তব্য করেছেন সংশ্লিষ্টরা।
বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশ-১৯৭৩ এর ১১(২) ধারা অনুযায়ী, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য (রাষ্ট্রপতি) সিনেট মনোনীত তিনজনের একটি প্যানেল থেকে একজনকে উপাচার্য হিসেবে চার বছরের জন্য নিয়োগ দেবেন। উপাচার্য নিয়োগ পত্রেও উল্লেখ থাকে সিনেট উপাচার্য প্যানেল মনোনিত না করা পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করবেন। এক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ভোটে নির্বাচিত অর্থাৎ তিন সদস্যের প্যানেলের মধ্যে শীর্ষস্থান অধিকারীই উপাচার্য হিসেবে মনোনীত হবেন। ’
কিন্তু ১৯৮৮ সালের পর থেকে বিভিন্ন সময় ক্ষমতাসীন সরকার দলীয়ভাবে উপাচার্য নিয়োগ দিয়েছেন। ১৯৯১ সালে প্রথম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাদেশ ১৯৭৩ লঙ্ঘন করে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পছন্দমতো উপাচার্য নিয়োগ দেয় বিএনপি সরকার। এরপর থেকে একই ধারায় উপাচার্য নিয়োগ দিয়ে আসছে সরকারগুলো।
দলীয়ভাবে উপাচার্য নিয়োগের ফলে প্রশাসনে দলীয়করণ, শিক্ষকদের মাঝে দলীয় কোন্দল ও শিক্ষার পরিবেশ ক্ষতিগ্রস্তসহ বিভিন্ন সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। সর্বশেষ ২০১১ সালের ১৫ জুন উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পান আওয়ামীপন্থী শিক্ষক অধ্যাপক মো. আনোয়ারুল আজিম আরিফ।
চবি সিনেটের কার্যক্রম শুধুমাত্র বাজেট অনুমোদনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। অধ্যাদেশ অনুযায়ী সিনেটে মোট সাতটি ক্যাটাগরিতে ৮৬টি সদস্য পদ রয়েছে। সাত ক্যাটাগরির মধ্যে চারটি ক্যাটাগরিতে ২০ জন সদস্যকে সরাসরি মনোনয়ন দেওয়া হয়। অন্য তিন ক্যাটাগরিতে সদস্য নির্ধারণ করা হয় নির্বাচনের মাধ্যমে।
ক্যাটাগরিগুলো হচ্ছে- রেজিস্টার্ড গ্র্যাজুয়েট প্রতিনিধি ২৫ জন, শিক্ষক প্রতিনিধি ৩৩ জন, চাকসু’র মাধ্যমে নির্বাচিত ৫জন ছাত্র প্রতিনিধি। এসব ক্যাটাগরির মধ্যে সিনেট নির্বাচন ছাড়া বাকিগুলোর নির্বাচন হচ্ছে না দীর্ঘদিন ধরে। দীর্ঘদিন বন্ধ থাকা সিনেট নির্বাচন গত ৩০ এপ্রিল অনুষ্ঠিত হয়।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনিক সূত্রে জানা যায়, সর্বশেষ তিন বছর মেয়াদী রেজিস্টার্ড গ্র্যাজুয়েট প্রতিনিধি নির্বাচন হয়েছিল ১৯৮৬ সালের ২ নভেম্বর এবং চাকসুর সর্বশেষ নির্বাচন হয়েছিল ১৯৯০ সালের ফেব্রুয়ারিতে।
সিনেট সদস্যদের উপাচার্য প্যানেল নির্বাচনের জন্য শনিবার (২৩ মে) বিশ্ববিদ্যালয় সিনেটের সপ্তম বিশেষ সভা আহ্বান করা হয়। কিন্তু রেজিস্টার্ড গ্র্যাজুয়েট ও চাকসু নির্বাচন না দিয়ে প্যানেল নির্বাচন দেওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন শিক্ষকের আবেদনে উচ্চ আদালত মঙ্গলবার (২৪ মে) পর্যন্ত সিনেটের বিশেষ সভা স্থগিত করে। এতে পুনরায় অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে প্যানেল নির্বাচনের মাধ্যমে উপাচার্য নিয়োগ।
এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আনোয়ারুল আজিম আরিফ বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশ-১৯৭৩ এর ১১(২) ধারা অনুযায়ী সিনেট সদস্যদের মাধ্যমে তিনজনের প্যানেল নির্বাচনের জন্য সভা আহ্বান করা হয়েছিল। কিন্তু একটি স্বার্থান্বেষী মহল সেটি বাধাগ্রস্থ করেছে। যা বিশ্ববিদ্যালয়ে গণতন্ত্র চর্চায় শুভ নয়।
সিনেট সদস্য ও বিশ্ববিদ্যালয়ের যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আলী আজগর চৌধুরী বলেন, প্যানেল নির্বাচনের মাধ্যমে উপাচার্য নিয়োগ হওয়া জরুরী। তবে সেক্ষেত্রে সিনেটের বিভিন্ন ক্যাটাগরি পূর্ণ করা প্রয়োজন।