তারেক মনে হয় থামবেনই না
প্রকাশিত হয়েছে : ১০:৫২:৪৩,অপরাহ্ন ২৬ ডিসেম্বর ২০১৪
গোলাম মাওলা রনি
অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে- তিনি থামবেন না। বরং সর্বশক্তি নিয়ে এগিয়ে যাবেন। আর থামবেনই বা কেনো- তিনি তো তার চলার পথের পাথেয় পেয়ে যাচ্ছেন অবলীলায়। নিরাপদ দুরত্বে থেকে ইচ্ছেমতো যখন তখন যা মুখে আসে তাই বলে যাচ্ছেন এবং মিডিয়া গুলো তা লুফে নেবার জন্য হুমড়ী খেয়ে পড়ছে। তিনি হয়তো পরিকল্পনা করেই এসব বলছেন কেবলমাত্র তার প্রতিপক্ষকে উত্তেজিত করার জন্য। আর এতে কাজও হচ্ছে- একেবারে অব্যর্থ ওষুধ কিংবা লক্ষ্য ভেদ করা বিষাক্ত তীরের মতো। কথাগুলো শাঁখের করাতের মতো- দুভাবে কাটছে! কথা গুলো শুনে চুপ থাকা যেমন সম্ভব নয়-তেমনি উত্তর দেয়াও অনুচিত। আর এই সুযোগটাই পুরোমাত্রায় গ্রহন করেছেন বিএনপির দ্বিতীয় গুরুত্বতম এবং বৃহত্তম নেতা জনাব তারেক রহমান ওরফে তারেক জিয়া।
বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ কোনদিনই তারেককে পাত্তা দিতে চায়নি। এমনকি তারেকের দল যখন ক্ষমতায় ছিলো তখনো তাকে পাত্তা দেয়নি। এমনকি তার মা বেগম খালেদা জিয়াকে একদিন কিংবা এক মুহুর্তের জন্য বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মেনে নিতে পারেনি। অন্যদিকে জিয়াউর রহমানকে তারা সেনাবাহিনীর একজন মেজরের ওপর পদ-পদবী ও মর্যাদা দিতে নারাজ। এমনকি বঙ্গবন্ধুর আমলে তিনি যে সেনাবাহিনীর ডিপুটি চীফ অর্থাৎ উপসেনা প্রধান ছিলেন-সেটাও মানতে নারাজ। স্বাধীন বাংলাদেশে এবং বঙ্গবন্ধুর আমলে জিয়াউর রহমান পর পর ৪টি প্রমোশন পেয়েছিলেন। প্রথম দ’ুটি পেয়েছিলেন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে এবং শেষ দু’টি পেয়েছিলেন-বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠজন হিসেবে। ফলে যে জিয়াউর রহমান ১৯৭১ সালের রনাঙ্গনে মেজর পদবীধারী ছিলেন সেই তিনি মাত্র ৩ বছরের ব্যবধানে ১৯৭৪ সালের শেষ সময়ে এসে হয়ে গেলেন মেজর জেনারেল। এখন আওয়ামীলীগের লোকেরা যদি তাকে জেনারেল জিয়া না ডেকে মেজর জিয়া বলেন তবে তারেক রহমান কি বলবেন ?
অনেক সাধারণ জিনিসকে পাত্তা না দিতে দিতে আওয়ামীলীগই সেগুলোকে অসাধারণ এবং আকর্ষনীয় বানিয়ে ফেলেছে। আমার মনে হয় -২০০৯ সালে আওয়ামীলীগ যদি তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে এনে প্রকাশ্যে রাজনীতি করার সুযোগ দিতো তাহলে পরিস্থিতি হতো সম্পূর্ন উল্টো। তারেক একটার পর একটা ভুল করতেন । তার দলের মধ্যে কোনঠাসা হয়ে পড়তেন । তার মায়ের অনুসারীবৃন্দ এবং তার নিজের অনুসারীগণ সারাক্ষন দ্বন্দ্ব ফ্যাসাদ করতেন। বিএনপির কার্যালয়ে প্রায়ই গন্ডগোল হতো এবং সরকার নির্বিঘেœ কাজ করে যাবার সুযোগ পেতেন। অন্যদিকে, প্রবাসে নিরাপদে থাকার দরুন তারেক নিজেকে বিকল্প ভাবে এবং ভিন্ন আঙ্গিকে প্রস্তুত করার সুযোগ পাচ্ছেন এবং তার দলের মধ্যে অর্জন করতে যাচ্ছেন সীমাহীন জনপ্রিয়তা। প্রধানমন্ত্রীর কোন কথা বা বক্তব্য তার দলের লোকেরা কোনদিন অনুসরন বা অনুকরন করে না যেভাবে তারেকের কথা তার দলের লোকেরা কথা এবং কর্মে অনুসরন করে। কৌশলগত ভাবে এসব সুযোগ সুবিধা সরকারই তারেককে করে দিয়েছেন নিজেদের অজান্তে।
লন্ডনের প্রবাস জীবনে থেকে তারেক রহমান দীর্ঘদিন চুপচাপ ছিলেন। এমনকি ৫ই জানুয়ারী, ২০১৪ সালের নির্বাচনের পূর্বে তিনি কথাবার্তা বলেননি। কথাবাতা তো দুরের কথা কোন রাজনৈতিক কর্মকান্ডেও অংশ গ্রহন করেননি । দেশ থেকে লোকজন যেমন তার সঙ্গে যোগাযোগ করেনি- তেমনি তিনিও অজানা কারণে তার লন্ডনের বাড়ীর দরজা সব সময় বন্ধ করেই রাখতেন। লোকমুখে আমরা শুনতাম-তিনি তার অতীত কর্মকে মূল্যায়ন করছেন এবং অনেক কিছুর জন্যই অনুতপ্ত হচ্ছেন। আমার তখন মনে হয়েছিলো যে, তারেক রহমান হয়তো নিজের ওপর বিশ্বাস হারিয়ে ফেলেছেন। তার হয়তো মনে হতো তিনি বিএনপির ক্ষমতা লাভ ব্যতিরেকে মুল ধারার রাজনীতিতে ফিরে আসতে পারবেন না। লোকজন তার কথা শুনবে না এবং মিডিয়া গুলো তার কথা প্রচার করবে না। তার এই ধারণা বদ্ধমূল হয়েছিলো একারণে যে ২০০৯ থেকে ২০১৩ সাল অবধি দেশ-বিদেশের মিডিয়া গুলো তারেক রহমানের খোঁজ খবরই রাখেনি। নির্বাচনের পর লন্ডনের কোন অনুষ্ঠানে এসে তারেক রহমান বক্তব্য রাখেন। সেই বক্তব্যে কোন আপত্তিকর উপাদান বা সরকার বিরোধী কোন এজেন্ডা ছিলোনা। এদেশীয় কোন মিডিয়া সেই অনুষ্ঠানের খবর গুরুত্বের সঙ্গে পরিবেশন করেনি। কিছু নাম না জানা অন লাইন মিডিয়া এবং ফেইস বুকের মাধ্যমে খবরটি প্রচারিত হয়। আর এতেই ক্ষেপে যান সরকারী দলের বক্তাগণ। তারা যাচ্ছে তাই ভাষায় তারেক রহমানকে আক্রমন শুরু করেন। ফলে তারেকের সেদিনের অনুষ্ঠানটি এ দেশীয় মিডিয়ায় নতুন করে শিরোনাম হয় আওয়ামীলীগ নেতাদের গালাগালি এবং খিস্তিখেউড়ের কারণে।
আওয়ামীলীগ নেতাদের কান্ড দেখে আমি সেদিন প্রমাদ গুনেছিলাম। একটি পত্রিকায় কলাম লিখে বলেছিলাম- তারেককে প্রকাশ্যে আসার সুযোগ করে দেয়া হলো। কাজেই আগামী দিনগুলোতে তারেক ঘন ঘন সভা-সমাবেশ করবেন এবং এমন সব কথাবার্তা বলবেন যা শুনে আওয়ামীলীগ রাগে, অভিমানে বিক্ষুব্দ হয়ে কান্ডজ্ঞান হারিয়ে ফেলবে। বাস্তবে হয়েছেও তাই। তারেক একটার পর একটা বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছেন । তার প্রতিটি বক্তব্যের আগে এবং পেছনে প্রমান হিসেবে হাজির করছেন কিছু পুস্তকের উদ্ধৃতি যা কিনা বিভিন্ন সময়ে আওয়ামী ঘরানার বুদ্ধিজীবি কিংবা রাজনীতিবীদগণ কর্তৃক লিখিত হয়েছে। ফলে আওয়ামীলীগ প্রচণ্ডভাবে বিক্ষুব্দ হয়েছে বটে কিন্তু কার্যকর এবং সমুচিত যুক্তিগ্রাহ্য জবাব দিতে পারেনি ।
তারেক বিভিন্ন জ্বালা উদ্রেককারী বক্তব্য প্রদানের পাশাপাশি গুনীজনকে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করার নবতর উপায় উদ্ভাবন এবং প্রচলন শুরু করেছেন। তিনি প্রধানমন্ত্রীকে প্রধানমন্ত্রী না বলে আওয়ামীলীগ সভানেত্রী বা হাসিনা বলে সম্বোধন করছেন। তাকে সম্মানজনক ভাবে আপনি সম্বোধনের পরিবর্তে তুমি বলে সম্বোধন করছেন তাচ্ছিল্যের সঙ্গে। এরপর থেকে তার দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীগণ – এমনকি স্বয়ং বেগম খালেদা জিয়াও একই কর্ম করে যাচ্ছেন। ফলে আওয়ামীলীগ সংশ্লিষ্ট ব্যাপারে ধৈর্য্য হারিয়ে ফেলেছে। দলের অনেক সিনিয়র নেতা তারেক এবং তার পরিবার এবং বিশেষত তার প্রয়াত পিতা সম্পর্কে এমনসব কথা বলছেন যা কিছুতেই জনপ্রিয়তা পাচ্ছে না। অন্যদিকে তারেক, বেগম খালেদা জিয়া কিংবা বিএনপির নেতৃবৃন্দ একমাত্র প্রধানমন্ত্রী ছাড়া অন্যকোন মন্ত্রী বা আওয়ামীলীগের নেতার কথায় প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছেন না। মিডিয়া গুলোর যেনো কি হয়েছে- তারা কেবল মাত্র প্রধানমন্ত্রী ছাড়া অন্য কারো বক্তব্যকে গুরুত্ব দিচ্ছে না। ফলে তারেকসহ বিএনপি নেতৃবৃন্দের কথার জবাবে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীকে রিং এ নামতে হচ্ছে- আর এটাকেই বিএনপি মনে করছে এক ধরনের বিশাল বিজয়।
গত কয়েকদিন আগে লন্ডনে অনুষ্ঠিত বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে তারেক রহমান যেসব কথা বলেছেন তা আমার পক্ষে লিখা সম্ভব নয়। তবে আমি না লিখলে কি হবে- দেশের সবগুলো পত্রিকা তারেকের বক্তব্য হুবহু ছেপেছে। সবগুলো টিভি চ্যানেল সেদিনের অনুষ্ঠানের চৌম্বক অংশের ভিডিও ফুটেজ দেখিয়েছে। ফেইস বুকের মাধ্যমে পুরো ভিডিও পৌছে গেছে কোটি মানুষের কাছে। যারা মুক্তিযুদ্ধ এবং যুদ্ধের পূর্বাপর ঘটনা সম্পর্কে কিছুই জানেনা তারা কিন্তু তারেকের বক্তব্যে ভয়ানকভাবে বিভ্রান্ত হবে। তারেক যথেষ্ট প্রস্তুতি নিয়ে তার বায়বীয় বক্তব্যকে ওজনদার এবং মূল্যবান করার জন্য বেশ কিছু তথ্য, প্রমান, প্রাসঙ্গিক উদাহরণ এনেছেন। বিভিন্ন বই, সংবাদপত্র, কোটেশন, বিদেশী নামকরা ক’টনীতিক এবং সাংবাদিকের বক্তব্যকে তার বক্তব্যের সঙ্গে জুড়ে দিয়ে প্রমাণ করার চেষ্টা করেছেন যে তিনি যা বলছেন তা সঠিক। ভিডিও ফুটেজ দেখে আমার মনে হয়েছে গত কয়েকমাস ধরে তিনি বক্তৃতার খসড়া প্রস্তুত করেছেন এবং মঞ্চে তা পরিবেশন করার পূর্বে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে বহুবার পড়তে পড়তে প্রায় মুখস্থ করে ফেলেছেন। ফলে সেদিনের অনুষ্ঠানে উপস্থিত দর্শকরা যেমন মনোযোগ দিয়ে তারেকের বক্তব্য শুনেছেন তদ্রুপ অনুষ্ঠানের বাইরের লোকের দৃষ্টিও আকর্ষিত হয়েছে সমানতালে।
তারেকের বক্তব্যের পর আওয়ামী মহলে হৈচৈ পড়ে যায়। পত্রিকায় দেখলাম একমন্ত্রী বলেছেন- তারেককে জুতা পেটা করা উচিত। অন্যমন্ত্রী বললেন-সরকারের দয়ায় খালেদা এখনো জেলের বাইরে আছে। তারেক যদি এমনতরো বক্তব্য দেয় তবে সরকার খালেদার ওপর থেকে তার দয়া উঠিয়ে নিয়ে যাবে। আরেক মন্ত্রী বললেন-বিশ্ব বেয়াদব তারেক পাগল হয়ে গেছে। সকলের সকল কথার ওপর ঠাই পেলো প্রধানমন্ত্রীর মন্তব্য। তিনি বললেন- একটা জানোয়ার পয়দা হয়েছে । মানুষতো হয়নি একটা জানোয়ার হয়েছে। তিনি খালেদা জিয়াকে বরলেন- আপনার জানোয়ার পুত্রের ঠোট এবং জিহ্বা সামলাতে বলেন । নইলে খবর আছে, বাংলার মানুষ জানে- জানোয়ারকে কিভাবে শায়েস্তা করতে হয়। সরকার সমর্থক পত্রিকাগুলো খবর ছাপালো- তারেকের বক্তব্যে বিএনপি নেতারা পর্যন্ত বিব্রত। এই ঘটনার পর মির্জা ফখরুল সহ বিএনপি নেতারা বললেন- তারেক যা বলেছেন, ঠিকই বলেছেন। তিনি সব কথা বলেছেন তথ্য ও প্রমান সহ । পারলে তারেকের বক্তব্য খন্ডান। যুক্তিতর্ক না মেনে কেবল অসভ্যের মতো গালাগাল না করার জন্য তিনি আওয়ামীলীগ নেতাদেরকে আহবান জানালেন। এরপর স্বয়ং খালেদা জিয়া মুখ খুললেন-তিনি প্রধানমন্ত্রীর প্রতি হুশিয়ারী উচ্চারণ করে বললেন- চুপ! আগে নিজের মুখ সামলান।
পরস্পর বিরোধী বাকযুদ্ধে জনজীবন এবং বাংলার ইতিহাস যখন কলঙ্কিত কালো ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন ঠিক তখন কিছু আওয়ামী ঘরানার বুদ্ধিজীবি তারেকের ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে নানা কাহিনী উপস্থাপন শুরু করলো। কারো বক্তব্য মিডিয়ায় প্রকাশ না পেলেও প্রবীণ আওয়ামী সাংবাদিক আব্দুল গাফ্ফার চৌধুরী বরাবরের মতো অদ্ভুত এক তথ্য হাজির করলেন। তিনি বললেন-তিনি নাকি একদিন বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে জিয়াউর রহমানের বাসায় গিয়েছিলেন। সেখানে গিয়ে দেখলেন জিয়াউর রহমান নাকি কোমরের বেল্ট খুলে একটি ছেলেকে বেদম প্রহার করছেন। তিনি দয়া পরবশ হয়ে জিজ্ঞাসা করলেন-মেজর সাহেব, বালকটি কে এবং তাকে এভাবে মারছেনই বা কেনো ? জিয়াউর রহমান উত্তর করলেন- আরে বলবেন না। ও বদমাশ স্কুলে মারাত্মক এক অপকর্ম করেছে আর সে কারণে স্কুল কর্তৃপক্ষ তাকে বের করে দিয়েছে। গাফ্ফার সাহেব পরে জেনেছেন- তারেক নাকি তার কোন সহপাঠী বালিকাকে চুম্বন করেছিলো।
আব্দুল গাফ্ফার চৌধুরীর গল্প সম্পর্কে আমার বক্তব্য পেশ করার পূর্বে অন্য একটি কথা বলে নেই। টেলিভিশনে দেখলাম এবং শুনলাম-কিছু সাংবাদিক বা উপস্থিত দর্শক- আব্দুল গাফ্ফার চৌধুরীর বক্তব্যের মাঝে টিপ্পনী কেটে বললো- আপনিতো শেখ হাসিনার দালাল। গাফ্ফার সাহেব বক্তব্যরত অবস্থাতেই টিপ্পনীর উত্তরে বললেন- ডঃ কামাল ও ডঃ ইউনুস যেসব লোকের দালালী করে তাদের চেয়ে শেখ হাসিনার দালালী করা আমার কাছে অনেক বেশী সৌভাগ্য আর গৌরবের বিষয় বলে মনে হয়। উপস্থিত সবাই তার জবাব শুনে লা জবাব হয়ে পড়েন । টেলিভিশনের সামনে বসে গাফ্ফার সাহেবের বক্তব্য শুনে আমার মন রীতিমতো খারাপ হয়ে গেলো। আমি ভেবে পেলাম না তিনি কেনো এমন সময় এমন অদ্ভুত কথাগুলো বলতে গেলেন। কারণ একজন সাধারণ মানুষও বুঝতে পারবেন-তিনি কতটা অসত্য বলেছেন। প্রথমতঃ স্বাধীনতার পর পর অর্থাৎ ১৯৭২ সালেই জিয়া ব্রিগেডিয়ার হয়ে যান । সেনাবাহিনীতে তখন মাত্র দুইজন ব্রিগেডিয়ার ছিলো। একজন হলেন সেনা প্রধান শফিউল্লাহ এবং আরেকজন হলেন জিয়াউর রহমান। এর কিছুদিন পরই তিনি মেজর জেনারেল পদে পদোন্নতি পান। গাফ্ফার সাহেব যদি কোনদিন বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে জিয়াউর রহমানের বাসায় গিয়েও থাকেন তখন তিনি হয় ব্রিগেডিয়ার অথবা মেজর জেনারেল ছিলেন। সেনাবাহিনীর দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ন ব্যক্তির বাসায় তারমতো একজন লোক হুট করে ঢুকে পড়বেন এবং ঢুকেই দেখবেন জিয়া তার ছেলেকে বেল্ট দিয়ে পেটাচ্ছেন- এমন কাহিনী কতটা স্থুল এবং অবাস্তব তা কেনো গাফ্ফার সাহেব ভেবে দেখলেন না ? বর্তমানে তার বয়স ৮০ বছর । যে সময়ের কথা বলছেন তখন তার বয়স ৩৫/৩৬ বছর। সাংবাদিক হিসেবে তখন তিনি কি এমন পর্যায়ে ছিলেন যে, একজন ব্রিগেডিয়ার বা মেজর জেনারেলের বাসায় প্রধানমন্ত্রীর রেফারেন্সে ঢুকে – তাকে বলতে পারবেন- কিগো মেজর সাব! ছেলেকে মারছেন কেনো ?
আমার খুবই দুঃখ লাগে আওয়ামী ঘরানার বুদ্ধিজীবিদের বুদ্ধির দৈন্য দশা দেখে। তারা এখনো জানে না-বারমুদা ট্রায়াঙ্গেলের রহস্য আবিস্কৃত হয়েছে। তারা একথাও জানেনা যে নেপচুন গ্রহে বৃষ্টির সঙ্গে কাঁচ পড়ে এবং প্লোটো গ্রহে বৃষ্টির সঙ্গে হীরক বর্ষিত হয়। তারা সেই ১৯৬০ সালের ঢোলা পাজামা আর প্রগতি বিরুদ্ধ বুদ্ধিশুদ্ধি দিয়ে আওয়ামীলীগের মতো বিশাল একটি দলকে পেছনের দিকে টেনে নিয়ে যাচ্ছেন। আর এসব কারণেই তারেক জিয়া লন্ডনে বসে একের পর এক শব্দ বোমা প্রয়োগের সুযোগ পাচ্ছেন। তার প্রতিপক্ষের অতিমাত্রার উত্তেজনা, অস্থিরতা এবং ক্রোধ তাকে অনুপ্রানিত করছে নিত্য নতুন শব্দ বোমা আবিস্কার করার জন্য । কাজেই অবস্থা দৃষ্টে মনে হচ্ছে তিনি থামবেন না। বরং বঙ্গবন্ধু এবং তার পরিবারের ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে এমন সব অদ্ভুত তথ্য হাজির করবেন যা কেউ বিশ্বাস না করলেও মনোযোগ দিয়ে শুনবে এবং বিভ্রান্ত হবে এব্যাপারে কোন দ্বিধা নেই।
আওয়ামীলীগ হয়তো চিন্তা করছে কিভাবে তারেককে শায়েস্তা করা যায় কিংবা কিভাবে ভয় ভীতি দেখিয়ে তাকে নিবৃত্ত করা যায়! কিন্তু বাস্তবতা হলো- মামলা, হামলা, ব্যক্তিগত আক্রমন বা হুমকী ধামকী দিয়ে কাজ হবে না। এমন কিছু বের করতে হবে যাতে তারেকের মুখ আপনা আপনি বন্ধ হয়ে যায়। এটা কিন্তু খুব কঠিন নয়। একটু মাথা খাটালেই সম্ভব- এমন কিছু কথা! এমন কিছু ঘটনা, কিংবা এমন কিছু বিষয় রয়েছে যার অ, আ উচ্চারণ করলেই বিএনপির সবাই একদম চুপ হয়ে যাবেন। গাফ্ফার সাহেবরা যদি একটু মন মস্তিস্ক খাটিয়ে সেসব বিষয় হাজির করতে পারেন তবেই হয়তো তারেককে নিবৃত্ত করা যাবে- অন্যথায় তিনি থামবেনই না- আগে বাড়তে থাকবেন বাংলাদেশ জিন্দাবাদ শ্লোগান তুলে।