গ্রাফিন থেকে বুলেটপ্রুফ পোশাক?
প্রকাশিত হয়েছে : ৬:২৭:৪৯,অপরাহ্ন ৩০ নভেম্বর ২০১৪
তথ্য-প্রযুক্তি ডেস্ক:: বিস্ময়কর পদার্থ’ গ্রাফিন থেকে বুলেটপ্রুফ বা গুলিনিরোধী পোশাক তৈরি করা যেতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের একদল গবেষক ছোট পরিসরে এ ব্যাপারে একটি পরীক্ষা চালিয়েছেন। এতে গ্রাফিনের পাতে ছোট ছোট সিলিকার গুলি নিক্ষেপ করা হয়।
সায়েন্স সাময়িকীতে প্রকাশিত ওই গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, পরমাণুর মতো সূক্ষ্ম গ্রাফিনের স্তরগুলো কোনো আঘাতের প্রভাব সামাল দেওয়ার ক্ষেত্রে ইস্পাতের চেয়েও শক্তিশালী হতে পারে।
গ্রাফিন মূলত কার্বনের একটি রূপ। এটি অত্যন্ত পাতলা বা সরু, প্রায় স্বচ্ছ পাতের মতো। অত্যন্ত অল্প ওজন এবং তাপ ও বিদ্যুৎ পরিবহনে অত্যন্ত কার্যকারিতার কারণে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। বিজ্ঞানীরা ২০০৩ সালে গবেষণাগারে প্রথম গ্রাফিন তৈরি করতে সক্ষম হন। এটির গঠন একক পরমাণুর বিন্যাসে তৈরি মৌচাকের মতো। সরু, শক্তিশালী, নমনীয় এবং বিদ্যুৎ পরিবাহী এই পদার্থ ব্যবহার করে ইলেকট্রনিকস ও অন্যান্য প্রযুক্তিতে বড় ধরনের পরিবর্তন আনা যাবে বলে বিজ্ঞানীরা মনে করেন।
যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞ জেই-হওয়াং লি ও তাঁর সহযোগীরা লেজার ব্যবহার করে সিলিকার তৈরি ‘সূক্ষ্ম বুলেট’ পর্যবেক্ষণ করেন, যেগুলো গ্রাফিনের ১০ থেকে ১০০ স্তরের পাত ভেদ করেছিল। তাঁরা বুলেটবিদ্ধ হওয়ার আগে ও পরে গ্রাফিন স্তরের গতিশক্তির তুলনা করেন। এ কাজে ব্যবহার করা হয় ইলেকট্রন মাইক্রোস্কোপ যন্ত্র। এতে দেখা যায়, গ্রাফিন আঘাত পাওয়ার পর কোনাকুনিভাবে প্রসারিত হয়ে বিভিন্ন দিকে শক্তি ছড়িয়ে দেয়। ছোট পরিসরে ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে মারার পরীক্ষা চালিয়ে গ্রাফিনের অসাধারণ শক্তি, নমনীয়তা ও কাঠিন্য দেখা যায়। এসব বৈশিষ্ট্যের সাহায্যে পদার্থটি ইস্পাতের তুলনায় ১০ গুণ শক্তিশালী আঘাত সহ্য করার সামর্থ্য প্রমাণ করে।
সূক্ষ্ম বুলেটের আঘাতে গ্রাফিনের স্তরে ফাটল বা গর্ত তৈরি হতে দেখা যায়। এটি একটি বড় অসুবিধা বলে বিজ্ঞানীরা মনে করছেন। জেই-হওয়াং লির দলটি গ্রাফিনকে এক বা একাধিক অতিরিক্ত পদার্থের সঙ্গে যুক্ত করে একটি যৌগিক পদার্থ তৈরি করার প্রস্তাব দিয়েছেন, যা কিনা আঘাতের ফলে ফাটল দেখা দেওয়ার মতো সমস্যা প্রতিরোধ ও সমাধান করতে পারবে।
যুক্তরাজ্যের ম্যানচেস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক আন্দ্রে গিম ও কনস্টানটিন নোভোসেলভ গ্রাফিন আবিষ্কারের স্বীকৃতি হিসেবে পদার্থবিদ্যায় ২০১০ সালে নোবেল পুরস্কার জয় করেন। তাঁদের গবেষণার বিস্তারিত নিয়ে সায়েন্স সাময়িকীতে ২০০৪ সালে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।