চ্যালেঞ্জের মুখে জামায়াতের লন্ডনভিত্তিক কার্যক্রম
প্রকাশিত হয়েছে : ১১:৪২:০৮,অপরাহ্ন ১৬ মে ২০১৫
এম. এ. আর মুরাদ, লন্ডন:: যুক্তরাজ্যে ধর্মীয় চরমপন্থা দমনে নতুন আইন বা পুরনো আইন শক্তিশালী করে সংশোধনীর উদ্যোগে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে যাচ্ছে সেখানে বাংলাদেশের জামায়াতে ইসলামীসহ মসজিদভিত্তিক রাজনীতি।
এ আইনের ফলে বিশেষ করে বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধী দলকে ইস্ট লন্ডনভিত্তিক কার্যক্রম গুটিয়ে নিতে হবে বলে আশা করে প্রবাসীরা বলছেন, তা হলে বাংলাদেশেও অনেক জঙ্গি তৎপরতার অর্থায়ন বন্ধ হয়ে যাবে।
মেয়র লুৎফর রহমানের পদচ্যুতির কথা উল্লেখ করে তারা বলছেন, জামায়াতের পাশাপাশি অন্য যারা ধর্মীয় উস্কানির রাজনীতি করেন তারাও এ আইনে নিয়ন্ত্রিত হতে বাধ্য হবেন। গত ২৩ এপ্রিল ভোটে নির্বাচিত প্রথম ব্রিটিশ-বাংলাদেশী মেয়র লুৎফর রহমানকে পদচ্যুত করে রয়েল কোর্ট অব জাস্টিস। তার বিরুদ্ধে ধর্মীয় কার্ড ব্যবহার করে মুসলিম ভোটারদের প্রভাবিত করার অভিযোগ ছিলো।
ব্রিটেনপ্রবাসী অনেকে বলেছেন, লুৎফর রহমান এক সময় ইস্ট লন্ডন মসজিদকেন্দ্রিক আই.এফ.ই বা ইসলামিক ফোরাম অব ইউরোপের ঘনিষ্ঠজন ছিলেন।
আর বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নেতা ও লবিস্ট ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক ইসলামী ফোরাম অব ইউরোপের প্রতিষ্ঠাতাদের অন্যতম বলে দাবি করেছেন টাওয়ার হ্যামলেটস লেবারের ভাইস চেয়ার ও কমিউনিটি এক্টিভিস্ট এডভোকেট আনিসুর রহমান আনিস।
আনিস বলেন, এ সংগঠনটি ব্রিটেনে আমাদের তরুণদের উগ্রধর্মবাদে নেওয়ার ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে। শুধু যে বাঙালি তা নয়, পাকিস্তানী, সোমালীসহ অন্য দেশের বংশোদ্ভূভূত তরুণরাও তাদের টার্গেট।
তিনি দাবি করেন, নেপথ্যে থেকে বিলেতের উগ্রপন্থার কলকাঠি নাড়েন মুসলিম কাউন্সিল অব মস্কের সাবেক নেতা, বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধকালীন বুদ্ধিজীবী হত্যার মূল হোতা চৌধুরী মঈনুদ্দীন। তিনি (মঈনউদ্দিন) ইস্ট লন্ডন মসজিদ পরিচালনার সাথে জড়িত থাকার পাশাপাশি গড়ে তুলেছিলেন মুসলিম এইড নামের চ্যারিটি বা দাতব্য সংস্থা। যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্ত আবু সাঈদকে সঙ্গে নিয়ে গড়েছিলেন দাওয়াতুল ইসলাম নামের আরেকটি সংগঠন।
ডেভিড ক্যামেরনের নতুন আইন উদ্যোগ অার যুক্তরাজ্যে বাস করা বাংলাদেশের এ যুদ্ধাপরাধীদের বিষয়ে কথা বলেছেন একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি যুক্তরাজ্য শাখার সাধারণ সম্পাদক ও সাংবাদিক সৈয়দ আনাস পাশা।
তিনি বলেন, আমরা আশা করবো অতীতে বা বর্তমানে বিশ্বব্যাপী জঙ্গি তৎপরতার বিস্তৃতিতে যেসব কালপ্রিট লন্ডনে বসে ভূমিকা রেখেছে বা রাখছে, তাদের বিচারের আওতায় আনা বা অন্য কোনো দেশে আদালতে দণ্ডিত হলে দন্ডপ্রাপ্ত সেই ব্যক্তিকে সংশ্লিষ্ট দেশে ফেরত পাঠানোর বিষয়ে নতুন আইনে দিকনির্দেশনা থাকবে।
সৈয়দ আনাস পাশা আশা করছেন, ডেভিড ক্যামেরনের প্রস্তাবিত জঙ্গিবাদবিরোধী আইন ব্রিটেনের পাশাপাশি বাংলাদেশের জঙ্গি তৎপরতা রোধেও কিছুটা ভূমিকা রাখবে।
কারণ হিসেবে তিনি বলেন, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধবিরোধী একটি প্রভাবশালী গোষ্ঠির প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ পৃষ্ঠপোষকতায় চ্যারিটির নামে সংগৃহিত মিলিয়ন মিলিয়ন পাউন্ড বাংলাদেশে যায় যা জঙ্গি তৎপরতায় খরচ হয়।
‘ক্যামেরনের নতুন আইন যদি সত্যিকারভাবে চ্যারিটি সংস্থাগুলোকে নজরদারিতে নিয়ে আসতে পারে তাতে অবশ্যই এই তৎপরতা কমে আসবে,’ এরকমই মনে করছেন তিনি।
সম্প্রতি দ্বিতীয় বারের মতো নির্বাচিত হয়ে ধর্মীয় চরমপন্থা দমনে আরো কঠোর হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন। ২০১০ সালের নির্বাচনে তিনি প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর এ বিষয়ে একটি আইন হয়েছিলো। এবার ওই আইনকেই সময়োপযোগী করা হবে নাকি নতুন আইন করা হবে সে বিষয়ে অবশ্য এখনও কিছুটা প্রশ্ন রয়েছে।
শক্তিশালী আইন করার উদ্যোগের এক বড় কারণ যুক্তরাজ্য থেকে বেশ কিছু জঙ্গির আইএসে যোগদান। এ পর্যন্ত প্রায় ৬শ’ ব্রিটিশ নাগরিক আইএস জঙ্গিদের সাথে যোগ দিতে সিরিয়া ও ইরাক গিয়েছে বলে ব্রিটিশ গোয়েন্দাদের ধারণা।
এমনকি চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে ইস্ট লন্ডনের বাঙালি অধ্যুষিত বেথনাল গ্রিন একাডেমির তিন ছাত্রী খাদিজা, শামীমা ও আদিজা আইএসে যোগ দিতে তুরস্ক হয়ে সিরিয়া পালিয়ে যায়। তাদের দুজনের বয়স ১৫ ও একজনের ১৬ বছর। তিনজনের মধ্যে খাদিজা ও শামীমা বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত।
সৈয়দ আনাস পাশার মতো লেবার নেতা এডভোকেট আনিসও মনে করেন, চরমপন্থা দমনে নতুন আইনে এমন বিধি থাকা উচিত যাতে অন্য দেশে চরম অপরাধ করে কেউ যুক্তরাজ্যের আশ্রয়ে থাকলে তাকে যেনো তার নিজদেশে শাস্তিভোগের জন্য ফেরত পাঠানো যায়।
এরকম একজন বাংলাদেশে মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদণ্ড পাওয়া চৌধুরী মঈনউদ্দিন।
তার বিষয়ে এডভোকেট আনিস বলেন, বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধের বিচার প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার পর থেকে বাংলা কমিউনিটি ও বাংলা মিডিয়া থেকে নিজেকে আডালে রাখলেও ইস্ট লন্ডন মসজিদ এবং জামাতের আন্তর্জাতিক সংগঠন হিসেবে পরিচিত ইসলামিক ফোরাম ইউরোপ (আইএফই)’র কর্মসূচিতে তাকে দেখা গেছে।
বাংলাদেশে সম্প্রতি মুক্তমনা ব্লগারদের হত্যার কথা উল্লেখ করে এ কমিউনিটি এক্টিভিস্ট বলেন, উগ্রধর্মবাদের ফলেই এসব হচ্ছে। এর সাথে জামায়াতের লন্ডন কানেকশন আছে বলেও তিনি মনে করেন। তাই নতুন আইনে যুক্তরাজ্যের সঙ্গে সন্ত্রাসবিরোধী অন্য দেশগুলোর একসঙ্গে কাজ করার সুযোগ রাখার পরামর্শ দিয়েছেন এডভোকেট আনিস।