চরমে জামায়াত-বিএনপি দ্বন্দ্ব
প্রকাশিত হয়েছে : ১২:২৪:৫০,অপরাহ্ন ১৩ এপ্রিল ২০১৫
নিউজ ডেস্ক::
আসন্ন সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াতের মধ্যে চরম সমন্বয়হীনতা দেখা দিয়েছে। সেই সঙ্গে জোটেও টালমাটাল অবস্থা দেখা দিয়েছে। নেতাদের সঙ্গে বাগ্যুদ্ধ চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছেছে। শত নাগরিক কমিটি ও আদর্শ ঢাকা আন্দোলনের ব্যানারে বিএনপি প্রার্থীদের নামের তালিকা প্রকাশ করায় মূলত দুই দলের দ্বন্দ্ব এখন তুঙ্গে। তবে জোটের শীর্ষ পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ বিষয়টা দেখবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন।
রোববার দুপুরে জামায়াতের ঢাকা মহানগর সেক্রেটারি, কেন্দ্রীয় জামায়াতের নির্বাহী কমিটির সদস্য এবং ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচনে জামায়াতের নির্বাচনী কমিটির প্রধান নুরুল ইসলাম বুলবুল এসব তথ্য জানান।
নুরুল ইসলাম বলেন, ‘কয়েক দিন আগে শত নাগরিক কমিটি ও আদর্শ ঢাকা আন্দোলনের ব্যানারে কাউন্সিলর প্রার্থীদের যে তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে, সেই তালিকা সম্পর্কে আমরা অবহিত নই। কোনো প্রকার আলোচনা ও যোগাযোগ ছাড়াই এই তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। তালিকায় জামায়াতের কোনো প্রার্থীর নামও নেই। এতে জামায়াতের নেতা-কর্মীরা ক্ষুব্ধ। তৃণমূল থেকে শুরু করে কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে ক্ষোভ চরম আকার ধারণ করেছে।’
তিনি আরো বলেন, ‘তালিকাটি কোথা থেকে কীভাবে এল, সে ব্যাপারে আমাদের কিছু জানা নেই। পুরো ব্যাপারটি জোটের শীর্ষ নেতাদের জানানো হয়েছে। তারা বিষয়টি দেখবেন বলে জানিয়েছেন। তবে কবে নাগাদ বিষয়টি নিয়ে বসা হবে বা সুরাহা হবে তা বলা যাচ্ছে না।’
আপনাদের কতজন প্রার্থী রয়েছে, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘যোগ্য প্রার্থীরা নির্বাচন করছে। তারা মাঠে কাজ করছে। খোঁজ নিলেই জানতে পারবেন।’
সিটি নির্বাচনে বিএনপির সঙ্গে প্রার্থিতা নিয়ে সুরাহা না হলে বিষয়টি কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আশা করছি, জোটের শীর্ষ নেতারা বিষয়টি খুব তাড়াতাড়ি সমাধান করবেন। আর না হলে বিষয়টি কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে তা এই মুহূর্তে বলা যাচ্ছে না।’
সিটি নির্বাচন নিয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে জামায়াতের আরেক নেতা বলেন, ‘বিএনপি ঘর থেকে বের হতে পারে না। যা কাজ করার জামায়াতের নেতা-কর্মীরা করে। বিএনপি নেতারা শুধু বসে বসে আঙুল চোষে। এভাবে হবে না। আমরা তাদের কাজ আর করে দেব না। আমাদের স্বার্থ রক্ষা করে, তবেই তাদের কাজ করব। আমাদের প্রার্থীরা যেখানে যে ওয়ার্ডে দাঁড়িয়েছে, সেখানে বিএনপির প্রার্থী সরে না দাঁড়ালে কোনো ওয়ার্ডে আমরা কাজ করব না। এমনকি ভোট দেওয়া থেকেও বিরত থাকতে পারি।’
নির্বাচনী মাঠে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে জামায়াতের মোট ১৯ জন প্রার্থী রয়েছেন। এর মধ্যে কাউন্সিলর পুরুষ পদে ১৪ জন ও সংরক্ষিত নারী পদে পাঁচজন রয়েছেন। তাদের মধ্যে রয়েছেন- আব্দুস সালাম (ওয়ার্ড নং ২), লস্কর মো. তাসলিম (৪ নং), শরীফ মিজানুর রহমান (২৬ নং), আব্দুল ওয়াজেদ কিরন (৩২ নং) ও মোস্তাফিজুর রহমান (২২ নং)। নারীদের কয়েকজন হলেন- মাসুদা আক্তার (১২, ১৩ ও ১৪ নং) ও আমেনা বেগম (২২, ২৩ ও ৩৬ নং ওয়ার্ড)।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে জামায়াতের মোট ১৩ জন প্রার্থী রয়েছেন। এর মধ্যে পুরুষ পদে নয়জন ও সংরক্ষিত নারী পদে চারজন প্রার্থী রয়েছেন। তাদের কয়েকজন হলেন- এ জেড এম নাসিরুল্লাহ (২ নং), মোশারফ হোসেন (১১ নং) ও আজিজুর রহমান জাকারিয়া (১৮ নং)। নারী প্রার্থী হলেন- ইসমত আরা (৫, ৬ ও ৭ নং)।
জামায়াতের কয়েকজন প্রার্থীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মামলা-হামলা-গুলি পুলিশি হয়রানি এত কিছুর পরও তারা নির্বাচনের জন্য মাঠে কাজ করছেন। আর বিএনপির প্রার্থীরা ঘরে বসে স্বপ্ন দেখছেন। এভাবে নির্বাচনে জেতা যায় না। উভয় জোটের মধ্যে সমন্বয় করে নির্বাচন করলে ফল ভালো হতো।’ শেষ পর্যন্ত যদি বিএনপি সমঝোতায় না আসে, তবে কপালে তাদের দুঃখ আছে বলে মনে করেন জামায়াতের প্রার্থীরা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে শত নাগরিক কমিটির প্রধান সমন্বয়ক রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদ বলেন, ‘শত নাগরিক কমিটি কোনো তালিকা প্রস্তুত ও প্রকাশ করেনি। এটা গুলশান কার্যালয় অথবা আদর্শ ঢাকা আন্দোলন করে থাকতে পারে। তবে এ ব্যাপারে আমাদের মাথাব্যথা নেই। আমরা মেয়র নির্বাচন নিয়ে কাজ করছি। কাউন্সিলরদের নিয়ে আমরা কাজ করছি না।’
জোটের মধ্যে সমন্বয়হীনতা থাকলে সে ব্যাপারে কাজ করবেন কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘জোটের ব্যাপারে গুলশান কার্যালয় ও জোটের নেতারা সমন্বয় করে কাজ করবেন। আমরা এ ব্যাপারে কাজ করব না।’