ইউনিকোডে বাংলা ভাষার সমস্যা সমাধানে আইক্যানের সমর্থন
প্রকাশিত হয়েছে : ১:২০:১৬,অপরাহ্ন ০৩ মার্চ ২০১৯
তথ্যপ্রযুক্তি ডেস্ক:: ইউনিকোডে বাংলা ভাষার জাতীয় স্ট্যান্ডার্ড মানা নিয়ে আন্তর্জাতিক ডোমেইন ব্যবস্থাপনা নিয়ন্ত্রক সংস্থা-আইক্যান এর পূর্ণ সমর্থন পেয়েছে বাংলাদেশ। ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার এর সঙ্গে সম্প্রতি স্পেনের বার্সেলোনায় মোবাইল ওয়ার্ল্ড কংগ্রেসে আইক্যান এর বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে আইক্যান বাংলা ডোমেইন নাম ও ইউনিকোডের যুক্তাক্ষর লেখা সমস্যা সমাধানে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়ার ব্যাপারে মন্ত্রীকে আশ্বস্ত করেছে। এর ফলে ইন্টারনেট ডোমেইনে যে সংকটটি ছিল তার দূর হওয়ার পথে বিরাট এক প্রতিবন্ধকতা দূর হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বৈঠকে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী আইক্যান কর্তৃপক্ষের নিকট ইউনিকোডে বাংলা ভাষার সমস্যাসমূহ তুলে ধরে বলেন, ‘বাংলা ভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে বাংলাদেশিরা বুকের রক্ত দিয়েছে। বাংলা ভাষার চর্চা ও বিকাশেও বাংলাদেশের অবদানই সবচেয়ে বেশি। দুঃখজনক হলেও সত্য ইউনিকোড কনসোর্টিয়াম বাংলা লিপি উন্নয়নের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের মতামতকে অনেক ক্ষেত্রেই গৌণভাবে দেখেছে। ফলে প্রযুক্তিগত ক্ষেত্রে অক্ষর ব্যবহারে আমরা সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছি। অনেক ক্ষেত্রেই বাংলা ভাষাকে দেবনাগরীর মতো করে দেখা হয়েছে। বাংলা যে স্বতন্ত্র ভাষা এবং তার লিপির ব্যবহারও যে স্বতন্ত্র সেটি মনে রাখতে হবে।
বাংলাদেশের ভাষাবিজ্ঞানীসহ সাধারণ ব্যবহারকারীদের অভিজ্ঞতা ও মতামতকে বাংলা ইউনিকোড লিপি উন্নয়নে বিবেচনায় রাখতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার বাংলা ভাষার প্রযুক্তিগত ব্যবহারকে যুগোপযোগী এবং সহজসাধ্য করতে বেশকিছু কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। তথ্যপ্রযু্ক্তিতে বাংলা ভাষার উন্নয়নে সরকার ১শ’ ৬০ কোটি টাকার প্রকল্প গ্রহণ করেছে। বাংলা ভাষা চর্চা ও গবেষণা, বাংলা ভাষার উন্নয়নের কাজ এগিয়ে নেওয়া এবং তথ্যপ্রযুক্তিতে এর প্রয়োগ করা আলাদা কোনো এজেন্ডা নয়, এটির সঙ্গে আমাদের আত্মার সম্পর্ক।’
মন্ত্রী বাংলা ভাষাকে তথ্যপ্রযুক্তির সঙ্গে সম্পৃক্ত করার বিষয়ে তাঁর দীর্ঘ অভিজ্ঞতা তুলে ধরে বলেন, ‘বাংলা ভাষায় যখন ইউনিকোড কনসোর্টিয়াম হয়, তখন বাংলাদেশ থেকে কোনো মতামত না নেওয়ায় বাংলা ইউনিকোডে ত্রুটি রয়ে গেছে।বাংলা ভাষায় অস্তিত্ব নেই এমন অনেক অক্ষর ইউনিকোডে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।
বৈঠকে আইক্যান প্রেসিডেন্ট ও সিইও গোরান মারবাই আইক্যান প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন। আইক্যান চিফ টেকনিক্যাল অফিসার ডেভিড কনার্ডসহ শীর্ষ কর্মকর্তাগণ এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে থাইল্যান্ডে ১৯৮৭ সালে অনুষ্ঠিত কনসোর্টিয়ামের সভায় মোস্তাফা জব্বার বাংলা ভাষার বিদ্যমান অক্ষরসমূহ অন্তর্ভুক্ত করে ত্রুটি দূর করার দাবি জানান। অন্যান্যের মধ্যে আরও উপস্থিত ছিলেন বিটিআরসি চেয়ারম্যান মো. জহিরুল হকসহ বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের সদস্যরা ।
এ বিষয়ে তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার আরও জানান, আমাদের দু’তিনটা ইস্যু ছিল, যে জায়গাগুলোতে ইউনিকোডের সঙ্গে আমাদের সমস্যা। ‘ইউনিকোড কনসোর্টিয়াম শুরু হয় ১৯৮৭ সালে। আমরা এই কনসোর্টিয়ামে ঢুকেছি ২০১০ সালে। ফলে এই ২৩ বছরে বাংলাদেশের কোনো প্রতিনিধিত্ব ছিল না। ফলে বাংলার যেসব ইস্যুগুলো ছিল তা সিরিয়াসলি আনঅ্যাড্রেস ছিল।
এ সময় তিনি বলেন, ‘ড়, ঢ়, য় এবং ত্ বর্ণ আছে। কিন্তু হিন্দিতে নেই। যেহেতু আমরা ছিলাম না, সেই কারণে অন্যদেশের মতামত অনুসারে স্ট্যান্ডার্ড তৈরি করা হয়েছে। প্রতিবেশী দেশ ভারতে দেবনাগরীতে নোক্তা বলে একটা জিনিস আছে, এই নোক্তা তাদের নানা কাজে লাগে, শব্দের নিচে ব্যবহূত হয়। আমরা নোক্তার যুগ থেকে সেই বিদ্যাসাগরের আমল হতে বেরিয়ে এসেছি এবং আমাদের ভাষায় নতুন চারটি অক্ষর যোগ করেছি। দেবনাগরী যেহেতু ফলো করা হয়েছে তাই আমাদের দাঁড়ি, ডাবল দাঁড়ি তাতে রয়ে গেছে। আর আমাদের ড়, ঢ়, য় লিখতে ওরা নোকতা ব্যবহার করে। আমাদের যে স্বরচিহ্নগুলো এগুলোকে আমরা কার চিহ্ন বলি আর ওরা বলে মাত্রা।’
তিনি আরও বলেন, আমরা কিন্তু আমাদের স্ট্যান্ডার্ড তৈরি করে ফেলেছি। কিন্তু ইউনিকোডে বাংলার এই সমস্যার কারণে আমরা যখন ডটবাংলায় বাংলা ডোমেইনে লিখতে যাচ্ছি তখন বাংলার ড়, ঢ়, য় এর প্রতিটি ক্যারেক্টারের জন্য দুটি করে কোড দিতে হয়। নোক্তা একটা আর ড একটা, নোক্তা একটা ঢ একটা-এমন করে। এটির পাশাপাশি সার্চ ইঞ্জিনেও বাংলায় তথ্য খুঁজতেও ঝামেলা তৈরি করছে।’