খালেদা জিয়ার জন্য ‘ফিরোজা’কে সাবজেল হিসেবে চায় বিএনপি
প্রকাশিত হয়েছে : ১১:৩১:২৬,অপরাহ্ন ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৯
নিউজ ডেস্ক:: গুলশানের বাসভবন ‘ফিরোজা’কে সাবজেল ঘোষণা দিয়ে সেখানে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে বন্দি হিসেবে রাখার সুযোগ আছে কিনা, এনিয়ে দলের ভেতরে আলোচনা শুরু হয়েছে। বিএনপি নেতারা বলছেন, খালেদা জিয়া একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রী। সেই বিবেচনায় জামিন না হওয়া পর্যন্ত তার গুলশানের বাসভবনটিকেই সাবজেল ঘোষণা করে তাকে সেখানে রাখতে পারে সরকার। এক্ষেত্রে আইনি কোনও বাধা নেই।
জানতে চাইলে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, ‘সাবজেল করার বিষয়টি আইনত দেখবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। তবে আমি বলতে পারি, আমরা এ ধরনের কোনও চিন্তা এখন করছি না। এরকম চিন্তাভাবনা করার কোনও সিদ্ধান্ত আমাদের হয়নি।’
পরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের কাছে এ বিষয়ে জানতে চেয়ে ফোন করা হলেও ব্যস্ততার কারণে কথা বলেননি তিনি। আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও নৌ পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘আইন সবার জন্য সমান। খালেদা জিয়াও আইনের বাইরে নয়। সুতরাং আইন অনুযায়ী সব ব্যবস্থা হবে।’
২০০৭ সালে ডিআইজি (প্রিজন্স) হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন শামসুল হায়দার সিদ্দিকী। মঙ্গলবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) রাতে তিনি বলেন, ‘আমার জানা মতে, সরকার চাইলে প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে যেকোনও জায়গায় সাবজেল করতে পারে। খালেদা জিয়ার বাসভবনকে যদি সাবজেল করা হয়, সেক্ষেত্রে সেই বাড়িটিতে এখন যারা আছেন, তাদের কী হবে। তাদের কিন্তু আর সেখানে থাকার সুযোগ নেই। এ কারণে প্রজ্ঞাপন করার আগে বাড়িতে কারা থাকছেন, সেই বিষয়টিও বিবেচনায় নিতে হবে।’
কারা অধিদফতরের ঢাকা বিভাগের ডিআইজি (প্রিজন্স) টিপু সুলতান বলেন, ‘বিষয়টি হেড কোয়ার্টার দেখভাল করছে, আমি কিছু বলতে পারবো না।’
এ বিষয়ে অতিরিক্ত কারা মহাপরিদর্শক (প্রিজন্স) কর্নেল মো. ইকবাল হাসান বলেন, ‘আমরা আসলে বলার ব্যক্তি না। কোর্ট থেকে যে রায় হবে, আমরা সেটা ফলো করবো।’
সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ২০০৭ সালের ১৬ জুলাই সুধাসদনের বাসা থেকে পরোয়ানা ছাড়াই গ্রেফতার হন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তখন তাকে রাখা হয় সংসদ ভবন এলাকায় স্থাপিত অস্থায়ী কারাগারে। তিনি মুক্তিপান ২০০৮ সালের ১১ জুন। ২০০৭ সালের ৩ সেপ্টেম্বর ভোরে খালেদা জিয়াকে ক্যান্টনমেন্টের মইনুল রোডের বাসভবন থেকে গ্রেফতার করা হয়। সেখান থেকে তাকে সোজা নিয়ে যাওয়া হয় সিএমএম আদালতে। আদালতে জামিন না-মঞ্জুর হলে তাকে জাতীয় সংসদ ভবন এলাকায় স্থাপিত সাবজেলে রাখা হয়। ওই কারাগারে ৩৭২ দিন কাটানোর পর ২০০৮ সালের ১১ সেপ্টেম্বর তিনি মুক্তি পান। কারাবন্দি থাকাকালেই তার মায়ের মৃত্যু হয়।
ওই সময়ে ডিআইজি (প্রিজন্স) ছিলেন শামসুল হায়দার সিদ্দিকী। তিনি বলেন, ‘‘ওই সময় সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। এরপর গেজেট নোটিফিকেশন হয়। আমাদের কথা হলো— এক্ষেত্রে যিনি বাড়ির মালিক, তিনি মূলত ক্ষতিগ্রস্ত হন। তবে সেক্ষেত্রে ‘কোর্টের আদেশ লাগবে’— এমন কোনও বিষয় আমরা কিন্তু শুনিনি।’’
বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের দাবি, খালেদা জিয়ার জামিন হওয়া না হওয়ার বিষয়টি চূড়ান্ত অর্থে ‘রাজনৈতিক’। নিম্ন আদালত এবং উচ্চ আদালতে বিএনপি চেয়ারপারসনের মামলা বিচারাধীন থাকলেও সরকার হস্তক্ষেপ বন্ধ করলে তার জামিন হওয়াটাই স্বাভাবিক। নেতাদের অভিযোগ— যেহেতু খালেদা জিয়ার জামিন হচ্ছে না, তাই শারীরিক অসুস্থতার কারণে বাসভবনে থাকাটাই তার জন্য নিরাপদ এবং রাজনৈতিকভাবেও নেতাকর্মীদের মানসিক অবস্থা প্রশমিত হওয়ার সম্ভাবনা আছে।
স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য জানান, আগামী শুক্রবার (১ মার্চ) স্থায়ী কমিটির সদস্যদের বৈঠক হওয়ার সম্ভাবনা আছে। ওই বৈঠকে এ বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হতে পারে।স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার বলেন, ‘সরকার তো বেগম জিয়ার জামিনই আটকে রেখেছে। আমরা অনেক আগে থেকেই এমন চিন্তা করছি যে, ম্যাডামকে সাবজেলে রাখা যায় কিনা। আলোচনা হচ্ছে। এই আলোচনা হতে পারে স্থায়ী কমিটির সদস্যদের বৈঠকেও। তবে আমরা এ বিষয়ে কোনও সিদ্ধান্ত নিইনি।’