চ্যালেঞ্জিং পেশায় নারীরাও সুযোগ পাচ্ছে: প্রধানমন্ত্রী
প্রকাশিত হয়েছে : ৮:২৭:০৪,অপরাহ্ন ২৯ জানুয়ারি ২০১৫
নিউজ ডেস্ক::
চ্যালেঞ্জিং পেশায় নারীরা সুযোগ পাচ্ছে উল্লেখ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বর্তমান সরকার রাষ্ট্রের বিভিন্ন পর্যায়ে নারীর অংশগ্রহণকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে। ফোর্সেস গোল ২০৩০ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে এই চ্যালেঞ্জিং পেশায় নারীদের সুযোগ দেয়া হচ্ছে। আজ বৃহস্পতিবার টাঙ্গাইলের ঘাটাইল ক্যান্টনমেন্টে আর্মি মেডিকেল কোরের ৮৭৮ জন নারী সৈনিকের প্রথম ব্যাচের শপথ গ্রহণ ও কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে তিনি একথা বলেন।
নারীদের উন্নয়নে সরকারের নেয়া নানান পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার নারী উন্নয়ন নীতি ২০১১ ও নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধ আইন ২০১০ প্রণয়ন করেছে, বিভিন্ন সরকারি কর্মকাণ্ডে নারীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে ৪০ টি মন্ত্রণালয়ে জেন্ডার সেন্সেটিভ বাজেট আজ বাংলাদেশে তৈরি হচ্ছে। তিনি বলেন, সশস্ত্র বাহিনীকে একবিংশ শতাব্দীর পেশাদার চৌকস বাহিনী হিসেবে গড়ে তোলার জন্য আমরা ব্যাপক কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছি, আর্মি মেডিকেল কলেজে মহিলা অফিসারের পাশাপাশি ৯৬ সালে ক্ষমতায় আসার পর অন্যান্য কোরেও আমরা মহিলা অফিসার নিয়োগ শুরু করি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, রাষ্ট্রের বিভিন্ন পর্যায়ে নারীর অংশগ্রহণকে অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে, বিনামূল্যে শিক্ষা উপকরণ ও বৃত্তি দেয়ায় নারী শিক্ষার হারও বৃদ্ধি পেয়েছে এবং স্বাধীনতার পর জাতীর পিতা সর্বপ্রথম নারী শিক্ষাকে অবৈতনিক ও বাধ্যতামূলক করে দিয়েছিলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের নারীরা আজ আর পিছিয়ে নেই। নিজেদের শ্রম, মেধা এবং দক্ষতা দিয়ে বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে নারীরা এগিয়ে চলছে সর্বক্ষেত্রে। ইতোমধ্যে নানা ধরনের চ্যালেঞ্জিং এবং দুঃসাহসিক কর্মকান্ডে সফলতার স্বাক্ষর রেখেছেন নারীরা। তিনি এ সময় এভারেস্ট জয়ী নিশাত মজুমদার, ওয়াসফিয়া নাজনীন, সামরিক বাহিনীতে কর্মরত ক্যাপ্টেন জান্নাতুল ফেরদৌস প্রথম মহিলা ছত্রীসেনা হওয়ার গৌরব অর্জন, বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর ফ্লাইট লেফটেনেন্ট নাঈমা হক এবং ফ্লাইং অফিসার তামান্না-ই-লুৎফী প্রথম সামরিক বৈমানিক হওয়ার যোগ্যতা লাভের কথাও স্মরণ করেন। এবং তাদের সবাইকে আন্তরিক অভিনন্দন জানান তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশে প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও দুঃসময়ে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী বিপন্ন মানুষের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। আর্মি মেডিকেল কোর আর্ত-মানবতার সেবায় নিবেদিতপ্রাণ। যাদের সেবার প্রসার বাংলাদেশের গন্ডি পেরিয়ে বহির্বিশ্বেও ছড়িয়ে পড়েছে। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনসহ বিভিন্ন বৈদেশিক মিশনে এ কোরের অফিসার ও সৈনিকরা নিঃস্বার্থ সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। বর্তমানে কঙ্গো, লাইবেরিয়া, আইভরিকো¯ট, পশ্চিম সাহারা ও কুয়েতসহ মোট ৫টি দেশে এ কোরের সদস্যগণ চিকিৎসা সেবায় নিয়োজিত আছেন বলেও জানান তিনি। তিনি বলেন, মানবতার সেবায় এ কোরের ফিল্ড ইউনিটগুলো বহিরাঙ্গণ অনুশীলনে বেসামরিক ব্যক্তিদের চিকিৎসাসেবা দিয়ে সেনাবাহিনীর ভাবমূর্তিকে আরও উজ্জ¦ল করেছেন। ‘সমরে ও শান্তিতে রাখিব সুস্থ’ এ মন্ত্রে দীক্ষিত হয়ে সেনাবাহিনী তথা জাতিকে সেবাদানের জন্য পেশাগত উৎকর্ষ, নিরলস পরিশ্রম এবং ত্যাগের মহান ব্রত নিয়ে নিজেদের বীর মুক্তিযোদ্ধাদের যোগ্য অনুসারী হিসেবে গড়ে তুলতে নবীন সেনাদের আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।
শেখ হাসিনা বলেন, ফোর্সেস গোল ২০৩০ বাস্তবায়নের ধারাবাহিকতায় সেনাবাহিনীতে নারী অফিসারের পাশাপাশি নারী সৈনিক নিয়োগেরও সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। সেনাবাহিনীর মত একটি চ্যালেঞ্জিং পেশায় নারীদের অংশগ্রহণ নারীর ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। সমাজের অর্ধেক জনসংখ্যাই নারী। নারীদের স্বতঃস্ফুর্ত অংশগ্রহণ ছাড়া কোন ক্ষেত্রেই পূর্ণাঙ্গ সাফল্য অর্জন সম্ভব নয়, বলেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, আমরা জানি ক্রিমিয়ান যুদ্ধে ফ্লোরেন্স নাইটিংগেল এর সাহসী পদক্ষেপের মাধ্যমে নার্সিং সার্ভিসের পথচলা শুরু হয়েছিল। সেই নার্সিং সার্ভিস আজ পৃথিবীর সকল পেশাদার সেনাবাহিনীর অনিবার্য অংশ হিসেবে চিকিৎসাসেবা দিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর মেডিকেল সার্ভিস আরও বিস্তৃত, আধুনিক ও যুগোপযোগী করার লক্ষ্যে ২০১৩ সালের ১৮ই সেপ্টেম্বর স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় আর্মি মেডিকেল কোর সেন্টার এন্ড স্কুলকে ‘ডিপ্লোমা ইন মেডিকেল এন্ড হেলথ টেকনোলজি’ পরিচালনার অনুমতি দেয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজ সত্যিই আমি গর্বিত, বাংলাদেশের জন্য আজ একটি ঐতিহাসিক দিন। যে দেশের নারীরা মুক্তিযোদ্ধাদের প্রেরণা দিয়েছেন সে দেশের নারীরা পিছিয়ে থাকবে না। তিনি প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত নারী সৈনিকদের উদ্দেশ্যে বলেন, আজকের দিনটি আপনাদের জীবনে অত্যন্ত আনন্দের এবং খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একজন গর্বিত সৈনিক হিসেবে আপনারা বৃহত্তর কর্মজীবনে প্রবেশ করতে যাচ্ছেন। আপনাদের উপর ন্যস্ত হচ্ছে দেশমাতৃকার মহান স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার পবিত্র দায়িত্ব। এএমসি সেন্টার এন্ড স্কুলে ডিপ্লোমা ইন মেডিকেল এন্ড হেলথ টেকনোলজি স¤পন্ন করে সেনাবাহিনীর চিকিৎসাসেবায় এই সৈনিকরা বাংলাদেশের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়বেন এই প্রত্যাশা ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সেবার মহান ব্রত নিয়ে আজ আপনারা যে শপথ গ্রহণ করলেন, তা আপনাদের আত্মত্যাগ, পেশাদারিত্ব ও দায়িত্বের প্রতি একাগ্রতার মাধ্যমে এবং দেশের আপামর জনসাধারণের চিকিৎসা সেবায় ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে বলে আমি আশাবাদী। আপনারা নিঃস্বার্থভাবে দেশ ও জনগণের সেবা করবেন। আমার দোয়া ও শুভ কামনা আপনাদের জন্য সবসময় থাকবে।