টয়লেটে দীর্ঘ ১০ বছর!
প্রকাশিত হয়েছে : ৮:১৭:৫৮,অপরাহ্ন ১৬ জানুয়ারি ২০১৫
নিউজ ডেস্ক::
ইসমতারা বেগমের (৫৫) স্বামী আবুল কালাম অন্যত্র বিয়ে করে ঘর সংসার শুরু করে। গত ১২ বছর দরে তার কোন খোঁজ নিচ্ছেনা। স্বামী ছাড়া তার খোঁজখবরও নেওয়া মতো কেউ নেই। ইসমতারা বেগমের কোনো সন্তান নেই। স্বামী তাকে ছেড়ে দিলে দুনিয়াতে তার আর কোনো স্থানে যাওয়ার মতো থাকার মতো জায়গা নেই। তার পর প্রথম দুই বছর আশ্রয় নিয়েছিল সে রৌমারীর পাটগুডাউন পাড়ায় একটি ইটখোলায়।
পরে ইটখোলার মালিক তাকে সে খান থেকে তাড়িয়ে দিলে সে আশ্রয় গ্রহণ করে উপজেলার সমাজ সেবা অধিদপ্তরেরে একটি পরিত্যক্ত টয়লেটে। দীর্ঘ ১০ বছর পঁচাগন্ধকে সঙ্গী করে পরিত্যক্ত টয়লেট কক্ষেই কাটছে বিচিত্র জীবন। বর্তমানে উপজেলা পরিষদের নতুন ভবন নির্মাণের ফলে পুরাতন পরিত্যক্ত ভবন গুলো উপজেলা প্রশাসন ভেঙ্গে ফেলার সিদ্ধান্ত নিলে বিপাকে পরে ইসমতারা বেগম।
ইসমতারা বেগম বলেন, এহন মুই কই যামু গো। কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলা সমাজ সেবা অধিদপ্তরের পরিত্যক্ত ওই টয়লেটে গিয়ে কথা হয় ইসমতারা বেগমরে সাথে। সঠিক ভাবে দিনতারিখ না বলতে পারলেও গত ২০০২ সালে তাকে ছেড়ে যায় তার স্বামী। এরপর ২০০৪ সাল থেকে পরিত্যক্ত ওই টয়লেটে জীবন যাপন শুরু করেন ইসমতারা। স্বামী আবুল কালামের উপজেলার নটানপাড়া গ্রামে তার বাড়ি। তার ওই ঘরে স্ত্রী সন্তান রয়েছে। রৌমারী হাটবাজারের কিছু অংশে ময়লা আবর্জনা পরিস্কার করে যা পান তা দিয়ে তার দিন কাটে ইসমতারার।
তিনি বলেন, এতদিন এহানে ছিলাম। হাটের যে স্থানে ধানসহ বিভিন্ন ফসল কেনাবেচা হতো ওই স্থান পরিস্কার করে দিতাম। আবার হাটে পড়ে থাকা ফসল কুড়াতাম। হাটের মালিক মাসে এক হাজার করে ট্যাহা দিত। তাই দিয়া আমার খাওনপড়ন সব চলত। সরকারি লোকের কাপড়চোপড়ও পরিস্কার কইরা দিতাম। তারাও খাওন দিত, ট্যাহা দিত। এই ভাবে ১০ বছর থিকা আমি জীবন যাপন করছি।
রৌমারী সমাজ সেবা অধিদপ্তরের কর্মকর্তা মমতাজুর রহমান বলেন, আমরা জানতাম যে পরিত্যক্ত টয়লেট কক্ষে ওই মহিলার বসবাস। যেহেতু টয়লেটটি আমরা ব্যবহার করতাম না, সে কারনে এতদিন তাকে কিছু বলাও হয়নি। কিন্তু এখন উপজেলা প্রশাসনের নতুন ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। পুরাতন ভবন গুলো ভেঙ্গে জায়াগা বের করা হচ্ছে। এখন তো তাকে টয়লেট ছাড়তেই হবে।
এ প্রসঙ্গে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুল হান্নান জানান, আমি শুনেছি যে পরিত্যক্ত টয়লেট কক্ষে এক মহিলা বসবাস করছে দীর্ঘদিন থেকে। কিন্তু তার সর্ম্পকে বিস্তারিত কিছু আমি জানি না।
উল্লেখ্য, রৌমারী উপজেলা প্রশাসনের নতুন ভবন নির্মিত হওয়ার পর পুরাতন পরিত্যক্ত ভবনগুলো ভেঙ্গে ফেলার সিদ্ধান্ত গ্রহন করেছে প্রশাসন। এরই মধ্যে বেশ কিছু পুরাতন ভবন ভেঙ্গে পরিস্কার করা হয়েছে উপজেলা চত্ত্বর। পরিত্যক্ত ওই টয়লেটটি ভেঙ্গে ফেলার অপেক্ষায় রয়েছে।