খুলনার চিংড়ি শিল্পে দিনে ক্ষতি ১০ কোটি টাকা
প্রকাশিত হয়েছে : ১২:৩৮:৫১,অপরাহ্ন ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৫
নিউজ ডেস্ক::
টানা হরতাল-অবরোধের কালো থাবায় সাদা সোনা খ্যাত খুলনার চিংড়ি শিল্পে দুর্দিন নেমে এসেছে। পরিবহন সঙ্কটে রফতানিকারকরা বিভিন্ন জেলা থেকে চিংড়ি সংগ্রহ করতে পারছেন না। ফলে রফতানিকারকরা আন্তর্জাতিক বাজারের সরবরাহ আদেশ অনুযায়ী মাছ জাহাজীকরণে (শিপমেন্ট) নানাবিধ সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন। এতে প্রতিদিন ১০ কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, হিমায়িত চিংড়ি দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম রফতানি খাত। খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, যশোর জেলায় চিংড়ি চাষ হয়। দেশের রফতানি বাজারে অন্যতম সম্ভাবনাময় এ খাত চলমান হরতাল-অবরোধে সঙ্কটে পড়েছে।
বিগত বছরগুলোতে এ অঞ্চলের সাদা সোনা খ্যাত বাগদা ও গলদা চিংড়ি জাপান, ফ্রান্স, নেদারল্যান্ডস, জার্মানি, বেলজিয়াম, তাইওয়ান, যুক্তরাজ্য, রাশিয়া, ডেনমার্ক, আয়ারল্যান্ড, সুইডেন, চীন, ইতালি, মরিশাস, ইউএই, পর্তুগাল, অস্ট্রিয়া, সাইপ্রাস ও ডেমোনিক্সন রিপাবলিকে রফতানিতে সাফল্য এলেও হরতাল- অবরোধের কারণে শিপমেন্ট না হওয়ায় চিংড়ির বাজার হাতছাড়া হতে যাচ্ছে। এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, হরতাল-অবরোধে তাদের সীমাহীন ক্ষতি হচ্ছে। এ শিল্পের অনেক শ্রমিক বেকার হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন।
বাংলাদেশ ফ্রোজেন ফুডস এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন জানায়, দেশে মোট ৯০টি চিংড়ি রফতানিকারক প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এর মধ্যে খুলনায় আছে ৫৬টি। যার ৩০টি বর্তমানে চালু রয়েছে। হরতাল-অবরোধের কারণে চালুকৃত এসব প্রতিষ্ঠান চলছে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে। বাংলাদেশ ফ্রোজেন ফুডস এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক হুমায়ুন কবীর সোমবার (৯ ফেব্রুয়ারি) বলেন, অবরোধের কারণে চিংড়ি শিল্পে দৈনিক প্রায় ১০ কোটি টাকার ক্ষতি হচ্ছে। রফতানিকারকরা আন্তর্জাতিক বাজারের সরবরাহ আদেশ অনুযায়ী মাছ জাহাজীকরণ (শিপমেন্ট) করতে পারছেন না।
তিনি বলেন, রাজনৈতিক এ অস্থিরতার কারণে সম্ভাবনাময় খাত চিংড়ি শিল্পে ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। খুলনার পাইকগাছা, কয়রা, দাকোপ, বাগেরহাটের মংলা, রামপাল, মোড়েলগঞ্জ, সাতক্ষীরা, কালীগঞ্জসহ বিভিন্ন এলাকার চাষিরা চিংড়ি রফতানিকারক প্রতিষ্ঠানের চাহিদা মিটিয়ে থাকেন। রাজনৈতিক অস্থিরতা তথা হরতাল ও অবরোধের কারণে চাষিরা ফ্রিজিয়ান গাড়িতে চিংড়ি পরিবহন করতে পারছেন না। এতে অনেক সময় পথেই চিংড়িতে পচন ধরছে। ফলে চাষি ও রফতানিকারকরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। হুমায়ুন কবীর জানান, পরিবহন সঙ্কটের কারণে রফতানির ক্ষেত্রে মারাত্মক অসুবিধার সৃষ্টি হয়েছে। পেট্রল বোমা আতঙ্কে রয়েছেন পরিবহন মালিক ও শ্রমিকরা। এ অবস্থা কোনোভাবেই চলতে পারে না। হিমায়িত চিংড়ি খাতকে টিকিয়ে রাখার স্বার্থে তিনি হরতাল-অবরোধ প্রত্যাহারের দাবি জানান।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন উদ্যোক্তা জানিয়েছেন, দফায় দফায় হরতালে আর টানা অবরোধের কারণে লাভজনক শিল্পগুলো ক্রমান্বয়ে রুগ্ন শিল্পে পরিণত হচ্ছে। ব্যবসা-বাণিজ্য অচল করে দেওয়া এই ধরনের রাজনৈতিক কর্মসূচির বিপরীতে ভিন্ন কোনো প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করা উচিত বলে মন্তব্য করেন তারা। রূপসার ক্ষুদ্র চিংড়ি ব্যবসায়ী মো. আব্দুল্লাহ বলেন, হরতাল-অবরোধে আমাদের মতো ক্ষুদ্র ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। সমিতি ও ব্যাংক থেকে নেওয়া ঋণের চক্রে জড়িয়ে পড়ছে। উপায় না পেয়ে অনেকে মূলধন ভেঙে চলছেন।
চিংড়ি শিল্প এলাকার রূপসা চিংড়ি বণিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. আব্দুল মান্নান জানান, তার সমিতির অধীনে ৪শ’ ব্যবসায়ী রয়েছেন। অবরোধের কারণে এসব ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। যেসব ব্যবসায়ী ঋণ নিয়েছেন, তাদের সুদের বোঝা টানতে হচ্ছে। তিনি বলেন, অবরোধের কারণে চিংড়ি রফতানিকারকদের শিপমেন্ট করতে সমস্যা হচ্ছে। আর্থিকভাবে লোকসানের মুখোমুখি হচ্ছেন তারা। এছাড়া এ শিল্পের সঙ্গে জড়িত এ অঞ্চলের প্রায় এক কোটি মানুষ আর্থিকভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন। তিনি ব্যবসা বাণিজ্যের স্বার্থে বিএনপি-জামায়াতকে হরতাল-অবরোধ প্রত্যাহারের দাবি জানান।