ঘুষ বন্ধে অসহায় ১ বৃদ্ধ কৃষকের মাইকিং
প্রকাশিত হয়েছে : ১২:৫৯:১১,অপরাহ্ন ০৮ এপ্রিল ২০১৫
নিউজ ডেস্ক::
ভূমি কর্মকর্তাদের লাগামহীন ঘুষ দাবিতে অসহায় হয়ে পড়া এক বৃদ্ধ কৃষক অবশেষে রাস্তায় নেমেছেন। ঘুষখোর কর্মকর্তাদের অফিসে তালা লাগানোর আহ্বান জানিয়ে তিনি উপজেলায় মাইকিং করছেন। মঙ্গলবার রাত ৯ টার দিকে আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচায় প্রথম মাইকিং শুরু করেন ওই কৃষক।
৬৫ বছর বয়সী রাজ মোহাম্মদ নামে ওই কৃষক মাইকে বলেন, ‘সবাই এখন ঘুষখোর। কেউ রাখে না কৃষকের খবর। সবাই আসুন ঘুষখোর অফিসারদের অফিসে তালা লাগাই।’ ঘুষ বিরোধী প্রচারণার মাইকিং শুনে কৌতুহলী হয়ে ওঠেন এলাকাবাসী। মাইকিংকালে ওই কৃষক আরো বলেন, ‘ঘুষ না দিলে কাজ হবে না। কাজ করতে হলে টাকা দিতে হবে। আর অভিযোগ করলেও বিচার নেই। আসুন ঘুষখোর অফিসারদের অফিসে তালা লাগাই।’ বৃদ্ধ রাজ মোহাম্মদ লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার পলাশী ইউনিয়নের বোনচৌকি গ্রামের মৃত বাবর আলীর ছেলে।
রাজ মোহাম্মদ জানান, তার ১০টি খতিয়ানে ৮ একর জমির খাজনা দেয়ার জন্য দীর্ঘ দিন ধরে ঘুরছেন মহিষখোচা ইউনিয়ন ভূমি অফিসে। ওই অফিসের পিয়ন থেকে শুরু করে তহসিলদার পর্যন্ত সবাই তার কাছে ঘুষ চেয়েছেন। ঘুষ না দেয়ায় তার কোনো কাজ হয়নি।
কৃষক রাজ আরো জানান, ওই ভুমি অফিসে দুই টাকার ডিসিআর (রসিদের কার্বন কপি) কাটলে ঘুষ দিতে হয় তিনশ টাকা। এর আগে ১০ হাজার টাকা নিয়ে মাত্র ৭শ ৫০ টাকার চেক দেন ভূমি অফিসের উপসহকারী ভুমি কর্মকর্তা জোবায়দুল ইসলাম। মহিষখোচা ইউপি ভূমি অফিসে ঘুষের রাজত্ব কায়েম হয়েছে দাবি করে বৃদ্ধ কৃষক রাজ মোহাম্মদ জানান, ভলিয়ম বই দেখতে গেলেও ঘুষ দিতে হয় ৮০ থেকে একশ টাকা। মহিষখোচা ইউপি ভূমি অফিসের অনিয়ম আর দুর্নীতির বিরুদ্ধে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে পরপর দুটি লিখিত অভিযোগ দিলেও কোনো কাজ হয় নি বলে দাবি করেন ওই কৃষক।
তিনি আরো অভিযোগ করেন, শুধু আমি নই, এ অফিসে যারা আসে সবাই হয়রানির শিকার হয়। এ জন্য তিনি নিজেই মাইকিং করে জনগণকে আহ্বান জানাচ্ছেন দুর্নীতিবাজ ও ঘুষখোরদের অফিসে তালা লাগাতে। তার ধারনা তালা লাগালে উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এলে দুর্নীতি বন্ধ হবে। বন্ধ হবে হয়রানি আর অবৈধ ঘুষ দাবি।
বার বার অভিযোগ করেও ফল না পাওয়ায় ঘুষখোর উপসহকারী ভুমি কর্মকর্তার (তহসিলদার) বিরুদ্ধে নিজেই মাইকিং করে সর্বস্তরের জনগণকে আহ্বান জানাচ্ছেন বৃদ্ধ অসহায় কৃষক। এ জন্য তিনি রিকশায় মাইক লাগিয়ে শহর-বন্দর, গ্রাম-গঞ্জ, হাট-বাজার সর্বত্রই প্রচার শুরু করেছেন। তার আন্দোলনে সর্বসাধারণকে সম্পৃক্ত হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছেন। অভিযোগ অস্বীকার করে মহিষখোচা ইউনিয়ন ভূমি অফিসের উপসহকারী কর্মকর্তা জোবায়দুল ইসলাম বাংলামেইলকে বলেন, ‘কৃষক রাজ মোহাম্মদ অফিসে এসেছিল ঠিকই তবে তার কাছে কোনো ঘুষ দাবি করা হয় নি।’
আদিতমারী উপজেলা সহকারী ভূমি কমিশনার ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা(ইউএনও) জহুরুল ইসলাম বলেন, ‘রাজ মোহাম্মদ যে অভিযোগ করেছেন, তা তদন্ত করা হচ্ছে।’ এদিকে, ঘুষ বিরোধী প্রচারণায় প্রথমে বিস্ময় প্রকাশ করলেন আদিতমারী উপজেলার হাজারো মানুষ এ প্রচারণার সঙ্গে একাত্মতা জানিয়েছেন।