চাকরিজীবী বউ চাই!
প্রকাশিত হয়েছে : ৯:২৬:৪৮,অপরাহ্ন ০৬ মার্চ ২০১৫
লাইফ স্টাইল ডেস্ক :: পাত্রী সুশ্রী, শিক্ষিত, সুন্দর ও লম্বা হতে হবে। বিয়ের ‘পাত্রী চাই’ বিজ্ঞাপনে এত দিন এমনটাই দেখেছি আমরা। ইদানীং এতেও পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে। নতুন ‘যোগ্যতা’ হিসেবে যুক্ত হয়েছে ‘পাত্রীকে চাকরিজীবী হতে হবে’। ছেলেদের মানসিকতার একটা পরিবর্তন হয়তো হয়েছে। আবার সংসারে পেশাজীবী স্ত্রী বা মেয়ে এখন আর্থিক অবদানও রাখতে পারেন। এই দিকটি ইতিবাচক।
দেখা যায় বিয়ের আগে তো বটেই, বিয়ের পরও মেয়েরা নিজের এবং মা-বাবার সংসারে প্রয়োজনে আর্থিক সহায়তা করছেন নিজের উপার্জন থেকে। কেউ কেউ তো নিজের পরিবারের পুরো দায়িত্বই কাঁধে নিয়ে নেন। মেয়েটিই তাঁর পরিবারের একমাত্র ভরসা। বাবার বাড়ি বা শ্বশুরবাড়ি যেকোনো বাড়িতে সেই মেয়েটির মতামতের গুরুত্ব বাড়িয়ে দেয়।
অতন্দ্রী ইসলাম বিয়ের আগে থেকে একটি বিজ্ঞাপনী সংস্থায় কাজ করছেন। তাঁর ছোট আরও দুই ভাইবোন। অতন্দ্রী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় বাবা চাকরি থেকে অবসর নেন। সংসারের বড় সন্তান হিসেবেই দায়িত্ব এসে পড়ে তাঁর ওপর। শুরুতে টিউশনি, কোচিংয়ে পড়ানো এসব করেছেন। তাতে নিজের খরচ হলেও পরিবারকে সেভাবে সাহায্য করতে পারছিলেন না। এরপর খণ্ডকালীন কপিরাইটারের কাজ নেন একটি বিজ্ঞাপনী সংস্থায়। তাঁর সেই খণ্ডকালীন চাকরি পরিবারে একটা স্বস্তি এনে দিয়েছিল। ধীরে ধীরে কাজের দায়িত্ব বাড়ে। খণ্ডকালীন চাকরি পূর্ণকালীন হয়। অতন্দ্রী বলেন, ‘চাকরি হওয়ার পর পরিবারে যে নিজের গুরুত্ব বাড়ে, এটি বলার অপেক্ষা রাখে না। মা-বাবা খুব উৎসাহ দিতেন। অফিস নিয়ে কোনো চাপে থাকলে তাঁরাই বলতেন চাপমুক্ত থাকতে। আমার বিয়েটা পারিবারিক সম্বন্ধ করে হয়েছে। স্বামীর পরিবারের মূল চাওয়াটা ছিল কর্মজীবী মেয়ে। এখন তো একজনের আয় দিয়ে সংসার চালানো কঠিন।’
ছেলেদের মানসিকতার এই পরিবর্তন কি শুধু অর্থের প্রয়োজনে? নাকি সঙ্গীর একটা পেশাজীবন গড়ে উঠবে, তাঁরও একটা মতামতের মূল্য থাকবে—এভাবে কী ভাবছেন তাঁরা? কথা হলো একটি বেসরকারি ব্যাংকের মানবসম্পদ বিভাগে কর্মরত কামাল নাজিম চৌধুরীর সঙ্গে। বিয়ে করেছেন পাঁচ বছর। তাঁর স্ত্রীও একই ব্যাংকে। অফিসেই পরিচয় তাঁদের। তাঁর স্ত্রীর ব্যক্তিত্ব কামাল নাজিমকে মুগ্ধ করেছিল।
‘বউয়ের সংসারে আয়ের কতটুকু দেবে, কীভাবে দেবে এটা কখনো বলিনি। অলিখিত অদৃশ্য একটা বোঝাপড়া তো আছে। বাসাভাড়া, গাড়ির জ্বালানি এসব আমি দিই। আর গ্যাস, বিদ্যুৎসহ অন্য বিলগুলো দেয় স্ত্রী। খাওয়ার খরচ ও আমাদের একমাত্র সন্তানের স্কুলের বেতন ভাগাভাগি করে দেওয়া হয়। তবে শুধু আয় দিয়ে সংসারে সচ্ছলতা আনবে, সে জন্য কর্মজীবী মেয়ে বিয়ে করিনি। বেশির ভাগ কর্মজীবী মেয়ের মনমানসিকতা উদার হয়। সবার সঙ্গে মানিয়ে চলতে পারে। সবচেয়ে বড় কথা, তার নিজের জগৎ থাকে। অযাচিত, অপ্রয়োজনীয় বিষয় নিয়ে মাতামাতি করে না।’ বলেন কামাল নাজিম।
এমনটা অবশ্য বিশেষজ্ঞরাও মনে করেন। আগের দিনের মতো স্ত্রী শুধু রান্না করবেন, সন্তান সংসার সামলাবেন। সেই দিন অনেকটা বদলেছে। আজকাল ছেলেরা চান বউকে সঙ্গী বা পার্টনার হিসেবে। বন্ধু হিসেবে। যাঁর সঙ্গে সবকিছু ভাগাভাগি করে নিতে পারবেন। বাড়ির মেয়েটির চাকরি যেমন মা-বাবার মুখ উজ্জ্বল করে এখন, তেমনি স্বামীরাও স্ত্রীর সাফল্যে খুশি হন। মনের গভীরে কোনো দীর্ঘশ্বাস থাকলেও তাঁরা কৌশলী হয়ে চেপে যান।
ব্র্যাকের জেন্ডার জাস্টিস অ্যান্ড ডাইভারসিটির পরিচালক শীপা হাফিজা মনে করেন, নারীর ক্ষমতায়ন এভাবেই হয়। একা একা কখনো ক্ষমতায়িত হওয়া যায় না। এর জন্য সবার সহযোগিতা লাগে। তিনি বলেন, ‘এখন অনেক মা-বাবা মেয়ে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করার আগেই চাকরি খুঁজতে থাকে মেয়ের জন্য। মেয়ে প্রতিষ্ঠিত হলে এই সম্মান এখন মা-বাবারও। এই উপলব্ধিটা তাঁদের হয়েছে। স্বামীও স্ত্রীকে মূল্য দিচ্ছেন। তাঁর মতামতকে গুরুত্ব দিচ্ছেন। অর্থ এর অন্যতম কারণ। তবে পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ, সম্মান কিন্তু অবশ্যই থাকতে হবে।’
রোজগার করে সংসারে অবদান রাখলেও কোনো কোনো পরিবার এই স্বীকৃতি দেয় না মেয়েটাকে। তারা মনে করে, এটি যেন মেয়েটির অন্যান্য দায়িত্ব পালনের মতো অবশ্য কর্তব্য। যদি পরিবারে মেয়েটির সিদ্ধান্তকে গুরুত্ব দেওয়া হয়, তাঁকে আলোচনা করতে অংশ নিতে দেওয়া হয়, তাহলেই মেলে এর স্বীকৃতি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগের চেয়ারপারসন তানিয়া হক বলেন, ‘পরিবারের আর্থিক ও সামাজিক চাহিদা থেকে মেয়েদের কাজ করতে দেওয়া হয়। এটি ইতিবাচক। একজন মেয়ে যখন সমাজে প্রতিষ্ঠিত ও সফল হয়, এটি তার পরিবারকেও শক্ত একটা অবস্থান করে দেয়।’